অবশেষে রাজধানীর বেইলি রোডের সামাজিক শিক্ষাকেন্দ্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দখল ফিরে পেয়েছে সরকার। বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপীল বিভাগের পাঁচ সদস্যদের পূর্ণ বেঞ্চ বাংলাদেশ গার্ল গাইড অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে দেওয়া হাইকোর্ট বিভাগের রায়ে স্থগিতাদেশ দেওয়ায় বিদ্যালয়টি সরকারের দখলে আসল।
গত মার্চ মাসে হাইকোর্ট থেকে রায় পেয়ে সামাজিক শিক্ষাকেন্দ্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ভেঙে দিয়েছিল গার্লস গাইড কর্তৃপক্ষ। এরপর থেকে শিক্ষার্থীরা খোলা আকাশের নিচে ক্লাস-পরীক্ষা চালিয়ে আসছিল।
এ ব্যাপারে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব সন্তোষ কুমার অধিকারী বলেন, 'আপিল বিভাগ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আপিল গ্রহণ করে দুই পক্ষের শুনানির পর হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেছেন। বিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালনা করতে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া দরকার আমরা শিগগিরই তা নেব। দ্রুত বিদ্যালয়ের অবকাঠানো নির্মাণ করা হবে।'অতিরিক্ত অ্যাটর্নী জেনারেল মুরাজ রেজা সরকারের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন বলেও জানান সন্তোষ কুমার।
এদিকে বিদ্যালয়টি ভেঙে দেওয়ায় মন্ত্রনালয় এখন গালর্স গাইড কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ মামলা করার চিন্তা করছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
যুগ্ম সচিব সন্তোষ কুমার বলেন, বাংলাদেশ গার্ল গাইড অ্যাসোসিয়েশন ১৯৬২ সালে সামাজিক শিক্ষাকেন্দ্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করে। কিন্তু বিদ্যালয়টি পরিচালনার দায়িত্ব নিতে ১৯৬৭ সালে সংস্থাটি তৎকালীন পৌরসভা ও শিক্ষা বিভাগের শরণাপন্ন হয়। বেসরকারি বিদ্যালয়গুলোকে শেখ মুজিবুর রহমান সরকারিকরণের ঘোষণা দেওয়ার পর ১৯৭৪ সালে অন্য বিদ্যালয়ের সঙ্গে জাতীয়করণ করা হয় এ বিদ্যালয়টি। সঙ্গে বিদ্যালয়ের স্থাবর-অস্থাবর সম্পতিও সরকারের দখলে আসে।
১৯৮৯ সালে গার্লস গাইড তাদের জমি থেকে বিদ্যালয়টি সরিয়ে নিতে তৎকালীন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিভাগে আবেদন দিয়ে জানায়, এই বিদ্যালয়ের কারণে সংস্থার কার্যক্রম বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। এতে কাজ না হওয়ায় ২০০২ সালে সংস্থাটি সরকারকে চিঠি দিয়ে পল্টনের নিধু স্মৃতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে সামাজিক শিক্ষাকেন্দ্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে একীভূত করার দাবি জানায়। এরপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিভাগ ২০০২ সালে বিদ্যালয়টি স্থানান্তরের জন্য আদেশ জারি করে। কিন্তু স্থানীয় সুধী সমাজ বিদ্যালয়টি না সরানোর পক্ষে অবস্থান নিয়ে হাইকোর্টে রিট করেন।
এই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৭ সালে হাইকোর্ট বিদ্যালয় স্থানান্তরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিভাগের আদেশ বাতিল করলে গালর্স গাইড কর্তৃপক্ষ ওই আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট করে। চলতি বছরের মার্চে হাইকোর্ট বিদ্যালয়টি স্থানান্তর ও একীভূত করার সরকারি আদেশটি বহাল রাখে। এরপর ওই আদেশের ভিত্তিতে গালর্স গাইড কর্তৃপক্ষ গত রোজার ঈদের ছুটিতে বিদ্যালয়টি ভেঙে দেয়। স্কুল খোলার পর খোলা আকাশের নিচে ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নেয় শিক্ষার্থীরা।
বিডি-প্রতিদিন/৩০ অক্টোবর ২০১৪/আহমেদ