১৩ ডিসেম্বর, ২০১৭ ১৭:৫৩

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় আসছে নতুন তিন জোড়া জেব্রা

সাইদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম:

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় আসছে নতুন তিন জোড়া জেব্রা

সংগৃহীত ছবি

আধুনিকায়নের ছোয়ায় ধীরে ধীরে পরিবর্তন হচ্ছে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা। দীর্ঘদিন ধরেই অবহেলা আর অযত্নে কারণে উন্নয়নের ছোয়াঁ থেকে বঞ্চিত ছিল এ চিড়িয়াখানাটি। বর্তমানে চিড়িয়াখানায় নানান জাতের প্রাণীর পাশাপাশি নতুনত্ব ও সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য কাজ হচ্ছে। প্রশাসনের কঠোর নজরদারি ও মনিটরিং এর ফলে অনেক উন্নয়ন কর্মকান্ডের পাশাপাশি এ চিড়িয়াখানায় এসেছে বাঘ-সিংহের মতো প্রাণী।

চিড়িয়াখানার সেই বাঘ-সিংহের পাশাপাশি এবার আসছে তিন জোড়া জেব্রাও। আগামী জানুয়ারী মাসের ২য় সপ্তাহের মধ্যে জেব্রাগুলো আনার প্রস্তুতিও চলছে। তাদের জন্য বর্তমানে চলছে ঘরখাঁচা নির্মাণের কাজও। তবে আফ্রিকা মহাদেশ থেকে আমদানি করার পরিকল্পনা রয়েছে। 

এসব জেব্রার দাম হতে পারে ৪৮ লাখ টাকা। তবে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার জেব্রার ‘খাঁচা’ হবে সবচেয়ে বড় খাঁচা বলে চিড়িয়াখানা সূত্রে জানা গেছে।

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা পরিচালনা কমিটি সদস্য সচিব ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. রুহুল আমীন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাঘ-সিংহের পর এবার তিন জোরা জেব্রা আনার জন্য প্রস্তুতি চলছে। নতুন নতুন পশু-পাখির মাধ্যমে আরো অনেক পরিবর্তন আসবে। তিনি বলেন, দূর্নীতি আর অনিয়মের বিরুদ্ধে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চিড়িয়াখানায় শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠা করেছি। শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠা পেয়েছে বলেই আজকে চিড়িয়াখানা এই ভাল অবস্থায় এসেছে। এটার জন্য ডিসি স্যার এবং এডিসি স্যার প্রতিনিয়ত অনিয়ম রোধে নির্দেশনা ও মনিটরিং রয়েছে। সাড়ে তিন লাখের কিছু বেশী টাকা শুরু করে আড়াই কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ এবং ৮০ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যালেন্স, দেড় কোটি টাকার এফডিআর রয়েছে। ভাল কাজ করলে সেটার সুফল বা সততা আর চরিত্রনিষ্ঠা থাকলে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবেই বলে জানান তিনি।

চিড়িয়াখানা এলাকার স্থানীয় দোকানদার আবদুর রহিম বলেন, চট্টগ্রামের এ চিড়িয়াখানা বর্তমানে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। বিভিন্ন জাতের প্রাণী রয়েছে। সাধারণ দর্শকরা আগের চেয়ে বেশী ভিতরে প্রবেশ করছেন। এক সময় চিড়িয়াখানার ভিতরে যেতে ভয় পেতো। এখন অনেক উন্নয়ন কাজ হয়েছে। তবে বর্তমানে এ চিড়িয়াখানায় অনিয়ম দুর্নীতি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এক চক্রের মধ্যে চলছে চাপা ক্ষোভও।

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা ও নিভর্রযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের আগে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা ছিল অরক্ষিত। ছিল বখাটেদের উৎপাত। সীমানা প্রাচীর না থাকায় আবর্জনার ভাগাড় ছিল। ছিল কুকুরের উপদ্রব। ২০১৪ সালের জুলাই মাসে চিড়িয়াখানার দায়িত্ব নেওয়ার সময় প্রায় তিন লাখ ৫০ টাকা জমা ছিল। এরই মধ্যে আড়াই কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ করা হয়েছে। দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য সংযোজন করা হয়েছে বাঘ, সিংহসহ নানা প্রাণী। বিচিত্র পশু-পাখিও। করা হয়েছে শিশুদের জন্য কিডস জোন নামে আলাদা জোন। এতে নানা খেলনা, রাইডস, নাগরদোলা স্থাপন করা হয়েছে। শিশুরা বিনে পয়সায় তা ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে। 

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, শুধু শিশু নয়, বড়রাও শিশু জোনের আনন্দ বিনোদন খুঁজে ফিরছে। কোন প্রকার অনুদান ছাড়া টিকেট বিক্রির টাকায় এসব কাজ করা হচ্ছে। বর্তমানে ৮০ লাখ ৫০ টাকা ব্যাংকে জমাও রয়েছে। সীমানা প্রাচীর নির্মাণের পর চিড়িয়াখানার পরিবেশ সুরক্ষা হয়। পশু পাখির সংখ্যাও বাড়ানো হয়। 

এছাড়াও বন্য পশুপাখির প্রাকৃতিক খাবার সংস্থান, বনের পরিবেশ আবহ ও আবাসস্থল গড়ে তোলার পরিকল্পনা  নেওয়া হয়েছে। এ জন্য এক হাজার ফলজ বৃক্ষ চারা রোপণ করা হচ্ছে। চারার মধ্যে রয়েছে আম, জাম, জলপাই, কামরাঙা, আমরলকি। পর্যায়ক্রমে এসব চারা রোপণ করা হচ্ছে। এতে পাখির প্রাকৃতিক আবাস, খাবারের জোগাড় ছাড়াও দর্শনার্থীদেরও উপকার হবে। শুষ্ক মৌসুমে ধুলাবালুর যন্ত্রণায় দর্শানার্থীদের ত্রাহি অবস্থা বিরাজ করে। তা থেকে মুক্তি দিতে অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোর আরসিসি ঢালাই করা হয়েছে। এছাড়াও সড়কের ধারে ধারে বসার জন্য দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। সবমিলে ৮০ লক্ষাধিক টাকা উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে।

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা সূত্র আরো জানা যায়, বাঘ সিংহ ও নানা পশুপাখি সংযোজনের পর দর্শনার্থীদের আগ্রহ  বেড়েছে। প্রতিদিন গড়ে ১৫শ টিকিট বিক্রি হয়। শুক্র ও শনিবার ৫৬ হাজার টিকিট বিক্রি হয়। আবার বিশেষ দিনগুলোতে তার চেয়েও বেশি টিকিট বিক্রি হয়। টিকেট বিক্রির হারও আগের চেয়ে কয়েক গুণ বেড়েছে। অরক্ষিত অবহেলিত এই চিড়িয়াখানা আড়াই বছরের দর্শকদের মন জয় করেছে।

বিডিপ্রতিদিন/ ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৭/ ই জাহান

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর