রবিবার, ১ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে চার অতিথি

মোস্তফা কাজল

বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে চার অতিথি

একটি-দুটি নয়, চারটি সিংহ শাবকের গর্জন এখন শোনা যায় গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে। পার্ক সূত্র বলছে, এত দিন এই চারটি সিংহ শাবক বাঁচবে কি না, সেই ঝুঁকিতে ছিল। গত ১০-১২ দিন আগে থেকে শাবকগুলোর স্বাভাবিক শারীরিক বৃদ্ধি হচ্ছে। বর্তমানে তারা সুস্থ আছে। বাচ্চাগুলোকে সাফারি পার্কের বন্য প্রাণী পরিচর্যা কেন্দ্রে লালন-পালন করা হচ্ছে। বর্তমানে হ্যান্ড রিয়ারিং বা ফিডারের মাধ্যমে দুধ খাওয়ানো হচ্ছে। চার শাবকের বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় চার কোটি টাকা। বাংলাদেশে দক্ষিণ আফ্রিকান সিংহ শাবকের জম্ম হওয়া এই প্রথম ঘটনা। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আনা দুই সিংহীর গর্ভে জম্মনেওয়া পাঁচটি শাবকের মধ্যে একটি জম্মের সময়ই মারা যায়। বাকি চারটি শাবক বর্তমানে সুস্থ আছে। ফলে চিকিৎসা কেন্দ্রে স্থান হয়েছে চারটি সিংহ শাবকের। তাদের নিয়ে যেন খেলায় মেতেছেন এনিমেল কিপার নুরুন নবী মিন্টু। মিন্টুর ভালোবাসার কাছে বশ মেনেছে বনের পশু। সিংহের শাবক চারটির মধ্যে একটি মাথার ওপরে, আর একটি শরীরের ওপরে বসে খেলা করছে। অন্য দুটি আবার জিহ দিয়ে মিন্টুর শরীরে বুলিয়ে দিচ্ছে মমতার পরশ। এর আগে সিংহীকে তাদের প্রতিনিয়ত আক্রমণ করছিল পুরুষ সিংহগুলো। তারপরই বাচ্চা চারটিকে আলাদা করে বন্য প্রাণী চিকিৎসা কেন্দ্রে রাখা হয়। কারণ অনেক সময় শাবকদের মেরে ফেলে পুরুষ সিংহ।

 মাস দেড়েক আগে বন্যপ্রাণী চিকিৎসা কেন্দ্রে পরিচর্যার পর ফের বাচ্চাগুলোকে তাদের মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল পার্ক কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সেই উদ্যোগ সফল হয়নি। মাস খানেক পর বাচ্চা চারটিকে আর গ্রহণ করেনি তাদের দুই মা। মিন্টুই এখন ২৪ ঘণ্টা দেখভাল করছে তাদের। পদ্মা, মেঘনা, কর্ণফুলী ও যমুনাও মিন্টুরই রাখা নাম। নাম ধরে ডাকলেই শাবকগুলো দৌড়ে চলে আসে মিন্টুর কাছে। দুই মাস বয়স পর্যন্ত শুধু থাইল্যান্ড থেকে কেনা গুঁড়া দুধ খেয়েছিল পদ্মা, মেঘনা, কর্ণফুলী ও যমুনা। এখন প্রতিদিন সকাল ১১টায় গরু ও মুরগির মাংস খাওয়ানো হয়। শাবক চারটির চিকিৎসা করছেন সাফারি পার্কের সহকারী ভেটেরিনারি অফিসার ডা. হাতেম মোহাম্মদ জুলকার নাইন। তিনি বলেন, সিংহের বাচ্চা চারটিকে ছয় মাস পর্যন্ত হাসপাতালে রাখা হবে। এর পরে এরা ঝুঁকিমুক্ত হবে। পরে আমরা অন্য সিংহের দলের মধ্যে কয়েক ঘণ্টা করে ছেড়ে দেব। এর পরেও গভীর পর্যবেক্ষণে রাখব। যতদিন এরা ভালো মতো সিংহের দলে ফিরতে না পারবে ততদিন এদের গভীর পর্যবেক্ষণে রাখব। তবে সিংহ দল বেঁধে ঘুরতে ভালোবাসে। বাচ্চা চারটির মায়ের অভাব মিন্টু কিছুতেই বুঝতে দেয় না। প্রাকৃতিকভাবে যেন মিন্টুর সঙ্গে বাচ্চা চারটির গভীর মিতালী তৈরি হয়েছে। প্রায় চার বছর আগে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ১৩টি সিংহ-সিংহী আনা হয়েছিল বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর