সিলেট নার্সিং কলেজের ছাত্রীনিবাসে ফাটল দেখা দিয়েছে। গত বুধবার রাতের ভূমিকম্পে ছাত্রীনিবাসের চারতলা ভবনের বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দেয়। ভূমিকম্পে ভবনটি কিছুটা দেবেও গেছে। গতকাল থেকে ঝুঁকিপূর্ণ ছাত্রীনিবাস ছাড়তে শুরু করেছেন ছাত্রীরা। সরেজমিন দেখা গেছে, ছাত্রীনিবাসের দেয়াল, কলাম ও ছাদে অসংখ্য ফাটল। ভবন দেবে গিয়ে বারান্দার গ্রিল বাঁকা হয়ে গেছে। ছাত্রীরা কাপড়-চোপড় ও বই-খাতা ব্যাগে ভরে ছাত্রীনিবাস ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। দূরের অনেক অভিভাবক এসেছেন মেয়েকে নিয়ে যেতে। নার্সিং কলেজের স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভানেত্রী হাসনা আলম অমি জানান, ভূমিকম্পের সময় প্রচণ্ড ঝাঁকুনিতে ছাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সবাই বাইরের মাঠে আশ্রয় নেন। ভূমিকম্প থামলে দেখি পুরো ছাত্রীনিবাসে ফাটল। যে কোনো সময় ভবনটি ধসে পড়তে পারে এমন আতঙ্কে ওই রাতেই অনেকে শহরের আত্মীয়স্বজনের বাসায় চলে যান। দূরের ছাত্রীরা গতকাল হল ছেড়ে চলে গেছেন। ছাত্রীনিবাসের ভারপ্রাপ্ত সুপার খন্দকার জুলফা আক্তার জানান, ভবনে ফাটলের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। খবর পেয়ে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুস সবুর মিয়া ছাত্রীনিবাস পরিদর্শন করেছেন। আতঙ্কে ছাত্রীরা হল ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স সিলেটের পরিদর্শক হুমায়ুন কারনাইন বলেন, ‘শুক্রবার আমরা ছাত্রীনিবাসটি পরিদর্শন করে এসেছি। ভবনটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে।’
ধস ঝুঁকি সত্ত্বেও চলছে সিটি সুপার মার্কেট : সিলেট নগরীর প্রাণকেন্দ্র বন্দরবাজারে সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন বিপণি বিতান ‘সিটি সুপার মার্কেট’ চালু রাখা হয়েছে ধসের ঝুঁকি সত্ত্বেও। মার্কেটটির স্থানে স্থানে রয়েছে ফাটল। সামনে ও দেয়ালে সাঁটানো রয়েছে সিটি করপোরেশনের সতর্কবার্তা ‘এই মার্কেটটি ঝুঁকিপূর্ণ, এখানে ব্যবসা করা নিরাপদ নয়।’ প্রায় চার বছর আগে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হলেও এখনো মার্কেটটি ভেঙে ফেলার উদ্যোগ নেয়নি সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। উল্টো মার্কেটের প্রায় ৩৫০ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে ভাড়া আদায় ও ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ব্যবসার বৈধতা দিয়ে যাচ্ছে সিটি করপোরেশন। অবস্থাদৃষ্টে অনেকেরই মনে হচ্ছে, নোটিস টাঙিয়েই ঝুঁকির দায়ভার এড়ানোর চেষ্টা করছে সিসিক কর্তৃপক্ষ। অথচ ভূমিকম্পে ভবনটি ধসে পড়ে প্রাণহানির আশঙ্কা করছেন খোদ নগরভবন সংশ্লিষ্টরাই। সিলেট নগরীর পুরনো মার্কেটগুলোর মধ্যে অন্যতম সিটি সুপার মার্কেট। সিসিকের মালিকানাধীন এ মার্কেটে প্রায় সাড়ে তিনশ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। জরাজীর্ণ হয়ে পড়া মার্কেটটিতে ভূমিকম্পে বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। বর্ষাকালে অল্প বৃষ্টিতে মার্কেটের ভেতর হাঁটু পানি জমে যায়। গত প্রায় চার বছর আগে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মার্কেটটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে ব্যবসায়ীদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ছেড়ে যেতে নোটিস পাঠায়। এই নোটিসে সাড়া দেননি ব্যবসায়ীরা। সিটি করপোরেশনও ঝুঁকির তোয়াক্কা না করে মার্কেট খালি করতে ব্যবসায়ীদের বাধ্য করেনি। ফলে সিসিক-ব্যবসায়ী বোঝাপড়ার মধ্যেই চলছে ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটটিতে ব্যবসা। ব্যবসায়ীরা প্রাণহানির শঙ্কা নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসা, আর সিটি করপোরেশনও আদায় করছে ভাড়া। তবে বড় মাত্রার ভূমিকম্প হলেই নড়েচড়ে বসেন সিসিক কর্তৃপক্ষ। নতুন করে সাঁটানো হয় সর্তকবার্তা। ব্যবসায়ীদের কাছে পাঠানো হয় নোটিস। এরপর উভয় পক্ষই ভুলে যান ঝুঁকির কথা। এ ব্যাপারে সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবীব বলেন, ‘সিটি সুপার মার্কেটটি ঝুঁকিপূর্ণ বলে আমরা সতর্কবার্তা সাঁটানোর পাশাপাশি মার্কেট খালি করার জন্য ব্যবসায়ীদের নোটিস দিয়েছি। কিন্তু ব্যবসায়ীরা মার্কেটটি খালি করছেন না। প্রাণহানির আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও তারা মার্কেটটিতে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। ব্যবসা চালু থাকায় আমরা ভাড়া আদায় করছি।’ তিনি আরও জানান, পুনর্বাসন ছাড়া ব্যবসায়ীরা মার্কেট ছেড়ে যেতে রাজি নয়। ব্যবসায়ীরা মার্কেটটি খালি করে দিলে সেখানে বহুতল মার্কেট করা যেত। তা হলেই তাদের পুনর্বাসন করা সম্ভব হতো। কিন্তু তারা মার্কেট ছেড়ে না যাওয়ায় নতুন করে মার্কেট নির্মাণ করা যাচ্ছে না।