সোমবার, ২৬ জানুয়ারি, ২০১৫ ০০:০০ টা
অনির্ধারিত আলোচনায় আওয়ামী লীগ নেতারা

বিএনপির শিষ্টাচার বর্জিত আচরণে ধিক্কার জানিয়েছেন মানুষ

বিএনপির শিষ্টাচার বর্জিত আচরণে ধিক্কার জানিয়েছেন মানুষ

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে সমবেদনা জানাতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিহাসে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। আর প্রধানমন্ত্রীকে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে প্রবেশ করতে না দিয়ে বিএনপি শিষ্টাচার বর্জিত আচরণ করেছে এবং এ জন্য সারা দেশের মানুষ ধিক্কার জানিয়েছে বলে জাতীয় সংসদের এক অনির্ধারিত আলোচনায় উল্লেখ করা হয়। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে গতকালের অধিবেশনে এক অনির্ধারিত আলোচনার সূত্রপাত করেন বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ। পরে এ আলোচনায় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মইন উদ্দিন খান বাদল, ডা. দীপু মনি, ওয়ারিয়াদ হোসেন বেলাল ও আবু সাঈদ আল মামুন বক্তব্য রাখেন। বেগম রওশন এরশাদ বলেন, খালেদা জিয়ার ছোট ছেলের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী দেখতে যাওয়া মানুষের মনে আশা জাগিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী গিয়ে দেখলেন গেটের ভিতর থেকে তালা লাগানো। দেশ ও জাতি এ অবস্থা দেখে মর্মাহত হয়েছে। খালেদা জিয়াকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হলেও বড় বড় নেতা ও আত্মীয়স্বজনরা তো সেখানে ছিলেন। তারা তো তাকে নিয়ে বসাতে পারতেন। এটা কেন হলো না, কেন দুজনের দেখা হলো না? রওশন বলেন, মানলাম তার ছেলের মৃত্যুর পর খালেদা জিয়াকে ইনজেকশান দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে। কিন্তু ব্যারিস্টার মওদুদ, এম কে আনোয়ারসহ অনেক সিনিয়র নেতা তো সেখানে ছিলেন। তার ভাই ও ভাইয়ের বউয়েরা তো সেখানে ছিলেন। তারা তো প্রধানমন্ত্রীকে বসাতে পারতেন, শোক বইয়ে শোক প্রকাশ করার জন্য বলতে পারতেন। কিন্তু সেটাও হয়নি। এটা দেখে আমরা মর্মাহত হয়েছি। রাজনীতিতে শিষ্টাচার না থাকলে জনগণের জন্য আমরা কীভাবে রাজনীতি করব?’ তিনি আরও বলেন, দুজনের দেখা হলে হয়তো কিছু একটা সমাধান বেরিয়ে আসত। কিন্তু সেটা কাল হলো না। আমরা রাজনীতি করি জনগণের জন্য। এখন দেশে যা চলছে তাতে প্রতিপক্ষ করা হচ্ছে জনগণকে। জনগণ তো কারও প্রতিপক্ষ হতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী যখন সেখানে যাবেন বলে টেলিভিশনে প্রচার হচ্ছিল তখন যারা বার্ন ইউনিটে কাতরাচ্ছিল তাদের মনেও একটা আশা জেগেছিল হয়তো একটা সুরাহা হবে। প্রধানমন্ত্রী সেখানে গিয়েছেন, সে কারণে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। তোফায়েল আহমেদ বলেন, কিছু কিছু জিনিস আছে সেগুলো নিয়ে রাজনীতি করতে হয় না। প্রধানমন্ত্রী গিয়েছিলেন মা হিসেবে। তিনি গাড়ি থেকে নামার পর বলা হলো কিছুক্ষণ আগে ফটকে তালা মেরে দেওয়া হয়েছে। শিমুল বিশ্বাস জানাল খালেদা জিয়াকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হলো দেখা করা সম্ভব না। পরে তিনি চলে এলেন।
প্রধানমন্ত্রী সবকিছু ভুলে গিয়ে শুধু মানবিক কারণে সামাজিকতা, সহমর্মিতায় মা হিসেবে সমবেদনা জানাতে গিয়েছিলেন। কিন্তু তার সঙ্গে দেখা না হওয়াতে বাঙালি জাতি গ্রহণ করেনি। অনেকে বিস্মিত হয়েছে। আমি দেখা না হওয়ার কারণে বিস্মিত হইনি। কারণ সাবেক প্রধানমন্ত্রী একটি দলের চেয়ারপারসন। তার সন্তানের মৃত্যর পরেও তিনি অনির্দিষ্ট অবরোধ রেখেছেন এবং আরও বৃদ্ধি করে ৩৬ ঘণ্টার হরতাল দিয়েছেন। এটা জাতি গ্রহণ করেনি। তিনি বলেন, তার ছেলের স্বাভাবিক মৃত্য হয়েছে। তিনি নিহত হননি। একজন মা স্বাভাবিক মৃত্যুর পর ব্যথায় মুহ্যমান হয়েছেন। ইনজেকশন দিয়ে তাকে রাখা হয়েছে। যারা তথাকথিত আন্দোলনের নামে নাশকতার করে, তাদের নাশকতার কারণে যেসব মায়ের কোল খালি হয়, তাদের কথা নিশ্চয় খালেদা জিয়া উপলব্ধি করবেন। নিজের সঙ্গে অন্য মায়ের ব্যথা তিনি বুঝতে পারবেন বলে আমি আশা করি।
তিনি বলেন, আমরা এই সমালোচনায় যেতে চাই না। জাতি বিচার করবে বলে আমি বিশ্বাস করি। কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসে শেখ হাসিনার নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
সংসদ উপনেতা সাজেদা চৌধুরী বলেন, সন্তান হারা মা হিসেবে বেগম জিয়া ব্যথিত। আমরা এটাকে এই বলে শেষ করতে চাই যে সবাইকে মৃত্যুবরণ করতে হবে এটাই সত্য।
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, রাজধর্ম পালন করতে হলে অনেক কঠোর হতে হয়। কারণ সংবিধান মেনে রাজধর্ম পালন করতে হয়। তিনি বলেন, সমবেদনা জানানো আমাদের সহজাত সংস্কৃতি। বঙ্গবন্ধুকন্যা যেখানে যান সেখানে জাতীয় পতাকা নিয়ে যান। তারপরও একটা কথা আছে অপাত্রে ঘি দান করতে হয় না। এ বিষয়টি আমাদের যত বেশি লজ্জা দিয়েছে তার চেয়ে বেশি শিক্ষা দিয়েছে।
শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, যাদের মধ্যে বিন্দুমাত্র মানবতাবোধ থাকে, ভদ্রতা থাকে তাদের পক্ষে এ ধরনের আচরণ করা সম্ভব নয়। এদের কাছে কোনো মানবতা আশা করা যায় না। ওখানে নাটক করা হয়েছে। কোনো ডাক্তার সেখানে যায়নি। কোনো ইনজেকশনও দেওয়া হয়নি। আজ সারা দেশের মানুষ বিএনপিকে ধিক্কার দিচ্ছে। তাদের মধ্যে কোনো সৌজন্যবোধ নেই। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, এতবড় একটা দুঃসংবাদের পরও খালেদা জিয়া কোন মানবিকতায় ৩৬ ঘণ্টা হরতাল দিলেন? মইন উদ্দিন খান বাদল খালেদা জিয়ার উদ্দেশে বলেন, আর যাই করেন লাশ নিয়ে রাজনীতি করবেন না।

সর্বশেষ খবর