শনিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০১৪ ০০:০০ টা

টাকা ছাড়া মেলে না পরিচয়পত্র!

টাকা ছাড়া মেলে না পরিচয়পত্র!

নির্বাচন কমিশনের উপজেলা অফিসগুলো দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। নির্বাচন কমিশন জাতীয় পরিচয়পত্রের সেবা কার্যক্রম সারা দেশের উপজেলা অফিসে (সার্ভার স্টেশনে) ছড়িয়ে দিলেও প্রত্যাশিত সেবা পাচ্ছে না সাধারণ নাগরিকরা। উপজেলা পর্যায়ের ভোটাররা হারানো জাতীয় পরিচয়পত্র উত্তোলন, সংশোধনী ও নানা ধরনের ভোটার তথ্য পেতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। টাকা ছাড়া উপজেলা অফিস থেকে যেমন জাতীয় পরিচয়পত্র মেলে না, তেমনি ভোটার তথ্য পেতেও দিতে হয় উৎকোচ। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগে (ভোটার তালিকা প্রকল্প) কথা হয় কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলা থেকে আসা কামাল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমার পরিচপত্র হারিয়ে গেছে। ভোটার ও পরিচয়পত্র নম্বরও তার স্মরণে নেই। দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাচন অফিসে এর তথ্য খুঁজতে ১ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। এরপরে উপজেলা অফিসার তাকে ভোটার নম্বর ও আইডি নম্বর দিয়েছেন। এমনকি থানায় জিডি করতেও ৫০০ টাকা লেগেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলা থেকে আসা কবির হোসেন তার বড় ভাইয়ের ভোটার আইডি সংশোধনের তথ্য জানতে এসেছেন। সাদুল্যাপুর উপজেলা নির্বাচন অফিসে তিন মাস হলো আইডি জমা দিয়েছেন। কিন্তু এখনো দিচ্ছে না। তিনি বলেন, আইডি সংশোধনের জন্য কয়েকশত টাকাও দিয়েছেন। তাই তিনি ঢাকা অফিসে খোঁজ-খবর নিতে এসেছেন।

রাজশাহী থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র নিতে ঢাকায় এসেছেন রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমার পরিচয়পত্রটা খুবই দরকার তাই ঢাকায় এসেছি। রাজশাহী অফিসেও যোগাযোগ করেছি, কিন্তু তারা কয়েক হাজার টাকা চায়। এমনকি রাজশাহী থেকে ঢাকা আসা-যাওয়ার খরচও দিতে হবে বলে জানিয়েছেন রাজশাহী অফিসের এক ব্যক্তি।

অন্যদিকে সারা দেশের উপজেলা অফিসে পদে পদে ভোগান্তির শিকার সাধারণ মানুষ ঢাকায় এসেও স্বস্তি পাচ্ছেন না। ঢাকার আগারগাঁওয়ের ইসলামিক ফাউন্ডেশন ইসির অফিসে এসেও ভোগান্তিতেই পড়তে হচ্ছে। সেখানে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আশপাশের দোকানদাররাই বনে গেছেন ইসির কর্মকর্তা। তারা ইসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিচয় দিয়ে দালালি ব্যবসা অবাধে চালিয়ে যাচ্ছেন। নিয়ম অনুযায়ী দুপুর ১২টার পরে পরিচপত্র হারানো, সংশোধনের জন্য ফরম বিতরণ করা হয় না। তবে সেই ফরম টাকা দিয়ে প্রকাশ্যে বিক্রি করছেন এক অসাধু ব্যবসায়ী। এদিকে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর যেন কাজ নেই। অনেক কর্মচারীই এখন ব্যস্ত ভোটার তালিকা প্রকল্পের ভোটারের নাম সংশোধন, পরিচয়পত্র তুলে দেওয়ার কাজ নিয়ে। ভোটার তালিকা প্রকল্পে গিয়ে প্রতিনিয়ত দেখা মেলে ৫/৬ জন কর্মচারীর। তারা প্রতিদিনই কোনো না কোনো কাজ নিয়ে যান ভোটার তালিকা প্রকল্পে। এমনকি প্রকল্প কর্মকর্তাদের দ্রুত কাজ করিয়ে দেওয়ার জন্য হুমকি-ধমকিও দেন তারা। কর্মচারীদের কথা শুনে মনে হয়, তারাই প্রকল্প কর্মকর্তাদের বস। এমনকি কর্মকর্তাদের টেবিলে বসেই অনেককে সংশোধনের কাজ করতে দেখা গেছে।

জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রকল্পের এক কর্মকর্তা বলেন, ইসির কর্মচারীদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ। তারা এসেই কাজ করে দেওয়ার জন্য তাড়াহুড়া শুরু করেন। আর কাজ করে না দিলেই বিভিন্ন কথা শুনিয়ে দেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, নির্বাচন কমিশনের মাঠ পর্যায়ের অফিস থেকে এসব কাজ করার নির্দেশ থাকলেও সাধারণত সংশ্লিষ্টদের এ ব্যাপারে রয়েছে যথেষ্ট অনীহা। ফলে বাধ্য হয়ে ঢাকামুখী হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এ মুহূর্তে নতুন রেজিস্ট্রেশন করতে সময় লাগে নূ্যনতম দুই মাস, মাইগ্রেশন করতে কয়েক মাস এবং ভুল সংশোধন করতে লেগে যায় কয়েক দিন। কার্ড না পাওয়া পর্যন্ত আগতদের ঢাকায় অবস্থান করতে হয় অথবা ঢাকায় যাতায়াত করতে হয় একাধিকবার। এতে সময়, শ্রম ও অর্থের লোকসান হয়। এ সুযোগে একটি চক্র সাধারণ মানুষের কাছ থেকে কাজ করে দেওয়ার নামে অর্থ আদায়েরও অভিযোগ করছেন কেউ কেউ। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগে সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকে মানুষের উপচেপড়া ভিড়। জাতীয় পরিচয়পত্রের ভুল সংশোধন, স্থানান্তর, হারানো কার্ড উত্তোলনের জন্য আবেদন জমা নিয়ে অনেক সময়ে বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। কর্তব্যরত কর্মকর্তাদের অনেকেই আগতদের জিজ্ঞাসায় তেমন সাড়া দেন না। অনেকেই নিজের ইচ্ছে মতো ফরম জমা নেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

 

 

সর্বশেষ খবর