মঙ্গলবার, ৪ আগস্ট, ২০১৫ ০০:০০ টা

এমপি মন্নুজান সুফিয়ানের বিরুদ্ধে আরও মামলা

শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে দুর্নীতি এবং অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগে খুলনার দৌলতপুর (দিবা-নৈশ) কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি সাবেক শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান এমপির বিরুদ্ধে আরও একটি দেওয়ানি মামলা হয়েছে। গতকাল মাগুরা জেলার গাংনালিয়া থানার বাসিন্দা ভূপতি বিশ্বাস নামের একজন চাকরিপ্রার্থী সহকারী জজ আদালত দৌলতপুর, খুলনায় এই মামলাটি করেছেন (মামলা নম্বর দেওয়ানি-১৩৩/১৫)। আদালতের বিচারক তাসনীম জোহরা মামলাটি আমলে নিয়ে বিবাদীদের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিস জারি করেছেন। এর আগে একই অভিযোগে গত ২৩ জুলাই আলোচিত কলেজের কারিগরি শাখার সৃষ্টপদে কর্মরত ইংরেজি প্রভাষক ফারজানা হক একই আদালতে পৃথক একটি মামলা করেন। অভিযোগ সম্পর্কে বেগম মন্নুজান সুফিয়ান এমপি প্রথম মামলায় আসামি হওয়ার পর বাংলাদেশ প্রতিদিনের কাছে মোবাইল ফোনে দাবি করেছিলেন, ‘শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতি হয়নি। অর্থও নেওয়া হয়নি। তবে কলেজ ফান্ডে অনেকে ডোনেশন দিয়েছে। এই টাকার হিসাব নিতে কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটি কাজ শুরুর কয়েক মাস পর এখন বিষয়টি ভিন্নখাতে নিতে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে এই মামলা করা হয়েছে। মন্নুজান সুফিয়ান দুর্নীতি করে না, প্রশ্রয়ও দেয় না।’ আলোচিত মামলায় বেগম মন্নুজান সুফিয়ান এমপি ছাড়াও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড যশোরের কলেজ পরিদর্শক, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, বিএল কলেজের অধ্যক্ষ, দৌলতপুর (দিবা- নৈশ) কলেজের অধ্যক্ষ ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষসহ ১৬ জনকে বিবাদী করা হয়েছে।  

এদিকে ভূপতি বিশ্বাস তার মামলার আরজিতে বলেন, ২০১৪ সালের ৪ এপ্রিল পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেখে সমাজকর্ম বিষয়ে শূন্যপদের একজন প্রার্থী হিসেবে তিনি আবেদন করেন। চলতি বছরের ১০ মে যথানিয়মে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেন। কিন্তু ১ নম্বর বিবাদী কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি (বেগম মন্নুজান সুফিয়ান) কলেজের অধ্যক্ষ, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও বিএল কলেজের অধ্যক্ষ যোগসাজশে বাদীকে নিয়োগ না দিয়ে তার স্থলে তৃতীয় স্থান অধিকারী তেজেন্দ্রনাথ বর্মনকে এবং ইংরেজি (পাস) বিষয়ে শূন্যপদে প্রথম স্থান অধিকারী ফারজানা হককে নিয়োগ না দিয়ে তার স্থলে তৃতীয় স্থান অধিকারী উজ্জল কুমার সাহাকে কারচুপি, আর্থিক লেনদেন ও দুর্নীতির মাধ্যমে নিয়োগের চেষ্টা করছেন। আরজিতে আরও বলা হয়েছে, ২০১৩ সালের ১৭ মে অনুষ্ঠিত শূন্য প্রভাষক পদে নিয়োগ পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকারী মৌসুমী নাসিমাকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। বরং ওই নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করে পুনরায় নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে মো. জাহাঙ্গীর আলম সবুজকে নিয়োগ দেওয়া হয়। একইভাবে ২০১৩ সালের ৭ জুন লাইব্রেরিয়ান পদে প্রথম স্থান অধিকারী দেবযানী বিশ্বাসকে নিয়োগ না দিয়ে ওই নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করে পুনরায় নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে মো. জাকির হোসেনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০১৩ সালের ৩০ আগষ্ট উপাধ্যক্ষের পদের নিয়োগ পরীক্ষায় মো. আসলাম শেখ প্রথম হলেও তার স্থলে মো. সদরুজ্জামান সবুরকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ের শূন্যপদের নিয়োগ পরীক্ষায় মো. আবদুল্লাহ আল হাদি প্রথম হলেও তার স্থলে নিয়োগ দেওয়া হয় মো. মাসুম খন্দকারকে। আবার নিয়োগ পরীক্ষায় প্রথম না হয়েও পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ের শূন্যপদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে মো. মনিরুল হককে। আলোচিত নিয়োগগুলো মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির (বেগম মন্নুজান সুফিয়ান) ইচ্ছা ও প্রভাবের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে। একই সঙ্গে এই নিয়োগকে কেন্দ্র করে কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতিসহ নিয়োগ কমিটি কারচুপি ও দুর্নীতির মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা অর্থ বাণিজ্য করতে পারেন তার চেষ্টা করছে বলে বাদী আরজিতে উল্লেখ করেছেন।  
বাদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবু জাফর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মামলার ১ নম্বর বিবাদী কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি বেগম মন্নুজান সুফিয়ান এমপিসহ সাতজন বিবাদীর বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়েছে। আদালতের বিচারক তাসনীম জোহরা শুনানি শেষে মামলার বিবাদী পক্ষকে ১০ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর আদেশ দেন। একই সঙ্গে ১০ মে অনুষ্ঠিত নিয়োগ পরীক্ষা সংক্রান্ত সব কাগজপত্রও তলবের নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, বেগম মন্নুজান সুফিয়ান এমপি ২০০৯ সাল থেকে কলেজটির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। এই সময়ের মধ্যে কলেজটিতে ৮০ জন শিক্ষক ও ২০ জন কর্মচারী নিয়োগ হয়েছে।

সর্বশেষ খবর