শুক্রবার, ৩ জুলাই, ২০১৫ ০০:০০ টা

নামি রেস্তোরাঁয় ভেজাল ইফতারির ছড়াছড়ি

রোজায় ফুটপাথের মৌসুমি ইফতার বিক্রেতা তো বটেই, এবার রাজধানীর নামিদামি রেস্টুরেন্টগুলোও ভেজাল ও অস্বাস্থ্যকর খাবারের রমরমা ব্যবসা করছে। ঢাকার আন্তর্জাতিক বিভিন্ন চেইন রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ ক্রেতাদের কাছ থেকে গলাকাটা দাম আদায় করলেও খাদ্যের মান রক্ষার দিক দিয়ে ক্রেতার সঙ্গে প্রতারণা করছেন। তারা শুধু অস্বাস্থ্যকর প্রক্রিয়া ও পরিবেশে খাবার তৈরি করে থেমে নেই, একই সঙ্গে মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) অনুমোদনবিহীন খাবার বিক্রি, পোড়া তেল ব্যবহার, ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহার ও ফ্রিজে বাসি মাংস সংরক্ষণ করে তা ক্রেতাদের খাওয়াচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট ভেজাল অভিযান পরিচালনাকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রমজানে ভেজালবিরোধী অভিযান চালিয়ে এ পর্যন্ত কেএফসি, পিজা হাট, বুমার্স, হান্ডি, হেলভেশিয়া, সি সেল এবং লা বাম্বা’র মতো নামিদামি রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষকে ভেজালের দায়ে জরিমানা ও কারাদণ্ড দিয়েছে। এ ছাড়া মধ্যম মানের রেস্টুরেন্টগুলোর মধ্যে অষ্টব্যঞ্জন, ঘরোয়া, স্টার হোটেল ও মালঞ্চ রেস্টুরেন্টেও ভেজাল খাবার বিক্রির প্রমাণ পেয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। জানা যায়, বেইলি রোডের কেএফসিতে ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ তেল দিয়ে ইফতার সামগ্রী তৈরি করা হয়। এ ছাড়া পিজা হাট ও বুমার্সে বিএসটিআই-এর অনুমোদনবিহীন বিষাক্ত কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি করা হয় বিভিন্ন ইফতার আইটেম। ডিএমপির ভেজালবিরোধী অভিযানে এ ভেজাল ধরা পড়ে। ভেজালের দায়ে এই তিনটি প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টদের জরিমানা ও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পুলিশের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মশিউর রহমানের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। ডিএমপি সূত্রে জানা যায়, ভেজাল খাবার তৈরির জন্য কেএফসিকে ১ লাখ ও এ প্রতিষ্ঠানের পরিচালককে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া পিজা হাট ও বুমার্সকে আলাদাভাবে এক লাখ টাকা করে জরিমানা ও ৬ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি গোলাম রহমান এ প্রতিবেদককে বলেন, কিছু অসাধু  ব্যবসায়ী অতি লোভের কারণে খাদ্যে ভেজাল মেশাচ্ছেন। ভেজাল রোধে দরকার পর্যাপ্ত মনিটরিং। বিএসটিআই, সিটি করপোরেশন, পুলিশ ও জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের এ জন্য নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে অসাধুদের জরিমানাসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। তারা বলেন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ এর ৪৩ ধারা অনুযায়ী অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্য উৎপাদন আইনে দণ্ডনীয়। এদিকে মধ্যম সারির রেস্টুরেন্টের মধ্যে রাজধানীর অষ্টব্যঞ্জনে রোজায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার উন্মুক্ত রাখা এবং তৈরির সময় হাতে গ্লাভস ব্যবহার না করার জন্য এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। আমতলী রেস্টুরেন্টে ময়লা নোংরা পরিবেশে খাবার রাখা, তৈরির সময় হাতে গ্লাভস ব্যবহার না করা, কয়েকদিন আগের বাসি খাবার ও পোড়া তেলে তৈরি খাবার বিক্রির জন্য তিন লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এলিফ্যান্ট রোডের ঘরোয়া হোটেলে বাসি-পচা খাবার বিক্রির জন্য তিন লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। আর স্টার হোটেলকে পোড়া তেল, রান্না করা খাবারের সঙ্গে কাঁচা তরকারি রাখা, বাসি খাবার ও বাসি সমুচা, নিমকি ও খাবারের সঙ্গে ময়লা-আবর্জনার ড্রাম রাখার জন্য ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। আর ভেজালের জন্য মালঞ্চ রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ ভ্রাম্যমাণ আদালতের উপস্থিতি টের পেয়ে আগেই পালিয়ে যায়। এ জন্য তারা এক লাখ টাকা জরিমানা করে হোটেলটি সিলগালা করে দেওয়া হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. খলিলুর রহমান বলেন, ঢাকার হোটেলগুলোতে খাবার রান্নায় যে পানি ব্যবহার করা হয় তাতে বহু ধরনের ব্যাকটেরিয়া ও জীবাণুর অস্তিত্ব পাওয়া যায়। সাধারণত হোটেল-রেস্টুরেন্টে খাওয়ার পর খোলা জায়গায় ও গরম পরিবেশে দীর্ঘক্ষণ খাবার রাখার ফলে তা নষ্ট হয়ে যায়। এরই মধ্যে চকবাজারের বিখ্যাত ইফতার বাজারে অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকবার ভেজাল খাবার পেয়েছে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পরিচালক (আইন) ও নির্বাহী ম্যাজিস্টেট এবং সাবেক ম্যাট্রোপলিটন ম্যাজিস্টেট রোকন-উদ-দৌলা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমাদের মূল সমস্যা হচ্ছে দুর্নীতি। এটি দূর করা গেলেই সব সমস্যার সমাধান মিলবে।

সর্বশেষ খবর