শুক্রবার, ১৮ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা
অভিশাপমুক্ত দেশ গড়ার অঙ্গীকার

বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উদ্যাপন

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশবিরোধী সব ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয়ে গতকাল ১৭ মার্চ দেশব্যাপী উদ্যাপন করা হলো জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন। এ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর খুনি ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও রায় কার্যকরের মধ্য দিয়ে অভিশাপমুক্ত দেশ গড়ার অঙ্গীকার করা হয়। বঙ্গবন্ধুর ৯৬তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে গতকাল ছিল সরকারি ছুটি। দিনের প্রধান কর্মসূচিতে ছিল ভোরে সমগ্র জাতির পক্ষে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন। সকাল ১০টায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর মাজারে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পুষ্পস্তবক অর্পণ। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু ভবন ও টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর মাজার প্রাঙ্গণে সর্বস্তরের মানুষের ঢল নামে। আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে দিনব্যাপী কর্মসূচির মধ্যে ছিল জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল, প্রার্থনা, আলোচনা সভা, শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, জাতির জনকের ওপর প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী, বইমেলা, স্বেচ্ছায় রক্তদান, বিনামূল্যে চিকিৎসা, পুরস্কার বিতরণ, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা প্রভৃতি। বুধবার রাত ১২টা ১ মিনিটে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু এভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কেক কেটে বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকীর কর্মসূচি সূচিত হয়। ভোরে বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। রাষ্ট্র ও সরকারের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল ৭টায় ধানমন্ডি বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় তিনি কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। পরে আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনা দলীয় নেতৃবৃন্দকে সঙ্গে নিয়ে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের ভিতরে যান। সেখানে তিনি কিছু সময় অতিবাহিত করেন। সকাল ১০টায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় যান। সেখানে প্রথমে রাষ্ট্রপতি ও পরে প্রধানমন্ত্রী চিরনিদ্রায় শায়িত জাতির পিতার সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ অর্পণ করেন। পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে কিছুক্ষণ নীরবতা পালন করে তারা বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান। তিন বাহিনীর একটি সুসজ্জিত দল এ সময় সশস্ত্র সালাম জানায়। এ সময় বিউগলে করুণ সুর বেজে ওঠে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী ফাতিহা পাঠ শেষে মোনাজাতে অংশগ্রহণ করেন। এ সময় মন্ত্রিসভার সদস্য, তিন বাহিনীর প্রধান, পরিবারের সদস্য ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। পরে রাষ্ট্রপতি মাজার প্রাঙ্গণে রাখা পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করেন। এরপর সেখানে শিশুসমাবেশ, আলোচনা সভা, গ্রন্থমেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দিবসের তাত্পর্য তুলে ধরে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারসহ বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার এবং সংবাদপত্রগুলোতে বিশেষ ক্রোড়পত্র ও নিবন্ধ প্রকাশ করা হয়। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে দেশের সব সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত বিশেষ সেবাদান কর্মসূচি পালন করা হয়। পাশাপাশি রোগীদের উন্নতমানের খাবার পরিবেশন এবং সব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিনামূল্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসাসেবা, রক্তদান, কর্মসূচি, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতাসহ নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. শহীদ মিলন হলে এক আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খানের সভাপতিত্বে সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম উপস্থিত থেকে বিজয়ীদের মঝে পুরস্কার বিতরণ করেন।

এদিকে জাতীয় প্রেসক্লাবে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) এক আলোচনা সভার আয়োজন করে। ডিইউজের সভাপতি শাবান মাহমুদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরীর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর তথ্যবিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, বিএফইউজে মহাসচিব ওমর ফারুক, সাংবাদিক নেতা আবদুল জলিল ভুইয়া, আজিজুল ইসলাম ভুইয়া, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন প্রমুখ বক্তব্য দেন।

৩২ নম্বরে মানুষের ঢল : গতকাল ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনে জনতার ঢল নামে। সকাল সাড়ে ৬টার আগেই বঙ্গবন্ধু ভবনের আশপাশের এলাকা কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে। বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে উপস্থিত হাজার হাজার নারী-পুরুষের কণ্ঠে উচ্চারিত ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, জামায়াত-শিবির-রাজাকার এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাই দিতে হবে, মুজিবের বাংলায় খুনি খালেদার ঠাঁই নাই’ ইত্যাদি স্লোগানে এলাকার পরিবেশ ছিল মুখরিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনকালে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, দলের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, মাহবুব-উল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক প্রমুখ। যুবলীগ, ছাত্রলীগ, কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা শ্রমিক লীগ, যুবলীগ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, ছাত্রলীগ মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয় কমিটি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি যাদুঘর, তরুণ লীগ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, মত্স্যজীবী লীগ, হকার্স লীগ, তাঁতী লীগ, মুক্তিযোদ্ধা জনতা লীগ, বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগ, ওলামা লীগ, জাতীয় বিদ্যুৎ শ্রমিক লীগ, মুক্তিযোদ্ধা ফাউন্ডেশন, বঙ্গবন্ধু আইন পরিষদসহ অসংখ্য দল ও সংগঠন এবং সর্বস্তরের মানুষ বঙ্গবন্ধুর প্রতৃিকতিতে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করে।

সর্বশেষ খবর