মঙ্গলবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৫ ০০:০০ টা
সভানেত্রীর নির্দেশ উপেক্ষিত

দায়সারা প্রচারে আওয়ামী লীগ নেতারা

দায়সারা প্রচারে আওয়ামী লীগ নেতারা

সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ উপেক্ষিত হচ্ছে। দলীয় সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের নির্বাচনী প্রচারণায় নামার ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা থাকলেও তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। মানুষের বাড়ি বাড়ি যাওয়ার পাশাপাশি কাউন্সিলর প্রার্থীদের মেয়রদের জন্য ভোট চাওয়ার ব্যাপারেও দলীয় সভানেত্রীর নির্দেশনা ছিল। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট চাওয়ার ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা ছিল দলীয়প্রধান শেখ হাসিনার। কিন্তু কোনো প্রার্থী সেই নির্দেশনা মানছেন না। পাড়া-মহল্লায়ও যাচ্ছেন না। বিশেষ করে সরকারের সুবিধাভোগী আওয়ামী লীগ নেতারা নির্বাচনী প্রচারণা থেকে নিজেদের নিরাপদ দূরত্বে রাখছেন। কেউ কেউ শুধু রাস্তার আশপাশে দোকানগুলোতে যাচ্ছেন। কিছু লিফলেট বিলি করছেন। কাউন্সিলর প্রার্থীদের ব্যাপারে নির্দেশনা ছিল- আগে মেয়রদের জন্য ভোট চাইতে হবে। কিন্তু কোনো কোনো প্রার্থী মেয়রদের জন্য ভোট চাইছেন না। প্রত্যেকেই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৯৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৮০টিতেই কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী। তাদের অধিকাংশই দলের ওয়ার্ড বা থানা পর্যায়ের সাংগঠনিক দায়িত্বশীল পদে রয়েছেন। যে কারণে স্থানীয় কর্মীরাও বিভক্ত হয়ে কাউন্সিলর প্রার্থীর পক্ষেই প্রচারণা চালাচ্ছেন। মেয়র প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় মনোযোগ নেই। অন্যদিকে ঢাকার বেশ কয়েকজন দলীয় সংসদ সদস্যও মেয়র প্রার্থীর পক্ষে সর্বশক্তি নিয়োগ করে মাঠে নামেননি। ঢাকার বাইরের দলীয় এমপিরা নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিলেও ঢাকার ভোটারদের কাছে তারা অনেকটাই নতুন মুখ।

সরেজমিন বেশ কিছু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মিডিয়াতে চেহারা দেখাতেই কিছু নেতা-কর্মী মাঠে নামছেন। কোনোরকম ক্যামেরায় মুখ দেখাতে পারলেই প্রচারণা থেকে সটকে পড়ছেন তারা। কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি, সংসদীয় আসনভিত্তিক কমিটি কিংবা সহযোগী সংগঠনগুলো প্রচারণায় নামলেও তা কিছু সময় করে সেসব প্রচারণার ছবি তুলে নিজস্ব ফেসবুক পেজে ছেড়ে দিচ্ছেন। কেন্দ্রীয় নেতা ও কিছু কিছু এমপি প্রচারে নামলেও ভোটারদের কাছে পৌঁছতে পারছেন না।

উত্তর সিটি করপোরেশনের পশ্চিম হাজীপাড়ার ৭/বি/১৭ বাসার মালিক নিজাম উদ্দিন বলেন, কাউন্সিলর পদে কয়েকজন প্রার্থী ভোট চাইলেও এখন পর্যন্ত মেয়র পদের জন্য কেউই ভোট চাননি। রামপুরা নতুন রাস্তায় মুদি দোকানদার আবু সাঈদ বলেন, জীবনে প্রথমবারের মতো ভোটার হলাম, মেয়র পদে কেউই ভোট চাইলেন না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা এসে কাউন্সিলর প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইলেও মেয়র পদে ভোট চাননি। ৬৫ নিউ ইস্কাটন-বাংলামোটরের বাসিন্দা আমানউল্লাহ বলেন, নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলেও আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর পক্ষে কেউ ভোট চাইতে আসেননি। উত্তরের পাশাপাশি দক্ষিণেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। কাউন্সিলর প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইলেও মেয়র প্রার্থীর পক্ষে ঘরে ঘরে ভোট চাওয়া হচ্ছে না। নেতা-কর্মীরা মাঠে নামলেও তা যেন অনেকটা লোক দেখানো। ঢাকা দক্ষিণ সিটির পুরানা পল্টনের বাকি বিল্লাহ বলেন, মেয়র প্রার্থীদের পোস্টার চোখে পড়লেও কর্মী বা প্রার্থীর দেখা পাইনি। দলীয় সূত্রমতে, মেয়র প্রার্থীদের জন্য সমন্বয়কারীদের ঠিক করে দেওয়া টিমগুলোই শুধু কাজ করছে। অন্যরা পরিচিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের পক্ষেই কাজ করছেন। তাও আবার লোক দেখানো। তবে ব্যতিক্রম দেখা গেছে দক্ষিণের ২০ নম্বর ওয়ার্ডে। এ ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন যুবলীগ নেতা ফরিদ উদ্দিন রতন। তিনি নিজের পোস্টারে ঠেলাগাড়ী প্রতীক ও মেয়র প্রার্থী সাঈদ খোকনের ইলিশ মাছ প্রতীক ব্যবহার করেছেন। ভোট চাওয়ার সময়ও ইলিশ প্রতীকে ভোট প্রার্থনা করে পরে ঠেলাগাড়ী মার্কায় ভোট চাচ্ছেন।

এ প্রসঙ্গে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সমন্বয়ক ড. আবদুর রাজ্জাক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমাদের নেতা-কর্মীরা ঘরে ঘরে যাওয়া শুরু করেছেন।

 

সর্বশেষ খবর