বুধবার, ৮ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

রাজধানীতে বেড়েছে অজ্ঞান মলম পার্টির তত্পরতা

কেউ প্রাণ হারাচ্ছেন অনেকেই ফিরতে পারছেন না স্বাভাবিক জীবনে

আলী আজম

রাজধানীতে রোজা ও ঈদকে সামনে রেখে অজ্ঞান ও মলম পার্টির তত্পরতা বেড়েছে। বাস-লঞ্চ-ট্রেন টার্মিনালসহ জনাকীর্ণ স্থানে হকার সেজে বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য বিক্রি করছে তারা। আর এসব খাদ্যদ্রব্যের সঙ্গে মিশিয়ে দিচ্ছে চেতনানাশক ওষুধ। ফলে এগুলো ক্রয় করে কেউ খেলেই তাদের মাশুল দিতে হচ্ছে। কখনো কখনো চেতনানাশক ওষুধের মাত্রা বেশি পড়ায় ভিকটিম মারা যাচ্ছে। কেউবা স্বাভাবিক জীবনে আর ফিরতেই পারছে না। এভাবেই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে অজ্ঞান ও মলম পার্টির সদস্যরা। একের পর এক তালিকা করেও তাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। হাতে গোনা কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হলেও আদালত থেকে জামিন নিয়ে আবার একই কাজে জড়িয়ে পড়ছে। ফলে ক্রমেই অপ্রতিরোধ্য হচ্ছে অজ্ঞান ও মলম পার্টির সদস্যরা। বাস, লঞ্চ ও রেলস্টেশনসহ গুরুত্বপূর্ণ ৪০টি পয়েন্টে অজ্ঞানপার্টির শতাধিক গ্রুপ সক্রিয়। অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা সহজ-সরল মানুষকে লক্ষ্য করে ফেরিওয়ালা সেজে জুস, ডাবের পানি, খেজুর, ঝাল মুড়ি, শরবতসহ নানা উপকরণ বিক্রি করছে। আর প্রতারিত মানুষেরা সর্বস্ব হারানোর পাশাপাশি জীবন হারানোর মতো ঝুঁকিতে পড়ছেন।

প্রতিদিন গড়ে ১০ জন মানুষ অজ্ঞান ও মলম পার্টির খপ্পরে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে অপরিচিত কারও দেওয়া খাবার না খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পাশাপাশি নিয়মিত অভিযান চালিয়ে তারা অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের গ্রেফতার করছে বলেও দাবি করেছে। গতকাল রোজার প্রথম দিনই অজ্ঞান ও মলম পার্টির ১০ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এর আগে ৩১ মে গাবতলী বাস টার্মিনাল ও ভাটারা থেকে অজ্ঞান ও মলম পার্টির ৮ সদস্যকে চেতনানাশক ওষুধসহ আটক করে ডিবি। পরে আটকরা দোষ স্বীকার করায় বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, রোজা ও ঈদকে টার্গেট করে ১০/১২টি অজ্ঞান ও মলম পার্টির চক্র সক্রিয় রয়েছে। তাদের সদস্য সংখ্যা অন্তত ১০০। তারা যাত্রী ও হকার বেসে যাত্রীদের অজ্ঞান করে সবকিছু হাতিয়ে নেয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতি বছরই ঈদকে টার্গেট করে রমজানের শুরুতেই তত্পর হয়ে ওঠে অজ্ঞান ও মলম পার্টি। তারা নানা ছদ্মবেশে বাস-ট্রেন-লঞ্চ এবং জনসমাগম পূর্ণ স্থানে অবস্থান করে। সাধারণ ফেরিওয়ালাদের সঙ্গে মিশে তারা ইফতার সামগ্রীসহ বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য বিক্রি করে। যাত্রীদের মধ্যে তারা সাধারণত টার্গেটকৃত ব্যক্তির কাছে চেতনানাশক ওষুধ মেশানো খাবার বিক্রি করে। এসব খাবার খেয়ে অচেতন হয়ে পড়লে চক্রের সদস্যরা টার্গেটকৃত ব্যক্তির সর্বস্ব কেড়ে নেয়।

রাজধানীর গাবতলী, সায়েদাবাদ, মহাখালী, সদরঘাট, গুলিস্তানসহ বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড ও কমলাপুর রেলস্টেশনে এবং সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে অজ্ঞান ও মলম পার্টির সদস্যদের তত্পরতা সবচেয়ে বেশি। তারা সাধারণত তিনটি গ্রুপে ভাগ হয়ে কাজ করে। একটি গ্রুপ ফেরি করে খাবার বিক্রি করে। আরেক গ্রুপ উদ্ধারকর্মী হিসেবে আশপাশেই ঘোরাঘুরি করে। তৃতীয় গ্রুপ রিকশা বা সিএনজি নিয়ে বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বসে থাকে।

টার্গেট ব্যক্তি অচেতন হয়ে পড়লে পরিচিত সহযাত্রী অথবা কাছের আত্মীয় হিসেবে দ্বিতীয় গ্রুপের সদস্যরা এগিয়ে যায়। অচেতন ব্যক্তিকে হাসপাতালে নেওয়ার নাম করে তারা নিজেদের (তৃতীয় গ্রুপ) যানবাহনে তোলে। এরপর সুযোগ বুঝে টাকা-পয়সা ও মূল্যবান জিনিসপত্র হাতিয়ে নিয়ে অচেতন ব্যক্তিকে রাস্তায় ফেলে চলে যায়। কখনো হাসপাতালেও ভর্তি করে। অনেক ক্ষেত্রে প্রথম গ্রুপ অর্থাত্ ফেরিওয়ালাই অচেতন ব্যক্তির সর্বস্ব হাতিয়ে নিয়ে সটকে পড়ে।

ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে যুগ্ম-কমিশনার (ডিবি) আবদুল বাতেন বলেন, গতকাল সকালে যাত্রাবাড়ী বাস স্ট্যান্ড থেকে অজ্ঞান ও মলম পার্টির ১০ সদস্যকে আটক করা হয়েছে। তারা হলেন, সোহেল, ইসমাইল হোসেন, শাকিল রানা, ওমর ফারুক, আবদুল খালেক, নান্নু শেখ, বাদশা, বিল্লাল হোসেন, নজরুল ইসলাম ও মাহবুব শেখ। তাদের কাছ থেকে চেতনানাশক ওষুধসহ অজ্ঞান করার সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়। পরে আটকরা দোষ স্বীকার করায় বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত।

তিনি বলেন, ঈদকে সামনে রেখে অজ্ঞান ও মলম পার্টির সদস্যরা তত্পর হয়ে উঠেছে। তারা নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে টার্গেট করে। এরপর কৌশলে অজ্ঞান করার ওষুধ মেশানো খাবার খাইয়ে দেয়। অনেক ক্ষেত্রে ফুটপাথের চা বিক্রেতাসহ ছোট দোকানদাররাও তাদের দলের সদস্য। কৌশলে চা কিংবা অন্য কোনো খাবারের সঙ্গে অচেতন করার ওষুধ মিশিয়ে সহজ-সরল মানুকে সর্বস্বান্ত করছে।

র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার উপ-পরিচালক মেজর হুসাইন রইসুল আজম মনি বলেন, অজ্ঞান ও মলম পার্টির সদস্যদের গ্রেফতারে র্যাব নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে তাদের বেশকিছু সদস্যকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। যানবাহনের যাত্রী বা পথচারীদের উচিত অপরিচিত কারও দেওয়া কিছু না খাওয়া।

সর্বশেষ খবর