সোমবার, ৪ মে, ২০১৫ ০০:০০ টা
রংপুরে দুই বছরের অপরাধ চিত্র

স্বামীর আগুনে ১৫ স্ত্রীর মৃত্যু

নেশার টাকা না দেওয়ায় ২২ এপ্রিল রংপুর নগরীর বুড়িরহাটে ছটকু রায় তার স্ত্রী মালা রায়ের (২২) গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। রংপুর মেডিকেলে বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৮ এপ্রিল মারা যান মালা। পারিবারিক কলহের এক পর্যায়ে ২১ মার্চ রাতে সদর উপজেলার শাহাবাজপুর গ্রামের চৌকিদার আমজাদ হোসেন তার স্ত্রী সাবিলা বেগমের (২৮) গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। রমেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একদিন পর মারা যান সাবিলা। যৌতুক না দেওয়ায় স্বামীর ধরিয়ে দেওয়া আগুনে পুড়ে মারা যান রংপুর কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের ছাত্রী মুক্তি বেগম। এমন দু'একটি ঘটনা নয়, রংপুরে গত দুই বছরে স্ত্রীর গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে ২২টি। এর মধ্যে মারা গেছেন ১৫ জন। পোড়া ক্ষত নিয়ে বেঁচে আছেন সাতজন। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে। তবে বেশির ভাগ মামলার আসামিরা রয়ে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান জিয়া রহমান স্ত্রীকে আগুনে পোড়ানোর ঘটনাকে 'উদ্বেগজনক' মন্তব্য করে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যৌতুক ও মাদকের মহামারী সমাজকে গ্রাস করছে। আয়ের চেয়ে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় মেজাজের রুক্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির বন্ধন দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ছে। সামান্য ঘটনায় সহিংস হয়ে উঠছে স্বামীরা। রমেক হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ১ জুলাই থেকে চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত রংপুরের আট উপজেলা থেকে আগুনে পোড়া ৪০ জন রোগী ভর্তি হন। এর মধ্যে স্বামীর ধরিয়ে দেওয়া আগুনে পোড়া ২২ জনের মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৫ জন। ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে স্থানান্তরের পর উন্নত চিকিৎসায় প্রাণে বেঁচে গেছেন ৭ জন। বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মারুফুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, অগ্নিদগ্ধদের শ্বাসনালি ও শরীরের ৬০ শতাংশ স্থান ঝলসে যাওয়ায় তাদের বাঁচানো সম্ভব হয়নি।

 

সর্বশেষ খবর