শুক্রবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

বগুড়ায় ঝিমিয়ে পড়েছে ছাত্র সংগঠনগুলোর কার্যক্রম

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

বগুড়ায় ঝিমিয়ে পড়েছে ছাত্র সংগঠনগুলোর কার্যক্রম। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ ছাড়া অন্যান্য ছাত্র সংগঠনগুলোর অস্তিত্ব সংকট তীব্র হয়ে দেখা দিয়েছে। মামলা আর গ্রেফতার আতঙ্কে ছাত্রদল-শিবির নেতা-কর্মীরা। জাতীয় ছাত্রসমাজসহ অন্যান্য সংগঠনগুলো প্রেসরিলিজ নির্ভর হয়ে পড়েছে। উত্তরাঞ্চলের প্রবেশদ্বার বগুড়ায় ঐতিহ্যবাহী সরকারি আযিযুল হক কলেজসহ স্বনামধন্য বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। আর এসব প্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতি চর্চার মধ্য দিয়ে তৈরি হয়েছে অনেক নেতৃত্ব। যারা পরবর্তীতে জেলা ও কেন্দ্রের নেতৃত্ব প্রদান করেছেন। এক সময়ের তুখোড় নেতা তৈরি হয়েছে ছাত্র রাজনীতি চর্চার মধ্য দিয়ে। কিন্তু সেই ছাত্র সংগঠনগুলোর কার্যক্রম এখন চলছে ঢিমেতালে। ক্ষমতাসীন ছাত্রলীগের কমিটি গঠন হয়েছে সম্মেলনের মধ্য দিয়ে চলতি বছরের ৭ মে। জেলায় সম্মেলন হলেও গত ১২ মে ঢাকায় বসে নেতারা ৫ সদস্যর জেলা কমিটির নাম ঘোষণা করেন। অদ্যাবধি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়নি। ছাত্রলীগের অনেক আগে থেকে চলতে থাকা দ্বন্দ্বের রেশ এই কমিটিতেও রয়েছে। সম্প্রতি সরকারি কমার্শিয়াল কলেজে পৃথকভাবে মিছিল-সমাবেশ করেছে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অনুসারী ছাত্র নেতারা। তবে ক্ষমতাসীন দল হওয়ায় দলীয় ও কেন্দ্রীয় কর্মসূচিগুলো একসঙ্গেই তারা পালন করে থাকে। শোকের মাসে একই সঙ্গে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে ছাত্রলীগ। বগুড়া জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি নাঈমুর রাজ্জাক তিতাস জানান, বগুড়ায় ছাত্রলীগ পূর্বে থেকেই সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী। জেলাসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগ নিয়মিতভাবে কর্মসূচি পালন করে আসছে। খুব শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি ঘোষণা হবে। ছাত্রলীগে কোনো দ্বন্দ্ব নেই, গণতান্ত্রিক ধারায় ছাত্রলীগ কাজ করে যাচ্ছে। এদিকে এক সময় রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদল বগুড়ায় অস্তিত্ব সংকটে। দলীয় কোন্দল, গ্রুপিং, মামলা, গ্রেফতার আতঙ্কে দলের নেতা-কর্মীদের দেখা পাওয়া যায় না। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দীর্ঘসময় থেকে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় বললেই চলে। কোনো কর্মসূচি এমনকি দোয়া মাহফিলেও তাদের দেখা যায় না। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বগুড়ায় ছাত্রদল সক্রিয় থাকলেও বিভিন্ন উপগ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল। বর্তমানে অধিকাংশ নেতা-কর্মী নিষ্ক্রিয়। জেলা ছাত্রদলের হাতেগোনা কয়েকজন নেতা-কর্মী ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোনো নেতাকে দলীয় কর্মসূচিতে দেখা যায় না। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালের ৬ জুন জেলা ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা হয়। কমিটি ঘোষণার প্রায় আড়াই বছর পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা হওয়ায় গ্রুপিং চাঙ্গা হয়ে ওঠে। বিভিন্ন উপ-দলে বিভক্ত হয়ে পড়ে ছাত্রদল। জেলা ছাত্রদল সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, সাধারণ সম্পাদক শাহাবুল আলম পিপলু, সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক, যুগ্ম সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম শুভ, আযিযুল হক কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম শফিকের নেতৃত্বে পৃথকভাবে কমসূচি পালনসহ শহরের মূল দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে পৃথকভাবে অংশগ্রহণ লক্ষ্যণীয়। পরবর্তীতে মামলাসহ দলীয় কোন্দলের কারণে জেলা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ শীর্ষ নেতাদের কোনো কর্মসূচিতে আর দেখা যায়নি। জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম শুভ জানান, বগুড়ায় ছাত্রদল শক্তিশালী করতে তরুণ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে। নতুন করে ঢেলে সাজাতে হবে বগুড়া জেলা ছাত্রদল। অন্যদিকে ছাত্রশিবির মামলা আর গ্রেফতার আতঙ্কে গোপনে চালাচ্ছে তাদের কার্যক্রম। মাঝে মাঝে প্রেস রিলিজ দিয়ে জানান দেয় তাদের কর্মকাণ্ড। অপরদিকে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ছাত্র সংগঠন জাতীয় ছাত্রসমাজের জেলা ও সরকারি আযিযুল হক কলেজে আহ্বায়ক কমিটি থাকলেও উপজেলা পর্যায়ে কোনো কার্যক্রম নেই। সংগঠনের কলেজ শাখার আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসাইন জনি জানান, জেলার বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানসহ উপজেলা পর্যায়ে সংগঠন শক্তিশালী করতে নতুন করে কমিটি গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ ছাড়া জাসদ ছাত্রলীগ ৭ বছর ধরে একই কমিটি দিয়ে চলছে। কমিটি নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে জাসদ ছাত্রলীগও।

সর্বশেষ খবর