মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা

কাছাকাছি অবস্থানে বাংলাদেশ-ভারত

মানব উন্নয়ন সূচক প্রতিবেদন প্রকাশ

মানবসূচক উন্নয়নে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারত কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছে। তবে পরিকল্পিত নগরায়ণের উন্নয়নে ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। এ ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার সাতটি দেশের মধ্যে মানবসূচক উন্নয়নে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে শ্রীলঙ্কা। কিন্তু এ দেশটি নগরায়ণে পিছিয়ে রয়েছে। আর নেপাল দুটি সূচকেই পিছিয়ে রয়েছে। অন্যদিকে আফগানিস্তান ও মালদ্বীপ মানবসূচক ও নগরায়ণ উভয় সূচকেই ভালো করছে বলে এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। পাকিস্তানের লাহোর থেকে ‘দক্ষিণ এশিয়ার মানবসূচক উন্নয়ন-২০১৪, নগরায়ণ চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ-সুবিধা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়। পাকিস্তানের মাহবুব উল হক মানব উন্নয়ন কেন্দ্রের এ প্রতিবেদন বাংলাদেশের হয়ে গতকাল ব্র্যাক সেন্টার ইনে প্রকাশ করে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি)।
গবেষণা প্রতিবেদনে দক্ষিণ এশিয়ায় মানব উন্নয়নের ওপর নগরায়ণের প্রভাব বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, অবকাঠামো ও মৌলিক সেবাসমূহের প্রাপ্যতা, পরিবেশ ও সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ ইত্যাদির পরিপ্রেক্ষিতে নগরায়ণ থেকে উদ্ভূত বিভিন্ন সমস্যা ও সুবিধাসমূহ বিশ্লেষণ করা হয়। এ ছাড়া অর্থ উপার্জন, মানুষের জীবনযাত্রার মান, অর্থের প্রাপ্যতা, শহর ও গ্রামের বৈষম্য, কর্মসংস্থান, নগর উন্নয়নের ধারা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্যানিটেশন, কৃষি, শ্রম ও প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার এসব বিষয়ও আমলে নেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, নিুমানের মধ্য আয়ের গন্তব্যে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এ ধরনের মধ্য আয়ের দেশ জনগণের কাক্সিক্ষত নয়, যেখানে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, স্যানিটেশন, মানব উন্নয়নসহ অন্য বিষয়গুলোয় পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া সব ধরনের অপরিকল্পনা, অপরিচ্ছন্নতা আর অনিয়মে ভরে গেছে দেশের রাজধানী ঢাকা। এমনকি এসব অনিয়ম, অপরিচ্ছন্নতা ও অপরিকল্পনার বিষয়গুলোর জীবকোষ হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে ঢাকা। শহরগুলোকে টাকা রোজগারের মেশিন হিসেবে পরিচিত করা হয়েছে। এটিকে উন্নততর মানুষ তৈরির মেশিন বানানো উচিত। আর এখান থেকেই তা দেশের অন্যান্য শহর, এমনকি গ্রামেগঞ্জে ছড়িয়ে পড়ছে। হোসেন জিল্লুর বলেন, ‘আমরা শুধু দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে শহরমুখী করছি আর বলছি অর্থ উপার্জন করো। কিন্তু তোমাকে বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দেব না, শিক্ষার সুযোগ দেব না, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জীবন ধারণের সুযোগ দিতে পারব না। শুধু অর্থ উপার্জনের ওপর নির্ভর করে মধ্য আয়ের দেশ গড়া যায় এমন ধারণা সঠিক নয়।’ তাই এ ধরনের ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে সবাইকে আহ্বান জানান তিনি।  গ্রাম ও শহরের মানুষের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, এখানে শহরকে টাকা উপার্জনের মেশিন হিসেবে পরিচয় করানো হয়েছে। অথচ এটি হওয়া দরকার উন্নততর মানুষ তৈরির মেশিন। গ্রাম ও শহরের রাজনীতির উদাহরণ টেনে হোসেন জিল্লুর বলেন, গ্রামের রাজনীতিতে অপেক্ষাকৃত সচেতন, সৎ, শিক্ষিত ও যোগ্য লোকেরা এগিয়ে আসছেন। আর শহরে তার ঠিক উল্টো। এখানে অপরাধপ্রবণ লোকেরাই রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছেন। সেখানে কী করে মানবসূচকের উন্নয়ন ঘটবে! এমন পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে হলে একনায়কতন্ত্র ও অপরাধ প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, নাকে রুমাল চেপে রাস্তায় বেরোবেন আর মধ্য আয়ের দেশের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন সেটি হয় না। এ মধ্য আয়ের দেশ মানে নিুমানের মধ্য আয়ের দেশ। বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ড. সুলতান হাফিজ রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথি এবং নির্ধারিত আলোচক ছিলেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক এ টি এম নুরুল আমীন ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. ইশরাত ইসলাম। স্বাগত ভাষণ দেন সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইদুজ্জামান। অনুষ্ঠানে এম সাইদুজ্জামান বলেন, নগরায়ণের ফলে অনেক সুযোগ সৃষ্টি হলেও তা বহু সমস্যারও সৃষ্টি করেছে, যেমন পরিবেশদূষণ, নাগরিক সেবার অনুপস্থিতি, নিরাপত্তাহীনতা, অপরাধের বিস্তার। অন্যদিকে সুযোগসমূহ হচ্ছে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, মধ্যবিত্ত শ্রেণির বিকাশ, শিক্ষা-স্বাস্থ্যসহ অন্যান্য নাগরিক সুবিধা।
তিনি দক্ষিণ এশিয়ায় নগরজীবন নিুমুখী হিসেবে বর্ণনা করে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সঠিক নগর শাসন প্রয়োজন বলে মত দেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর