শিরোনাম
রবিবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

মেয়াদোত্তীর্ণ রাসায়নিক দিয়ে রোগ নির্ণয়

প্রতারণার দায়ে চার হাসপাতালকে ২০ লাখ টাকা জরিমানা

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর ফার্মগেটের আল রাজী হাসপাতালে মেয়াদোত্তীর্ণ রাসায়নিক উপাদান দিয়ে রোগ নির্ণয় করায় ৬ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল দুপুরে অভিযান পরিচালনা করেন র‌্যাব সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম। তিনি জানান, অভিযানে দেখা গেছে হেপাটাইটিসের মতো রোগ নির্ণয়ে যে রাসায়নিক উপাদানের ব্যবহার করা হচ্ছে তা মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে। হাসপাতালের প্যাথলজি ল্যাবরেটরি তল্লাশি করে এ রকম আরও বেশকিছু রোগ নির্ণয়কারী রাসায়নিক উপাদান পাওয়া গেছে যেগুলো ৬-৮ মাস আগে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। অথচ তা ব্যবহার করা হচ্ছে। অপারেশন থিয়েটারে রয়েছে পুরাতন রক্তের দাগ লাগানো বেশ কয়েকটি ইট ও বালির প্যাকেট, দেয়ালের প্লাস্টার ধসে পড়ছে নিচে। তাছাড়া ময়লাযুক্ত বিভিন্ন কাপড়-চোপড়। অপারেশন থিয়েটারে পাশে অবস্থিত ড্রেসিং রুমে প্রচুর ধূলা-বালিযুক্ত জিনিসপত্র যা অপারেশনকৃত রোগীর জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার প্রধান কারণ হতে পারে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের বোর্ডে নাম টানিয়ে রাখা হয় দুই বৎসর আগে প্রয়াত চিকিৎসক ডা. খোরশেদ আলমের নাম। এ সমস্ত বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাইলে তারা কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। আদালত এ সমস্ত অপরাধের কারণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ৬ লাখ টাকা জরিমানা এবং নাম ফলকের বোর্ড থেকে মৃত চিকিৎসকের নাম নামানোর নির্দেশ দেন।

এদিকে, একই এলাকার আল-ফাতেহ্ মেডিকেল সার্ভিসেস সেন্টারে অভিযান চালিয়েছেন র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম। তিনি জানান, অভিযানের সময় কোনো চিকিৎসক, নার্স ও টেকনিশিয়ানকে পাওয়া যায়নি। এ সময় প্যাথলজি শাখায় তৈরি করা বিভিন্ন মেডিকেল রিপোর্টে শুক্রবার পর্যন্ত মাতুয়াইলের মা ও শিশু হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মো. শাহানুর করিমের স্বাক্ষর রয়েছে। এ ব্যাপারে ওই চিকিৎসক জানান, তিনি গত ১০ দিনে ওই ক্লিনিকে যাননি এবং কোনো মেডিকেল রিপোর্ট স্বাক্ষর করেননি। এ সময় ৫২টি মেডিকেল রিপোর্ট জব্দ করা হয়। এ অপরাধে ক্লিনিকের ব্যবস্থাপক দিদারুল ইসলামকে ৬ মাসের কারাদণ্ড এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুমোদন ছাড়া ক্লিনিক পরিচালনা করায় সীলগালা করে দেওয়া হয়েছে। এদিকে রাজধানীর আদাবরে এসপি ও এসপি-২ নামে দুটি হাসপাতালে অভিযান চালিয়েছেন র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় প্রতিষ্ঠান দুটির মালিকসহ ১০ জনকে ১৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ ছাড়া আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এসপি হাসপাতাল-২ বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। গতকাল দুপুরে অভিযানটি পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন। দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন-  সনজিৎ চক্রবর্তীকে তিন মাসের কারাদণ্ড ও ২ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও দুই মাসের কারাদণ্ড; দিদার ও নরোত্তমকুমারকে ৪ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে প্রত্যেককে দুই মাসের কারাদণ্ড; ছোটন চন্দ্র দাশ ও অনুজ বিশ্বাসকে ২ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে প্রত্যেককে দুই মাসের কারাদণ্ড; নিপা আক্তার, মার্জিয়া মোহসিনা শেফালী, আতাউর রহমান ও পংকজ মিত্রকে ২ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে প্রত্যেককে এক মাসের কারাদণ্ড এবং গৌতমকুমারকে ২ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে দুই মাসের কারাদণ্ড।

 র‌্যাব-২-এর উপ-পরিচালক দিদারুল আলম জানান, আদাবরের এসপি হাসপাতালে চিকিৎসার নামে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছিল। রোগীর চিকিৎসায় ওষুধ লেখার জন্য বিএমডিসি অনুমতি নেই এবং ডাক্তার বা রোগের কোনো বিবরণ বলতে না পারলেও বিভিন্ন ধরনের ডিগ্রি ব্যবহার করার অপরাধে ভুয়া চিকিৎসক ও মালিক পরিচয় দানকারী সনজিৎ চক্রবর্তীসহ নয়জনকে আটক করা হয়। অভিযোগ পাওয়া গেছে, এ প্রতিষ্ঠান দুটিতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের লাইসেন্স না থাকা, অভিজ্ঞ ল্যাব টেকনিশিয়ান ছাড়া ল্যাব পরিচালনা, প্রয়োজন না থাকলেও সব রোগীর এমআরআই করানো, লাইসেন্সবিহীন প্যাথলজি ও ফার্মেসি পরিচালনা, কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই রোগীর এমআরআই করানো; ইসিজি, ইকো, আলট্রাসনো করা; মেডিকেল টেকনোলজিস্ট দিয়ে বিএমডি স্টাডি টেস্ট করানো; এমআরআই করানো ডাক্তারের কাগজ দেখাতে ব্যর্থতা, অর্থোপেডিক ছাড়া জেনারেল ডাক্তার দ্বারা রোগীর চিকিৎসা এবং বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আসার আগেই ল্যাব টেকনিশিয়ান দ্বারা রিপোর্ট তৈরি করানো হয়।

সর্বশেষ খবর