সোমবার, ৩ আগস্ট, ২০১৫ ০০:০০ টা
শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলা

ফাঁসি থেকে রেহাই শুক্কুর আলীর

ফাঁসি থেকে রেহাই শুক্কুর আলীর

সাত বছরের শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ড থেকে রেহাই পেলেন ১৪ বছর আগে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া মানিকগঞ্জের শুক্কুর আলী। আজ সোমবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগ তার রায় পুর্নবিবেচনার (রিভিউ) আবেদন নিষ্পত্তি করে তাকে ফাঁসির দণ্ডের পরিবর্তে আমৃত্যু (টিল ন্যাচারাল ডেথ)কারাদণ্ডাদেশ দেন। আইনজীবী এম কে রহমান একথা জানিয়েছেন।

শিশু ধর্ষণ-হত্যার ঘটনার সময় মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার শিবরামপুর গ্রামের শুক্কুর আলী ছিলেন ১৪ বছরের কিশোর। বিচারিক আদালতের রায় প্রদানের সময় তার বয়স দাঁড়ায় ১৯ বছর। রায়ের সময়কার বয়স বিবেচনায় নিয়েই তাকে সর্বোচ্চ সাজা দেন আদালত। পরে হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায়ে মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকে। এমনকি আপিল বিভাগে করা রিভিউ আবেদনেও সাজা কমেনি বা অব্যাহতি পাননি শুক্কুর।

এদিকে বিচারিক আদালত শুক্কুর আলীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার এক বছর আগে ২০০০ সালে জাতীয় সংসদ ১৯৯৫ সালের আইনটি বাতিল করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ নামে আরেকটি আইন প্রণয়ন করে। ওই আইনে ধর্ষণের ফলে বা ধর্ষণের পর কাউকে হত্যা করা হলে তার শাস্তির বিধান রাখা হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা মৃত্যুদণ্ড। কিন্তু শুক্কুর আলীর বিচার হয় ১৯৯৫ সালের আইনে। যে আইনে ধর্ষণের পর হত্যার অপরাধের শাস্তির বিধান ছিল শুধু মৃত্যুদণ্ড।

এ বিষয়টিকে সামনে এনে শুক্কুর আলীর পাশে দাঁড়ায় বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)। তারা এক দেশে দুই আইনের এই বিচার প্রক্রিয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে। এ সংক্রান্ত ১৯৯৫ সালে প্রণীত নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ৬(২) ধারায় যেখানে শাস্তির বিধান ছিলো কেবল মৃত্যুদণ্ড তার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। হাইকোর্ট ২০১০ সালের ২ মার্চ ৬(২) ধারাকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করেন।

কিন্তু শুক্কুর আলীর বিচার নিয়ে হাইকোর্ট কোনো মন্তব্য করেননি। পরে বিষয়টি আপিলে যাওয়ার পর গত ৫ মে হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে শুক্কুর আলীর দণ্ডও বহাল রাখেন। শুক্কুর আলীর দণ্ড বহাল রাখা সংক্রান্ত আপিল বিভাগের এ রায়ের বিরুদ্ধে সম্প্রতি রিভিউ পিটিশন দায়ের করে ব্লাস্ট। অঅজ সোমবার এ আবেদনের নিষ্পত্তি করে আদালত উক্ত রায় দেন।

১৯৯৬ সালের ১১ জুন শুক্কুর আলী মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার শিবরামপুর গ্রামের সাত বছর বয়সী এক শিশুকে ধর্ষণ শেষে হত্যা করেন। পরে মানিকগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল ১৯৯৫ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ৬(২) ধারায় এ মামলায় আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেন। বিচার প্রক্রিয়া শেষে ২০০১ সালের ১২ জুলাই শুক্কুর আলীকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন বিচারিক আদালত। বিচারিক আদালতের মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে জেল আপিল দায়ের করেন শুক্কুর আলী। কিন্তু হাইকোর্ট তার আবেদন খারিজ করে দিয়ে ২০০৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ফাঁসির রায় বহাল রাখেন।

পরে ২০০৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগও মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। এ রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আপিল বিভাগে রিভিউ আবেদন করেন শুক্কুর আলীর পক্ষে রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবী এবিএম বায়েজীদ। আপিল বিভাগ একই বছরের ৪ মে পুর্নবিবেচনার আবেদনও খারিজ করে দেন। রিভিউ খারিজের পর ২০০৫ সালে শুকুর আলীর মা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়ে একটি আবেদন জমা দেন।

বিডি-প্রতিদিন/৩ আগস্ট ২০১৫/শরীফ

সর্বশেষ খবর