সোমবার, ৬ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

ড্রয়িংরুমে বন্দী রাজনীতি

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

ড্রয়িংরুমে বন্দী রাজনীতি

রাজনীতিতে সব সময়ই সরব ও সক্রিয় আধ্যাত্মিক নগরী সিলেট। দেশের প্রধান সবকটি রাজনৈতিক দলেরই কার্যক্রম রয়েছে সিলেটে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচি থেকে শুরু করে স্থানীয় ছোটখাটো কর্মসূচিতে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা-কর্মীরা। কিন্তু নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে সভা-বৈঠক ও আলোচনার জন্য প্রধান যে প্লাটফর্ম ‘পার্টি অফিস’ তথা কার্যালয় দরকার, সিলেটে সেই প্লাটফর্ম নেই কোনো দলেরই। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি— এসব বড় দলের কারোরই নেই কার্যালয়। শীর্ষ নেতাদের ড্রয়িংরুমে হয় দলগুলোর বৈঠক, সভা। কার্যালয় না থাকায় নেতাদের ড্রয়িংরুমে বন্দী হয়ে পড়েছে সিলেটের রাজনীতি। দেশের প্রধানতম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। স্বাধীনতার আগে দলটির কার্যালয় ছিল সিলেটে। কিন্তু স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকে এখন পর্যন্ত সিলেটে দলটির কোনো স্থায়ী কার্যালয় নেই। গ্রেনেড হামলায় নিহত মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ইব্রাহিম আলীর নামে গড়ে ওঠা ‘ইব্রাহিম স্মৃতি সংসদ’-এ বর্তমানে সিলেট আওয়ামী লীগের ছোটখাটো সভা হয়ে থাকে। তবে দলটির সিংহভাগ পরিকল্পনা সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী ও মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের ড্রয়িংরুমে অনুষ্ঠিত হয়।

এদিকে দেশের আরেক বড় রাজনৈতিক দল বিএনপিরও কোনো কার্যালয় নেই সিলেটে। দলটির বিভিন্ন সভা, গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক জেলা বিএনপি সভাপতি আবুল কাহের শামীম ও মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিমের ড্রয়িংরুমে হয়ে থাকে। স্থায়ী কোনো কার্যালয় না থাকায় দলটির নেতা-কর্মীরা ছন্নছাড়া।

এদিকে সিলেটে জাতীয় পার্টির অফিস ছিল ধোপাদিঘীর উত্তর পাড়ে। দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য আতিকুর রহমান আতিক নিজের দ্বিতল বাসার নিচতলা পার্টি অফিসের জন্য ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে আতিক কাজী জাফরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টিতে চলে যান। ওই সময় থেকে তার বাসার নিচতলার পার্টি অফিসের সাইনবোর্ড খুলে ফেলা হয়। সম্প্রতি নগরীর সুরমা মার্কেটে জেলা জাপার আহ্বায়ক আবদুল্লাহ সিদ্দিকী ও সদস্য সচিব ওসমান আলী একটি কার্যালয় নিলেও বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় ওই কার্যালয়ে কোনো তত্পরতা নেই। বর্তমানে জাতীয় সংসদের হুইপ সেলিম উদ্দিন ও জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক আবদুল্লাহ সিদ্দিকীর বাসায় দলটির বৈঠক-সভা অনুষ্ঠিত হয়। দলীয় নির্দিষ্ট কার্যালয় না থাকায় সিলেটে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা-কর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ছেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। যার ফলে একদিকে নেতা-কর্মীদের মধ্যে গ্রুপিং রাজনীতির বিস্তার ঘটছে, অন্যদিকে বাড়ছে সংঘাত-সংঘর্ষও।

এ ব্যাপারে সিলেট জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক আবদুল্লাহ সিদ্দিকী বলেন, ‘দলীয় কার্যালয় থাকলেও সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় নেতা-কর্মীরা যান না। কার্যালয়ে বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থার চেষ্টা চলছে।’

সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের শামীম বলেন, ‘কাউন্সিলের মাধ্যমে আমি জেলা বিএনপির সভাপতি হওয়ার পর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দলীয় কার্যালয়ের প্রতি দৃষ্টি দিয়েছি। শিগগিরই কার্যালয়ের ব্যবস্থা হয়ে যাবে।’ সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান বলেন, ‘দলীয় কার্যালয়ের জন্য কেউ ভবন বা বাসা ভাড়া দিতে চান না। এ জন্য বর্তমানে ইব্রাহিম স্মৃতি সংসদে দলীয় কার্যক্রম চলছে। তবে কার্যালয় নেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।’

সর্বশেষ খবর