সোমবার, ৩ আগস্ট, ২০১৫ ০০:০০ টা

চট্টগ্রাম রক্ষা বাঁধ নিজেই \\\'অরক্ষিত\\\'

চট্টগ্রাম রক্ষা বাঁধ নিজেই \\\'অরক্ষিত\\\'

চট্টগ্রাম শহর রক্ষা বাঁধ নিজেই অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। অতি বর্ষণ, জোয়ার কিংবা শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা করার মত অবস্থা নেই পতেঙ্গা বেড়িবাঁধের। ইতোমধ্যেই ৫-৭টি স্থানে দেখা দিয়েছে ভাঙন। ফলে বেড়িবাঁধ এলাকার মানুষদের জন্য এখন আতঙ্ক প্রাকৃতিক এসব দুর্যোগ।   

জানা যায়, বাঁধ সংলগ্ন এলাকায় আছে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, প্রধান সমুদ্র বন্দর, ইস্টার্ন রিফাইনারি, রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানি- পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার ডিপু, চট্টগ্রাম ইপিজেড, কর্ণফুলী ইপিজেড, নৌ ও বিমানবাহিনীর স্থাপনা, বেসরকারি আইসিডি, ইস্টার্ন কেবলসসহ সরকারি বেসরকারি নানা স্থাপনা। জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড় বা অতিবর্ষণে বাঁধটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে হুমকির মুখে পড়বে এসব স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠান।  

পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সহ-সভাপতি নগর পরিকল্পনাবীদ সুভাষ চন্দ্র বড়ুয়া বলেন, চট্টগ্রামে ফ্লাইওভারের চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ ‘শহর রক্ষা বাঁধ’। কিন্তু দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের শহর রক্ষা বাঁধের দিকে কোনো নজর নেই। অথচ ৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা এলাকায় দেড় লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করেন, ক্ষয়ক্ষতি হয় ৬০ হাজার কোটি টাকার সম্পদ। ৯১ সালের মতো আর একটি ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে ক্ষয়ক্ষতি আগের চেয়ে অনেকগুণ বেড়ে যাবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, ১৯৬৫ সালে পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত ২৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে বেড়িবাঁধ নির্মিত হয়। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল ঘূর্ণিঝড়ের পর পাউবো ৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে বেড়িবাঁধটি নতুন করে নির্মাণ করে। প্রকল্পের আওতায় নেভাল একাডেমি থেকে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত পর্যন্ত এক কিলোমিটার আরসিসি দেয়াল নির্মাণ, সৈকত থেকে আহমেদ পাড়া পর্যন্ত সিসি ব্লক, সেখান থেকে সীতাকুন্ডের ফৌজদারহাট পর্যন্ত মাটির বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়।

পতেঙ্গার স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, ঘূর্ণিঝড় বা অতি বর্ষণের কারণে বঙ্গোপসাগরে পানি বৃদ্ধি পেয়ে খেঁজুরতলা, চরপাড়া, আনন্দবাজার, দক্ষিণ কাট্টলি, সৈয়দপুর, পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত ও মুসলিমাবাদ এলাকার প্রায় তিনশ ফুটের বেশি স্থানে বেড়িবাঁধে ভাঙন-ফাটল দেখা দেয়। কোথাও সরে গেছে মাটি। স্থানীয়রা বালির বস্তা দিয়ে বাঁধটি রক্ষার চেষ্টা করছে।

পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী বিদ্যুৎ কুমার দাশ বলেন, ইতোমধ্যে আমরা বেড়িবাঁধ পরিদর্শন করেছি। তবে সিডিএ পতেঙ্গা বেড়িবাঁধের উপর দিয়ে আউটার রিং রোড নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয়ায় এখন আমরা সেখানে কাজ করতে পারছি না। তাছাড়া সিডিএকে প্রকল্পের ডিজাইনও বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) সূত্রে জানা যায়, ৭ বছর আগে শহর রক্ষা বাঁধ রক্ষায় চউক দেড় হাজার কোটি টাকায় ‘সিটি আউটার রিং রোড’ প্রকল্প হাতে নিলেও নির্মাণ কাজ এখনও শুরু হয়নি। শহর রক্ষা বাঁধের বিকল্প হিসেবে বেড়িবাঁধের ওপর জাইকা ও বাংলাদেশ সরকার যৌথভাবে ‘সিটি আউটার রিং  রোড’ প্রকল্প বাস্তয়নের সিদ্ধান্ত হয়। ব্যয় ধরা হয় এক হাজার ৪৯৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৬৯৮ কোটি ২৮ লাখ টাকা দেবে সরকার, জাইকা দেবে ৭১৫ কোটি ৫৮ লাখ টাকা এবং বাকি ৮২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা দেবে চট্টগ্রাম বন্দর। প্রকল্পের কাজ ২০১১ সালে শুরু হয়ে ২০১৪ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু কাজ শুরু না হয়েই মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা ও অর্থ সংকটের কারণে প্রকল্পের কাজ ঝুলে আছে বলে জানা যায়। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রামে কমবে যানজট, প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাবে শহর, সমুদ্র উপকূলের বাসিন্দা ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।

চউকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সরওয়ার আলম বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এটি শহর রক্ষা বাঁধই হবে। বিভিন্ন সংস্থার অর্থায়নে কাজটি করতে হচ্ছে। তাই হয়তো একটু বিলম্ব হচ্ছে। তবে এটি আমাদের অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসাবে আছে।

বিডি-প্রতিদিন/ ০৩ আগস্ট ১৫/ সালাহ উদ্দীন  

 

সর্বশেষ খবর