সোমবার, ৪ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আশ্বাস বিটিআরসির

ফোনে ৫০০ টাকা রিচার্জ

জিন্নাতুন নূর

মোবাইল ফোনে (প্রি-পেইড সংযোগে) দিনে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকার বেশি রিচার্জ করা যাবে না— বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) এমন সিদ্ধান্তকে অবিবেচনাপ্রসূত বলে মনে করছেন দেশের বেসরকারি মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোর দায়িত্বপ্রাপ্তরা। তাদের আশঙ্কা, একটি সিন্ডিকেটকে সুবিধা দিতেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এদিকে তীব্র আপত্তির মুখে বিটিআরসি তাদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবে বলে আশ্বাস দিয়েছে। মোবাইল কোম্পানির সঙ্গে জড়িতরা জানান, একটি সংঘবদ্ধ চক্র দেশের বেসরকারি মোবাইল ফোন কোম্পানি গুলোর ব্যবসায় বাধা দিতে চাইছে। তারা সরকারের সহযোগিতা নিয়েই বেসরকারি মোবাইল অপারেটরগুলোর বিরুদ্ধে কাজ করছে। কর্মকর্তারা বলছেন, আমরা ধারণা করছি একটি বিশেষ সিন্ডিকেটকে সুবিধা দেওয়ার জন্যই বিটিআরসি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর ফলে বেসরকারি মোবাইল অপারেটরগুলোর গ্রাহকদের ফোন করার পরিমাণ কমে যেতে পারে। মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আরও জানান, সিদ্ধান্তটি মোবাইল কোম্পানিগুলো এবং এর গ্রাহক উভয়কেই সমস্যায় ফেলবে। এর ফলে রাজস্ব আয় ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে গ্রাহকসেবা। তারা বলেন, বেশ কিছু ব্যান্ডেল প্যাকেজ আছে যার মূল্য ৫০০ টাকার বেশি। আর দিনে যদি ৫০০ টাকার বেশি মোবাইল রিচার্জ করা না যায় তবে বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরদের প্যাকেজ সেবা যেমন বন্ধ হয়ে যাবে, তেমনি গ্রাহকরা মোবাইলে ইন্টারনেট সেবা থেকে বঞ্চিত হবেন। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে মোবাইলসহ ইন্টারনেট সংযোগের কোনো প্যাকেজ আর থাকবে না। এমনকি গ্রাহকরা মোবাইল থেকে বাস ও ট্রেনের টিকিট ক্রয়ের মতো সুবিধাগুলোও পাবেন না। গ্রামীণফোনের কমিউনিকেশন বিভাগের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা তার পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এই সিদ্ধান্ত মোবাইল অপারেটর কোম্পানি ও গ্রাহক উভয়ের জন্য ক্ষতিকর। বিবেচনা না করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমাদের যে সব ডাটা প্যাক আছে তার অনেকগুলোই ৫০০ টাকায় নেওয়া সম্ভব নয়। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি অনেক সুবিধাই এখন মোবাইলে ইন্টারনেটের মাধ্যমে নিতে হয়। যা এই সিদ্ধান্তের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমরা চাই দিনে সর্বোচ্চ দুই হাজার টাকার রিচার্জের ব্যবস্থা করে দেওয়া হোক। এয়ারটেলের পাবলিক রিলেশন বিভাগের প্রধান শমিত মাহবুব এই প্রতিবেদককে বলেন, এই সিদ্ধান্তের পেছনে কোনো চক্র আছে বলে জানা নেই। তবে এই সিদ্ধান্তের ফলে মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো ক্ষতির সম্মুখীন হবে। বিশেষ করে মোবাইল ব্যাংকিং খাতে সমস্যা হবে। বেসরকারি মোবাইল ফোন কোম্পানি রবি’র কমিউনিকেশন ও কর্পোরেট রেসপনসিবিলিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ইকরাম কবির বলেন, আমরা দিনে কত টাকা রিচার্জ করা হবে তার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি— দিনে কতবার রিচার্জ করা যাবে তার ওপর। এ ব্যাপারে আমরা বিটিআরসির কাছে চিঠিও দিয়েছি। তারা আমাদের দিনে ৫০০ টাকা রিচার্জের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা হবে বলে মৌখিক আশ্বাস দিয়েছে। অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশ (অ্যামটব)-এর জেনারেল সেক্রেটারি নুরুল কবির বলেন, বর্তমানে ভয়েস কলের চেয়ে গ্রাহকদের ইন্টারনেটের ডাটা ব্যবহারের পরিমাণ বেশি। বিশেষ করে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি, তৃণমূলে সরকারি-বেসরকারি সেবা গ্রহণ, গ্রামে ইউনিয়ন কেন্দ্রগুলোর তথ্য সেবাগুলো মোবাইল ইন্টারনেটের মাধ্যমে গ্রহণ করতে হচ্ছে। সারা দেশে মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করার হার ৯৫ শতাংশ। এখন যদি প্রি-পেইড মোবাইলে দিনে ৫০০ টাকা রিচার্জ সুবিধা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়— তবে গ্রাহকরা সেবা থেকে বঞ্চিত হবেন। আমরা বিটিআরসিকে বিষয়টিকে পুনর্বিবেচনা করার অনুরোধ জানিয়েছি। বিটিআরসিও বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে। তবে ‘কোনো নির্দিষ্ট চক্রকে সুবিধা দেওয়ার জন্য এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছি কিনা’ জানতে চাইলে নুরুল কবির বলেন, সরকার যে কোনো সিদ্ধান্ত নিলে তার পেছনে কিছু যুক্তি থাকে। তবে প্রমাণ ছাড়া এ ব্যাপারে কিছু বলা যাবে না। সূত্র জানিয়েছে, আপাতত বিটিআরসি এ সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনা করবে বলে মোবাইল অপারেটরদের মৌখিক আশ্বাস দিয়েছে। অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশ (অ্যামটব) ও দেশের মোবাইল অপারেটরদের সঙ্গে আলোচনার পরই বিটিআরসি এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ৫০০ টাকার রিচার্জে ৩ শতাংশ সাপ্লিমেন্টারি ডিউটি ও ১৫ শতাংশ ভ্যাটের পর একজন গ্রাহক ৪২২ টাকার সেবা পান। যদিও বিটিআরসি এই ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের পেছনে সুনির্দিষ্ট কোনো যুক্তি উপস্থাপন করেনি। অন্যদিকে বিটিআরসি বলছে, অবৈধ ভিওআইপি কল বন্ধের জন্যই এমন সিদ্ধান্ত। এটি সরকারের ওপর থেকে দেওয়া সিদ্ধান্ত। বিটিআরসি শুধু তা পালন করছে। প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, অপারেটর কোম্পানিগুলো এই সিদ্ধান্ত যেমন মেনে নেয়নি, তেমনি তারা সিঙ্গেল রিচার্জ লিমিট দুই হাজার টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে। এ ব্যাপারে বিটিআরসির চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মূলত অবৈধ আন্তর্জাতিক ফোন বা ভিওআইপি বন্ধ করতেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে সম্প্রতি মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে আমরা এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মোবাইল অপারেটররা প্রতিদিন প্রি-পেইডে রিচার্জ দুই হাজার টাকা করতে চাইছে তবে আমরা তা ৫০০ টাকার বেশি, কিন্তু দুই হাজার টাকার কম— অর্থাত্ যৌক্তিক পর‌্যায়ে রিচার্জ করার কথা ভাবছি।  প্রসঙ্গ, গত ২৯ ডিসেম্বর দেশের মোবাইল অপারেটরদের এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়ে চিঠি দেয় বিটিআরসি। তবে এটি পোস্ট-পেইড গ্রাহকদের জন্য প্রযোজ্য নয়। এতে বলা হয় একজন প্রি-পেইড গ্রাহক সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকার ব্যালেন্স রাখতে পারবেন। আর মাসে এক হাজার টাকা ব্যালেন্স ট্রান্সফার ও দিনে ৩০০ টাকার বেশি ট্রান্সফার করতে পারবেন না। এর আগে ২০০৮ সালে একটি নির্দেশনায় সর্বোচ্চ এক হাজার টাকা রিচার্জ করার নিয়ম থাকলেও প্রতিদিনের রিচার্জ সীমা নির্ধারিত ছিল না। বিটিআরসির সর্বশেষ নভেম্বর মাসের তথ্য অনুযায়ী দেশের ছয়টি মোবাইল অপারেটরের মোট গ্রাহক ১৩ কোটি ৩১ লাখ ৬৩ হাজার। যার ৯৮ শতাংশই প্রি-পেইড গ্রাহক।

সর্বশেষ খবর