শনিবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

কাপাসিয়ায় হলুদ বাহিনীর মহড়ায় ভোটাররা উদ্বিগ্ন

সরেজমিন

শেখ সফিউদ্দিন জিন্নাহ্, কাপাসিয়া থেকে ফিরে

কাপাসিয়ায় হলুদ বাহিনীর মহড়ায় ভোটাররা উদ্বিগ্ন

আজ তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে গাজীপুরের কাপাসিয়ার ভোটাররা নির্বাচনী উৎসবে মেতে উঠেছেন। উপজেলার পাড়া-মহল্লার আনাচে-কানাচে এখন শুধু নির্বাচনী আলোচনা ছাড়া যেন আর কিছুই নেই। উপজেলা শহরের ছাপাখানাগুলো এখন মহাব্যস্ত নির্বাচনী পোস্টার-হ্যান্ডবিল ছাপা নিয়ে। দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের এই কাপাসিয়ায় এখন আওয়ামী লীগের নৌকার মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে বিদ্রোহী প্রার্থীর আনারস প্রতীক। ১১ ইউনিয়নের ৮টিতেই রয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থী। এদিকে বারিষাব ইউনিয়নে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আরিফ মাহমুদ নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর দিন থেকে ৩ শতাধিক লোকের একটি হলুদ বাহিনী নিয়ে মহড়া দিয়ে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছেন। তার এই বাহিনীর সদস্যরা মাথায় হলুদ টুপি, হলুদ গেঞ্জি পরে পুরো ইউনিয়ন চষে বেড়াচ্ছে। হলুদ বাহিনীর কোনো সদস্যই বারিষাব ইউনিয়ন বা কাপাসিয়া উপজেলার ভোটার নয়। শুধু তাই নয়, উপজেলার তরগাঁও ইউনিয়নে রয়েছে ৩২০ টাকার বাহিনী ঘটনাও। এখানে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী আলী হোসেন চৌধুরী রোকজু (আনারস) সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত জনপ্রতি ৩২০ টাকা দিয়ে ভাড়ায় লোক নিয়ে প্রচারণা করছেন বলে এলাকাবাসী জানায়। এদিকে প্রচারণা শেষ হলেও ভোটারের উদ্বেগ সুষ্ঠু ভোট হবে কিনা। বুধবার এ উপজেলায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। তারপরও কমছে না ভোটারের শঙ্কা। যেখানে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সেখানে টানটান উত্তেজনা। ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা মেম্বার ও মহিলা মেম্বারদের সমর্থনের বিষয়ে মুখ খুললেও চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থনের বিষয়ে কোনোভাবেই মুখ খুলছেন না। এতেই বিপত্তি দেখা দিচ্ছে সরকার সমর্থিত প্রার্থীদের। তারা বেপরোয়া হয়ে উঠছেন নির্বাচনী মাঠ দখলে। হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও সমর্থকদের। কেড়ে নেওয়া হচ্ছে তাদের প্রচারণার মাইক, পোস্টার ও নির্বাচনী কাজে ব্যবহূত অন্যান্য প্রচার সামগ্রী। ইতিমধ্যে হামলার শিকার হয়েছেন সিংহশ্রী ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আশরাফ উদ্দিন আল আমিন, কাপাসিয়া ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম। প্রবল বাধার সম্মুঙ্খীন হয়েছেন চাঁদপুর ইউনিয়নে বিএনপি প্রার্থী নজরুল ইসলাম, সনমানিয়া ইউনিয়নে সিরাজ উদ্দিন, কড়িহাতা ইউনিয়নে অ্যাডভোকেট আসলাম, রায়েদ ইউনিয়নে ওয়াজ উদ্দিন মোল্লা, কাপাসিয়া ইউনিয়নে বিএনপি প্রার্থী আজগর হোসেন খান। প্রার্থীরা বারবার রিটার্নিং অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ করলেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে প্রতিটি ইউনিয়নেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির এবং ৭টিতে জাতীয় পার্টির প্রার্থী রয়েছেন। তবে আওয়ামী লীগের রয়েছেন ৬ বিদ্রোহী প্রার্থী। অপরদিকে বিএনপির দুজন শক্তিশালী বিদ্রোহী প্রার্থী। বিগত নির্বাচনে বিএনপি ৬টিতে এবং আওয়ামী লীগ ৫টিতে জিতেছিল। এবার চিত্রটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। বিভিন্নভাবে হুমকি, ভীতি ও অজানা শঙ্কার কারণে কোথাও এবার বিএনপির নেতা-কর্মীদের মাঠে প্রার্থীদের পক্ষে সক্রিয় থাকতে দেখা যাচ্ছে না। অপরদিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের প্রচারণায় তৃণমূলে রয়েছে বিশাল কর্মীবাহিনী। উপজেলার সনমানিয়া, চাঁদপুর, তরগাঁও, ঘাগুটিয়া, দুর্গাপুর ইউনিয়নে বিএনপির প্রার্থীরা বাধা ও হুমকির সম্মুখীন হচ্ছেন বলে আ স ম হান্নান শাহ সংবাদ সম্মেলন করে সরকারি দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, সনমানিয়া ইউনিয়নে ২নং ওয়ার্ডে সাধারণ সদস্য পদে খলিলুর রহমান মোল্লা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।  কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আনিসুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কাপাসিয়ায় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে দেওয়া হবে না।

সর্বশেষ খবর