সোমবার, ৪ নভেম্বর, ২০১৩ ০০:০০ টা

দলবাজ সাংবাদিকদের মিথ্যা ফানুস ফুটো হয়ে গেছে: মজহার

দলবাজ সাংবাদিকদের মিথ্যা ফানুস ফুটো হয়ে গেছে: মজহার

কবি ও কলামিস্ট ফরহাদ মজহার অভিযোগ করেছেন, দলবাজ সাংবাদিকদের ক্ষুদ্র একটি অংশ ফ্যাসিস্ট মুসোলিনীর গেস্টাপো বাহিনীর ভূমিকা পালন করছে। গণমাধ্যমের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা সেইসব দলবাজ সাংবাদিকদের ক্ষুদ্র একটি অংশ আমাকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে।

আজ সোমবার এক বিবৃতিতে তিনি এ অভিযোগ করেন।

বিবৃতিতে ফরহাদ মজহার বলেন, নিজেদের সাংবাদিক বলে দাবি করে অথচ রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও সহিংসতার প্রত্যক্ষ সহযোগী হিসাবে  সাংবাদিক মহলের কলংক হিসাবে যারা পরিচিত তারাই আমার গ্রেফতার দাবি করেছে। রাষ্ট্রকে তার সকল হিংস্রতাসহ নাগরিকদের দমন-পীড়ন ও নির্যাতনের উস্কানিদাতা এই মহলের জঘন্য তৎপরতার নিন্দা জানাবার ভাষা আমার জানা নাই। যারা রাষ্ট্রকে লেলিয়ে আমাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে চায়, তাদের প্রচার প্রোপাগাণ্ডার কোনও জবাব দেওয়া অর্থহীন। এদের মিথ্যা দাবির আমি কোন জবাবও দেইনি। তাদের ‘সন্তুষ্ট’ করার  প্রয়োজনও আমি দেখি না, তবে গণমাধ্যমের কর্মীদের কাছে জবাবদিহি করা আমি অবশ্যই আমার দায় ও কর্তব্য মনে করি। কারণ আমি এই কমিউনিটির অংশ। তিনি বলেন, সেদিনের টক শোতে আমার আসল বক্তব্য বাদ দিয়ে একাত্তর টিভিতে উস্কানিমূলক আলোচনার পর যারা পরিকল্পিতভাবে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছিল তাদের মিথ্যা ফানুস ফুটা হয়ে যায় যখন আসলে আমি কী বলেছি তা সবাই টিভি ক্লিপে দেখেন।

তিনি বলেন, এরা ব্যক্তি মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। তদুপরি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে রাজনৈতিক স্বার্থে নাগরিকদের বক্তব্য ভুল ও বিকৃত ভাবে প্রচার। তাদের বিরুদ্ধে জিঘাংসা ও প্রতিহিংসা প্রদর্শন ও নিজেদের হাতে গণমাধ্যম থাকায় ক্রমাগত উস্কানি দিয়েই তারা ক্ষান্ত থাকেনি, থানা-পুলিশ করে ‘দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি’র দাবি জানাচ্ছে। এদেরকে আর যাই হোক সাংবাদিক বলা যায় না। এরা সাংবাদিকতার নীতিমালা মানে না– মূলত ভূমিকা পালন করে রাষ্ট্রীয় পুলিশের। বাংলাদেশের রাজনীতির চরম সংকট কালে বিরোধী মত ও চিন্তাকে দমন নিপীড়নের জন্য এরা বাংলাদেশে ক্ষমতাসীনদের সন্ত্রাস ও সহিংসতার সম্প্রসারিত শক্তি হিসাবে ফ্যাসিস্ট মুসোলিনীর গেস্টাপো বাহিনীর ভূমিকা পালন করছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে অস্থির, অস্থিতিশীল, সংকটাপন্ন ও সহিংস করে তুলছে। এই গেস্টাপো বাহিনীর বিরুদ্ধে গণমাধ্যমের সব কর্মীকে আমি রুখে দাঁড়াবার আহ্বান জানাই।

ফরহাদ মজহার বলেন, আমি ২৮ অক্টোবর ইটিভিতে পরিষ্কার বলেছি, আমি স্বভাবতই কখনই চাইব না কেউ পটকা, নিন্দা বা ঢিলও যেন গণমাধ্যমের ওপর ছুঁড়ুক। এটা কথার কথা, আলোচনা করার জন্য। যাতে আমরা বুদ্ধিজীবীরা, গণমাধ্যমের কর্মীরা বুঝতে পারি যে  বর্তমান এই পরিস্থিতির জন্য শেখ হাসিনা বা খালেদা জিয়া একমাত্র দায়ী নয়। আমরা, আমাদের ভূমিকার কারণে আজকে এই পরিস্থিতি তৈরি করেছি। গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে মিথ্যুকদের চেহারা ধরা পড়ে যাওয়ায় এখন তারা মরিয়া হয়ে উঠেছে।  এদের মিথ্যচার ধরা পড়ার পর ও এদের প্রতিটি বক্তব্যের সুস্পষ্ট জবাব দেবার পরেও তারা লজ্জিত ও ক্ষমা প্রার্থনা না করে এখন বলছে, আমার জবাবে সন্তুষ্ট নয়। এরা আমাকে গ্রেফতার করতে চায়, নির্যাতন করতে চায়, আমার বাক ব্যক্তি চিন্তার স্বাধীনতা হরণ করতে চায়। তাদের প্রতিহিংসাপরায়ন চক্রান্ত ধরা পড়ে যাবার পরও এই সংঘবদ্ধ ফ্যাসিস্টরা থামতে চাইছে না। ভয়ভীতি প্রদর্শন করে তারা আমার কণ্ঠ স্তব্ধ করতে চায়। তাদের এই খায়েশ পূরণ হবে না। আমি এই হিংস্র বাহিনীর তীব্র নিন্দা জানাই।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে এদের এই ঘৃণ্য তৎপরতার বিরুদ্ধে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের ডাকে বাংলাদেশের স্বনামখ্যাত বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, সমাজকর্মী, মানবাধিকার কর্মীসহ সব স্তরের জনগণ আমার বক্তব্যের সুস্পষ্ট ব্যাখা পেয়ে আমার বাক, ব্যক্তি ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। ''আক্রান্ত গণমাধ্যম: সংকটের আবর্তে দেশ'' শিরোনামের ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে গণমাধ্যমের বর্তমান সংকট নিয়ে বিপুল সংখ্যক সম্মানিত নাগরিক তাদের মূল্যবান বক্তব্যে এই ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর জঘন্য অপতৎপরতার নিন্দা করেছেন। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, গণমাধ্যমের কর্মী, বুদ্ধিজীবী, আইনজীবী, সমাজকর্মী, শিক্ষক, অধ্যাপক, রাজনৈতিক কর্মীসহ ৩ অক্টোবরের গোলটেবিলে যারা আমার প্রতি সংহতি জানাতে এসেছিলেন, তাঁদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার অবধি নাই। বাক, ব্যক্তি, চিন্তা ও মতের স্বাধীনতার পক্ষে আমৃত্যু লড়ে তাদের এই ঋণ আমি শোধ করব।

ফরহাদ মজহার  বলেন, ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক সমর্থক এই মাস্তান সংঘ দাবি করছে, আমি ‘সব গণমাধ্যম ও এর সম্পাদকদের আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর অপচেষ্টা’ করছি।  ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের আয়োজিত অনুষ্ঠানে সাংবাদিক মহলের কলংক এই ক্ষুদ্র অংশটি ছাড়া সকলেই বাক, ব্যক্তি মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে দাঁড়িয়ে এদের দলীয় ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রাজনৈতিক তৎপরতার তীব্র নিন্দা করেছেন। ফলে ‘সকল গণমাধ্যম ও সম্পাদক’-কে আমি আসামি করেছি এর চেয়ে ডাহা মিথ্যা ও হাস্যকর দাবি আর কিছুই হতে পারে না। দ্বিতীয়ত থানা-পুলিশ আমি করিনি, যারা করেছেন তারাই আজ গণমাধ্যমকে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। ”
 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর