বৃহস্পতিবার, ১৪ মে, ২০১৫ ০০:০০ টা

আতঙ্কে ব্লগাররা

বাংলাদেশে এক বছরে তিন ব্লগারকে হত্যার ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ইন্টারনেটে বিশেষ করে উদারমনা বিভিন্ন ব্লগে লেখালেখি করেন এমন বেশ কয়েকজন বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, হত্যাকারীদের ধরে বিচার করার ক্ষেত্রে সরকারের ব্যর্থতায় তাদের মধ্যে নিরাপত্তাভীতি দিন দিন বাড়ছে। অনেকে লেখালেখি নিয়ে সতর্ক হচ্ছেন। বিবিসি বাংলা। দুই বছর আগে শাহবাগে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে আন্দোলন চলার সময় ৮৪ জনের একটি তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেয় ইসলামপন্থীদের একটি অংশ। আন্দোলন চলাকালেই মিরপুরে বাসার সামনে খুন হন ব্লগার রাজীব হায়দার। প্রায় একই কায়দায় চার মাসের মধ্যে খুন হয়েছেন আরও তিন লেখক ও ব্লগার। যার সর্বশেষ হচ্ছে সিলেটের অনন্ত বিজয় দাশ। একের পর পর হত্যাকাণ্ডে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে ব্লগার ও অনলাইন অ্যাকটিভিস্টদের মধ্যে। অপরাধীদের বিচারের আওতায় না আনায় লেখার ব্যাপারে ভীতি দিন দিন বাড়ছে।

ব্লগার রতনকুমার সমাদ্দার বলছেন, 'ব্লগে "সন্ন্যাসী" নামে আর ফেসবুকে "সন্ন্যাসী রতন" নামে লেখালেখি করি। যখন আমি ধর্ম নিয়ে লিখি তখন ইসলামের কথাই বেশি আসে। ফলে প্রতিটি পদক্ষেপ ফেলার আগে চারপাশে তাকাতে হয়।' তিনি বলেন, 'অভিজিৎ রায় হত্যার পর থেকে সমালোচনামূলক লেখা থেকে চলে এসেছি।' সমাদ্দারের মতো ৮৪ জন ব্লগারের তালিকায় নাম ছিল শুভজিৎ ভৌমিকের। তিনি জানান, নানা ধরনের হুমকির কারণে তার স্বাভাবিক জীবনযাত্রাই বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। অনন্ত বিজয় দাশের হত্যাকাণ্ডের পর বিজ্ঞানভিত্তিক লেখা বা মুক্তচিন্তার সঙ্গে জড়িতদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ওপরই জোর দেন তিনি। বলেন, 'যেসব জায়গায় বেশি লোক নেই সেখানে যেতে ভয় লাগে। ধর্ম বা বিজ্ঞান লেখা থেকে বিরত আছি। কারণ এগুলো যারা লিখবেন তারা বাঁচবেন কি না সন্দেহ।' এদিকে, সিলেটে 'একুশ তাপাদার' নামে অনলাইনে লেখালেখি করেন অনন্ত বিজয় দাশের ঘনিষ্ঠ এমন একজন লেখক বলেন, অনন্তের হত্যাকাণ্ডের পর তারা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন। অনেকেই বলছেন, 'কোনো বিষয় লিখতে গেলেই মনে হচ্ছে সমস্যা হবে। বিজ্ঞান, যুক্তিনির্ভর, ধর্ম ও মৌলবাদ বিষয়ে লিখতে পারছি না।' চট্টগ্রামের ব্লগার সৃজিতা মিতু মনে করেন, অনলাইনে যারা লেখালেখির সঙ্গে জড়িত তারা নিরাপত্তাহীনতা বোধ করছেন। তিনি মনে করেন, পরিস্থিতি যাই হোক লেখালেখি চালিয়ে যাওয়ার বিকল্প নেই। মিতুর মতো কেউ কেউ মুক্তচিন্তার চর্চা অব্যাহত রাখার কথা বললেও বেশ কয়েকজন ইতিমধ্যে দেশ ছেড়েছেন বলে জানিয়েছেন তাদের ঘনিষ্ঠরা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর