জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তপন কুমার সাহার বিরুদ্ধে ছাত্রদের মারামারির ঘটনায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে এক গোপন অডিও ফাঁস হওয়ায় ক্যাম্পাসে তোলপাড় শুরু হয়েছে। অডিওতে বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এক অনুষ্ঠানে দাওয়াত না পাওয়ায় শৃঙ্খলার দায়িত্ব পালন না করে উল্টো ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের উসকানি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করেছে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকরা।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার সন্ধ্যায় ফার্মেসি বিভাগের রজতজয়ন্তী ও পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটরিয়ামে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলাকালে মীর মশাররফ হোসেন হলের আবাসিক ছাত্র মাইদুল ইসলাম সিফাতকে (পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ, ৪০তম ব্যাচ) মারধর ও পাঁচ রাউন্ড গুলি করে ছাত্রলীগ কর্মী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের আবাসিক ছাত্র মহিদুর রহমান রাসেল (ফার্মেসি বিভাগ, ৩৯তম ব্যাচ)। পরে তাত্ক্ষণিকভাবে এ ঘটনার বিচার চাইতে মীর মশাররফ হোসেন হলের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা অডিটরিয়ামের সামনে এসে জড়ো হয়। এ সময় তারা ফার্মেসি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক সুকল্যাণ কুমার কুণ্ডর সঙ্গে দেখা করে ঘটনার প্রতিকার চাইলে তিনি ঘটনাটি শৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমকে জানাতে বলেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উপ-সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক ও মীর মশাররফ হোসেন হলের আবাসিক ছাত্র বশিরুল হক প্রক্টর অধ্যাপক তপন কুমার সাহাকে ফোন করে এ ঘটনার প্রতিকার চান। কিন্তু বিভাগের অনুষ্ঠানে প্রক্টরকে দাওয়াত দেওয়া হয়নি জানিয়ে প্রক্টর এ ঘটনার বিচারের জন্য ওই নেতাকে বিভাগীয় সভাপতিকে চাপ দিতে বলেন। ১ মিনিট ২৭ সেকেন্ডের এই কথোপকথনে শোনা যায়, প্রক্টর অধ্যাপক তপন কুমার সাহা বশিরকে বলছেন, ‘চেয়ারম্যানকে (ফার্মেসি বিভাগের সভাপতি) ভালোমতো কইরা ধরো। একেবারে ধরো।’ এরপর বশির ফার্মেসি বিভাগের সভাপতির কথা উল্লেখ করে প্রক্টরকে বলেন, ‘স্যার উনি তো আপনার ওপর দায়িত্ব ছাইড়া দিছে। উনি বলছে গোলাগুলি হইছে বাইরে (অনুষ্ঠান স্থল অডিটরিয়ামের বাইরে), এই দায়িত্ব আমি নিব কেন? ক্যাম্পাস প্রশাসনের দায়িত্ব ক্যাম্পাস সেইভ রাখা।’ এর উত্তরে প্রক্টর বলেন, ‘বলো যে, ক্যাম্পাস প্রশাসনের দায়িত্ব- অনুষ্ঠান করছেন, আপনি কি তারে জানাইছেন? বলছেন? না প্রক্টররে দাওয়াত দিছেন?’ এরপর বশির বলেন, ‘উনি তো (ফার্মেসি বিভাগের সভাপতি) দায়িত্ব নিতে চাইছে না, উনি বলছে যে, এর সম্পূর্ণ প্রশাসনিক দায়িত্ব হচ্ছে আপনার।’ এ কথার উত্তরে প্রক্টর বলেন, ‘কিচ্ছু দায়িত্ব না, ওরে (সভাপতিকে) ধরে আটকাই থোও (রাখো) ওনে (ওখানে)। বসে থাক। বলো যে, এর বিচার না হইলে আমরা উঠবো না।’ এদিকে অডিও ক্লিপে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও ছাত্রলীগ নেতার এই কথোপকথনে প্রক্টরের বক্তব্যকে ‘উসকানিমূলক’ ও ‘দায়িত্বে অবহেলা’ হিসেবেই দেখছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। প্রভাবশালী এক আওয়ামীপন্থি শিক্ষক বলেন, প্রক্টরের এমন বক্তব্যে বুঝতে হবে তিনি নৈতিক অবস্থানে নেই। এমন ঘটনা ফাঁস হওয়ার পরে তার পদত্যাগ করা উচিত। অথবা প্রশাসনের উচিত তাকে অপসারণ করা। প্রক্টরের এমন বক্তব্য নিজেরাও বিব্রত উল্লেখ করে দুই সহকারী প্রক্টর বলেন, প্রক্টরের দায়িত্বে থেকে এমন বক্তব্য দেওয়া ঠিক হয়নি। এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক তপন কুমার সাহা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অনুষ্ঠানের ব্যাপারে প্রক্টর অফিসকে তারা কিছুই জানায়নি। এ ছাড়া ওইদিন আমি ছুটি নিয়ে পারিবারিক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলাম। ছাত্ররা মারামারির এ ঘটনা জানালে আমি দুই হলের মধ্যে মারামারি এড়ানোর জন্য তাদেরকে বিষয়টি ওই বিভাগের সভাপতিকে জানাতে বলি। যেন উনি বিষয়টি সমাধান করতে পারেন। আর উনি (সভাপতি) প্রয়োজন মনে করলে আমাদের জানাবেন। এ ব্যাপারে বিভাগীয় সভাপতি অধ্যাপক ড. সুকল্যাণ কুমার কুণ্ড বলেন, বিভাগ থেকে আমরা উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করে বিচার চাইব। এ ঘটনার একটা সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচার হওয়া উচিত। এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, অডিও ক্লিপটির বিষয়ে আমি শুনেছি। কিন্তু ক্লিপটির কথোপকথন শুনিনি। তাই কোনো মন্তব্য করতে পারছি না।