দলত্যাগী, নিষ্ক্রিয় ও সংস্কারপন্থি নেতাদের দলে ফিরিয়ে নেওয়া হবে- এমন খবরে আশায় বুক বেঁধেছেন বিএনপির মূল স্রোতের বাইরে থাকা দক্ষিণাঞ্চলের নেতারা। দলের এ দুঃসময়ে বিএনপির হয়ে ভূমিকা রাখতে চান তারা। গড়ে তুলতে চান ঐক্য। জানা যায়, ওয়ান-ইলেভেনের সময় সংস্কারের অভিযোগে দলের মূল স্রোতের বাইরে চলে যাওয়া সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শাহ মুহাম্মদ আবুল হোসাইন, সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক জহিরউদ্দিন স্বপন, সাবেক এমপি মোশাররফ হোসেন মঙ্গু, ইলেন ভুট্টো ও নুরুল ইসলাম মণি দলের দায়িত্বশীল পদে আসীন হতে উদগ্রীব। তবে এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম সাবেক হুইপ সৈয়দ শহীদুল হক জামাল। তিনি বিএনপিতে আর ফিরবেন না বলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) দুবারের ভিপি শাহ মুহাম্মদ আবুল হোসাইন ২০০১ সালের নির্বাচনে কাকতালীয়ভাবে বরিশাল-৪ (মেহেন্দিগঞ্জ) আসনে বিএনপির মনোনয়নে এমপি নির্বাচিত হন। পরে ওই সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী হন তিনি। তবে হঠাৎ করেই ওয়ান-ইলেভেনের সময় সংস্কারপন্থি বনে যান। ফলে ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হন তিনি। তাকে বাদ দিয়ে বরিশাল (উত্তর) জেলা বিএনপির সভাপতি মেজবাহউদ্দিন ফরহাদকে দল মনোনয়ন দিলে তিনি এমপি নির্বাচিত হন। এর পর থেকে দলের কোনো পর্যায়েই নেই সাবেক এ অর্থ প্রতিমন্ত্রী। মাঝেমধ্যে নির্বাচনী এলাকায় এলেও পারিবারিকভাবে সময় কাটিয়ে আবার নীরবে চলে যান ঢাকা।
তবে এখনো বিএনপিতে আছেন এবং ভবিষ্যতেও থাকবেন দাবি করে শাহ মুহাম্মদ আবুল হোসাইন বলেন, মাস তিনেক আগে বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করে দলে পদ-পদবি চেয়েছিলাম। জবাবে বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, 'আপনাকে যখন মন্ত্রী বানিয়েছি, তখন আপনি দলের কোন পদে ছিলেন?' তাই পদ-পদবির কথা চিন্তা না করে বেগম জিয়া দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন বলে জানান সাবেক শাহ আবুল হোসাইন। একইভাবে দলের মূলধারায় ফিরতে উন্মুখ কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক জহিরউদ্দিন স্বপন। তিনিও দলের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন বলে তার ঘনিষ্ঠজনেরা জানিয়েছেন।সংস্কারের অজুহাতে দলের মূলধারা থেকে ছিটকে পড়েন সাবেক এমপি মোশাররফ হোসেন মঙ্গু। হারিয়েছেন দলের মনোনয়নও। এখন তার অনুসারী কিছু বিএনপি নেতা-কর্মী নিয়ে তৎপরতা চালালেও তা মূল স্রোতের বাইরে। তবে মঙ্গু বলেন, তিনি বিএনপিতেই আছেন। দলের স্থানীয় কর্মসূচি, সরকারবিরোধী আন্দোলনসহ সব কিছুতেই সক্রিয়। মঙ্গু বলেন, আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার বাসায় দু-তিন বার যাওয়াতেই তার বিরুদ্ধে কুৎসা ছড়ানো হয়েছে। জাতীয় পার্টি থেকে বিএনপিতে যোগদানকারী ঝালকাঠির সাবেক এমপি ইলেন ভুট্টো সংস্কারের অভিযোগে প্রায় ছিটকে পড়েছেন রাজনীতি থেকে। দীর্ঘ নীরবতার পর এবারের ঈদে ইলেন ভুট্টোর শুভেচ্ছা পোস্টার দেখা গেছে নির্বাচনী এলাকায়। এতে আশায় বুক বেঁধেছেন তার অনুসারী নেতা-কর্মীরা। তবে নির্বাচনী এলাকায় যাওয়া-আসা এবং নেতা-কর্মীদের সঙ্গেও যোগাযোগ আছে বলে দাবি করেছেন ইলেন ভুট্টো। তিনি বলেন, 'আমি সংস্কারপন্থিও ছিলাম না, নিষ্ক্রিয়ও নই। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে অনেকে অনেক কিছু বলতে পারেন। কিন্তু আমি খালেদা জিয়াকে ভালোবাসি, বিএনপিতে ছিলাম, আছি, থাকব।' ওয়ান-ইলেভেনের সময় সংস্কারপন্থি হিসেবে বরগুনার সাবেক এমপি নুরুল ইসলাম মণি রাজনীতি থেকে নিজেকে অনেকটা আড়াল করে রেখেছেন। এলাকায়ও তেমন একটা যাওয়া-আসা নেই। ঢাকা ও মালয়েশিয়ায় ব্যবসা পরিচালনা করেই ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। তবে তার ঘনিষ্ঠজনেরা জানিয়েছেন, নুরুল ইসলাম মণি বিএনপিতেই আছেন। মূলধারার রাজনীতিতে ডাক পড়লেই দলে সক্রিয় হবেন। সার্বিক বিষয়ে কেন্দ্রীয় বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক হুইপ অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, হাইকমান্ডের কথা উপেক্ষা করে যারা ২০০৮ সালে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে ছিলেন, তাদের প্রতি বিএনপি নাখোশ।
তার পরও বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বৃহত্তর স্বার্থের কথা চিন্তা করে দলে যে ঐক্যের চিন্তাভাবনা করছেন, তা সুদূরপ্রসারী। এতে নেতা-কর্মীদের মনে আশার সঞ্চার করেছে। বিএনপি লাভবান হবে বলেও তিনি আশা করেন।