মঙ্গলবার, ২৪ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

রাডারেই ২৩ কোটি টাকা আত্মসাৎ

শাহজালালে দুর্নীতি অনুসন্ধানে দুদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পুরনো রাডার মেরামতের নামে ২৩ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের তীর বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ— সিভিল এভিয়েশন অথরিটি বাংলাদেশ (সিএএবি)-এর কয়েকজন কর্মকর্তার দিকে। অভিযোগ রয়েছে, এই কর্মকর্তারা ভুয়া প্রস্তাবের মাধ্যমে ‘অ্যারোনেস’ নামের একটি বাজারমূল্যের চেয়ে ৬ গুণ বেশি দামে ২৩ কোটি টাকার মেরামতকাজ পাইয়ে দেওয়ার অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। সিভিল এভিয়েশনের রাডার আপগ্রেডেশন-বিষয়ক কমিটি বর্তমান রাডারটি পরিবর্তন করে নতুন রাডার স্থাপনের পক্ষে মত দিয়েছে। সিভিল এভিয়েশনের প্রতিবেদনেই আছে যে, বর্তমানে এর প্রাইমারি অংশটি কাজ করে না। চার বছর আগে সর্বশেষ রাডার মেরামত করা হয়। মেরামতের পর আয়ুষ্কাল থাকে কমপক্ষে ১০ বছর। কিন্তু একটি চক্র নির্ধারিত সময়ের আগেই ফের মেরামতের নামে অর্থ আত্মসাতের ফন্দি চালাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া সেকেন্ডারি রাডার শুধু বর্তমানে একটি প্রসেসর দিয়ে চালানো হচ্ছে। দীর্ঘক্ষণ চলার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলার কারণে টানা ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টার বেশি রাডারটি কার্যকর রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থায় ২৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া চক্রটি এখন আবার রাডার মেরামত করার জন্য দরপত্র আহ্বানের চেষ্টা করছে। দুদকের তদন্তসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ‘অভিযোগটি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে দুদক। অভিযোগসংশ্লিষ্ট নথিপত্র গত বৃহস্পতিবার তলব করা হয়। নথিপত্র হাতে পেলে সিভিল এভিয়েশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করব।’ জানতে চাইলে দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণবকুমার ভট্টাচার্য্য বলেন, চার বছর আগের আর্থিক অভিযোগ আমলে নিয়ে অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক। এরই মধ্যে দুদক উপ-পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহকে অনুসন্ধান কর্মকর্তা ও এ কে এম জায়েদ হোসেন খানকে তদারক কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগের বিষয়ে দুদক তদন্ত সূত্র জানায়, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এয়ার ট্রাফিক সার্ভিল্যান্স সার্ভিসের জন্য স্থাপিত সিভিল এভিয়েশনের রাডারব্যবস্থা প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি রাডার সমন্বয়ে গঠিত। ফরাসি সরকারের অনুদানে ১৯৮৪ সালে প্রাইমারি রাডার এবং ১৯৮৬ সালে সেকেন্ডারি রাডার (১০ বছর আয়ুষ্কালসম্পন্ন) স্থাপনে মোট ১৭ কোটি ৬৩ লাখ ৩৬ হাজার টাকা ব্যয় হয়। স্থাপনের সময় এর অ্যান্টেনার ঘূর্ণন ছিল প্রতি মিনিটে ১৫ বার। যন্ত্রাংশ পুরনো হওয়ায় এটি চলমান রাখার স্বার্থে এর ঘূর্ণন সংখ্যা কমিয়ে বর্তমানে প্রতি মিনিটে সাতবার করা হয়েছে। সিভিল এভিয়েশনের রাডারের অবস্থা নিরূপণসংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাডারটির অধিকাংশ খুচরা যন্ত্রাংশ ব্যবহার ও মেরামত-অযোগ্য। বর্তমান রাডারটি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান থ্যালাস বহু আগেই যন্ত্রাংশ তৈরি বন্ধ করে দিয়েছে।

দুদকে আসা অভিযোগে আরও জানা যায়, ১৯৮৭ সালে ৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকা, ১৯৯৪ সালে ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা ও ২০০৮ সালে ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে রাডারের সম্পূর্ণ সিস্টেমে আপগ্রেড করা হয়েছে। এর পরও ৩০ বছরের পুরনো মডেলের রাডারটির ঘূর্ণন বাড়ানো ও প্রাইমারি অংশটি সম্পূর্ণ ব্যবহারযোগ্য করা এবং পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। মেরামতের নামে সিভিল এভিয়েশনের একটি চক্র কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ায় প্রকল্প তৈরি করেছে। জানা যায়, পিপিআর-২০০৮ অনুযায়ী কোনো নতুন যন্ত্রাংশ অবশ্যই বাজার যাচাই এবং সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার মাধ্যমে কেনার বিধান রয়েছে। কিন্তু সিএএবির চক্রটি সেই বিধান না মেনে মেসার্স অ্যারোনেস নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে থ্যালাসের স্থানীয় প্রতিনিধি দেখিয়ে কাজটি দেওয়ার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করে।

সর্বশেষ খবর