সোমবার, ২৭ এপ্রিল, ২০১৫ ০০:০০ টা

চাঞ্চল্যকর সাত খুনের এক বছর

চাঞ্চল্যকর সাত খুনের এক বছর

দেখতে দেখতে নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সাত খুনের ঘটনার এক বছর পার হয়ে গেলো। গত বছরের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, সিনিয়র আইনজীবী চন্দন সরকার, নজরুল ইসলামের বন্ধু সিরাজুল ইসলাম লিটন, নজরুলের সহযোগী মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, স্বপনের প্রাইভেটকার চালক জাহাঙ্গীর ও চন্দর সরকারের প্রাইভেটকার চালক ইব্রাহিমকে অপহরণ করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। সারাদেশে আলোড়ন ফেলে দেয় এ ঘটনা। ঘটনার একবছর পরও বিচারের আশায় দিন গুনছেন নিহতদের শোকার্ত স্বজনরা।

হত্যাকাণ্ডের দীর্ঘ ১১ মাস পর গত ৮ এপ্রিল মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জেলা ডিবির ওসি মামুনুর রশিদ মন্ডল র‌্যাব-১১ এর শীর্ষ তিন কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এদিকে অভিযোগপত্রে নজরুলের স্ত্রীর দায়ের করা মামলায় এজাহারভুক্ত ৫ আসামির নাম চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত না করায় শিঘ্রই নারাজি দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি।

২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল দুপুরে নারায়ণগঞ্জ আদালতে একটি মামলায় হাজিরা দিয়ে ঢাকার বাসায় ফেরার পথে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিঙ্করোডের ফতুল্লার লামাপাড়ায় প্রাইভেটকারের গতিরোধ করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন প্যানেল মেয়র ও ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিরলর নজরুল ইসলাম, তার বন্ধু সিরাজুল ইসলাম লিটন, সহযোগী মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, স্বপনের প্রাইভেটকার চালক জাহাঙ্গীরকে অপহরণ করা হয়। এ ঘটনা দেখে ফেলায় নারায়ণগঞ্জ আদালতের সিনিয়র আইনজীবী চন্দন সরকার ও তার প্রাইভেটকার চালক ইব্রাহিমকেও অপহরণ করা হয়। এরপর ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদীর বন্দর থানা কলাগাছিয়া থেকে প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকার, মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর ও ইব্র্রাহিমের লাশ উদ্ধার হয়। পরদিন ১ মে নজরুলের বন্ধু সিরাজুল ইসলাম লিটনের লাশ উদ্ধার হয়।

ঘটনার পর থেকেই নজরুল ইসলামের শ্বশুর শহিদুল ইসলাম দাবি করে আসছিলেন, নাসিকের ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর হোসেন র‌্যাবকে ৬ কোটি টাকা দিয়ে নজরুলকে হত্যা করিয়েছে। এ ঘটনায় আরও নিরীহ ৬ জনকে হত্যা করা হয়। এ হত্যার প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি ফতুল্লা থানায় আরেক কাউন্সিলর ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নূর হোসেন, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন মিয়া, ঠিকাদার আসমত আলী হাসু, আমিনুল ইসলাম রাজু, আনোয়ার হোসেন আশিক ও ইকবাল হোসেনকে আসামি করে  মামলা দায়ের করেন। একই থানায় আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা অজ্ঞাত আসামি করে ফতুল্লা থানায় আরেকটি মামলা করেন। এ দুই মামলার তদন্তভার দেওয়া হয় জেলা গোয়েন্দা পুলিশের তৎকালীন ওসি (তদন্ত) আব্দুল আউয়ালকে। নিহত নজরুলের শ্বশুর শহিদুল ইসলাম ওই সময় অভিযোগ করেন, ওই তদন্তকারী কর্মকর্তা আব্দুল আউয়ালের সঙ্গে নূর হোসেনের দহরম মহরম রয়েছে। তিনি সিদ্ধিরগঞ্জ, ফতুল্লা ও ডিবির পুরাতন কর্মকর্তাদের বদলীর আবেদন জানান। ফলে সরকারের নির্দেশে সিদ্ধিরগঞ্জ, ফতুল্লা থানা, র‌্যাব-১১, ডিবির সকল কর্মকর্তাদের একযোগে বদল করা হয়। যোগ দেন নতুন ডিবির ওসি মামুনুর রশিদ মন্ডল। এ মামলার তদন্তের দায়িত্ব পড়ে ওসি মামুনুর রশিদ মন্ডলের ওপর। শুরু করেন তদন্ত।

আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল : দীর্ঘ ১১ মাস তদন্ত শেষে গত ৮ এপ্রিল ডিবির ওসি মামুনুর রশিদ মন্ডল র‌্যাবের তিন কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনের নামে চার্জশিট দাখিল করেন। চার্জশিটে কাউন্সিলর নূর হোসেনকে এক নম্বরে রাখা হয়। র‌্যাব-১১ এর প্রাক্তন সিও লে. কর্নেল (অব.) তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর (অব.) আরিফ হোসেন ও লে. কমান্ডার (অব্যাহতি প্রাপ্ত) মাসুদ রানারসহ র‌্যাবের ২৫ জন ও নূর হোসেনের আরও ১০ সহযোগীর নাম রয়েছে। চার্জশিটভুক্ত র‌্যাবের প্রাক্তন তিন কর্মকর্তাসহ ২২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ১৩ জন আসামি এখনও পলাতক রয়েছেন। এরমধ্যে নূর হোসেন ভারতের কলকাতায় জেলে আটক আছেন।

চার্জশিটের বিরুদ্ধে নারাজি দেওয়ার প্রস্তুতি :  নিহত প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামের স্ত্রী ও নাসিকের ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সেলিনা ইসলাম বিউটি চার্জশিট দেওয়ার পর দিন ৯ এপ্রিল এক সাংবাদ সম্মেলনে বলেন, এ মামলাটি সুষ্ঠুভাবে তদন্ত হয়নি। তিনি বলেন, তার দায়ের করা মামলায় এজাহারভুক্ত সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন মিয়া, ঠিকাদার আসমত আলী হাসু, আমিনুল ইসলাম রাজু, আনোয়ার হোসেন আশিক ও ইকবাল হোসেনকে চার্জশিটভুক্ত করা হয়নি। তিনি ওই সময়ে উল্লেখ করেন চার্জশিটে অন্যান্য সব কিছুই সঠিক আছে। তবে এজাহারভূক্ত ৫ আসামিকে কি কারণে বাদ দেওয়া হয়েছে তার কাছে বোধগম্য নয়।

তিনি অভিযোগ করেন, অভিযুক্ত পাঁচ আসামিকে পুলিশ গ্রেফতার করে একদিনের জন্যও জিজ্ঞাসাবাদ করেনি। নিহত নজরুলের সঙ্গে ইয়াছিনের রাজনৈতিক বিরোধ ছিল। আসামি ইকবালের সঙ্গে কাউন্সিলর নির্বাচন নিয়ে নজরুলের বিরোধ ছিল। আমিনুল ইসলাম রাজু তার বন্ধু সাইফুল হত্যা মামলার আসামি। সিটি করপোরেশনের একটি রাস্তা নির্মাণকে কেন্দ্র করে যে দিন নজরুলের ওপর হামলা চালানো হয় সে দিন রাজু অস্ত্র হাতে নিয়ে নজরুলকে হত্যার জন্য ঘুরেছে। 

এজাহারভুক্ত ৫ আসামিকে চার্জশিট থকে বাদ দেওয়ায় শিঘ্রই নারাজি দেবেন বলে জানিয়েছেন সেলিনা ইসলাম বিউটি।

বিডি-প্রতিদিন/২৭ এপ্রিল ২০১৫/ এস আহমেদ

সর্বশেষ খবর