বুধবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

দালালের হাতে জিম্মি রোগীরা

সৈয়দ নোমান, ময়মনসিংহ

দালালের হাতে জিম্মি রোগীরা

গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ময়মনসিংহ মেডিকেলের মেডিসিন ইউনিটের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় চিত্কার ভেসে আসে কানে। একটু এগিয়ে সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই বোঝা গেল, বেশ ক্ষিপ্ত মধ্যবয়সী এক লোক। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দেহুইন, কাড হইয়া শুইয়া রইছে পোলাডা। শইলডাত কিচ্ছু নাই। এমুন রোগীর পাশে একটা লুক হগল বেলাই লাগে। অহন ডাক্তার আইছে ঢুকতে দেয় না আমগোরে। আর সারা দিনের লাইগ্যা কোনো নিয়ম নাই।’ দূর থেকেও দেখলাম ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের ১৪ নম্বর বিছানায় শুয়ে আছেন ফারুক হোসেন। ভর্তি হয়েছেন শনিবার। ডাইরিয়া ও আমাশয়ের লক্ষণ নিয়ে এসেছিলেন তিনি। চিকিৎসকদের ভিজিট টাইম হওয়ায় ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না রোগী ফারুক হোসেনের বাবা বিল্লাল হোসেনকে।

রোগী সম্পর্কে চিকিৎসক কী বলেন—এমন প্রশ্নে বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘ডাক্তরই তো নাই। আবার কইতো কী! কলেজের ছাত্ররা আইয়া দেহে। আইজ ডাক্তার আইছে তিন দিন পরে। অহন পর্যন্ত একটা বড়িও দিছে না। খালি টেস্ট করাইতাছে। শনিবার ভর্তি করছিলাম। অহন পর্যন্ত পানি ছাড়া আর কিছু খাইছে না, স্যালাইনডাও দিছে না। ট্যাহা ছাড়া কেউ কিছু বুজে না। আফনে কতক্ষণ থাকলে ইটও ট্যাহা চাইব।’ তিনি বলেন, ‘এক্স-রে, প্রস্রাব, কফ, আল্ট্রা—এই চাইরডার মধ্যে তিনডাই করান অইছে বাহির থেইক্যা।’ আছিয়া বেগম (৬০) মাথাব্যথা নিয়ে আসেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে। সঙ্গে নিয়ে আসেন মেয়ে সুফিয়া আক্তার পপিকে। টিকিট কেটে চলে যান মেডিসিন বহির্বিভাগের ২২৭ নম্বর কক্ষে কর্তব্যরত চিকিৎসকের কাছে। ব্যবস্থাপত্রে চিকিৎসক উপদেশ দিলেন তিনটি টেস্ট করানোর। আর মুখে বলে দিলেন, অবশ্যই বাইরে থেকে করাতে হবে। কক্ষ থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লাল গেঞ্জি পরা এক দালাল নিয়ে যায় মিলিনিয়াম আল্ট্রাসাউন্ড অ্যান্ড প্যাথলজি ল্যাবে। সেখানে এক্স-রেসহ তিনটি টেস্ট করান তিনি এক হাজার টাকা দিয়ে।

আছমা খাতুন (৩০) কোমরে ব্যথা নিয়ে আসেন আর্থোপেডিকস বহির্বিভাগে। ১০৫ নম্বর কক্ষের ডা. পলাশ চন্দ্র সাহা ছিলেন তার চিকিৎসক। তিনিও রোগীকে বুদ্ধি বাইরে থেকে এক্স-রে করানোর।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর