লালবাগ কেল্লার নামানুসারে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে লালবাগ থানা এলাকা। মুঘল আমলের বাংলাদেশের একমাত্র ঐতিহাসিক নিদর্শন এখানে, যাতে একই সঙ্গে ব্যবহার করা হয়েছে কষ্টিপাথর, মার্বেলপাথর আর রংবেরঙের টালি। লালবাগ কেল্লা ছাড়া বাংলাদেশের আর কোনো ঐতিহাসিক নিদর্শনে এমন কিছুর সংমিশ্রণ পাওয়া যায়নি আজ পর্যন্ত। প্রথমে এ কেল্লার নাম ছিল কেল্লা আওরঙ্গবাদ। আর এ কেল্লার নকশা করেন শাহ আজম। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২৩, ২৪, ২৫, ২৬ ও ২৭ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত হয়েছে লালবাগ থানা এলাকা। ললিতমোহন দাস লেন, জগন্নাথ সাহা রোড, কাজী রিয়াজউদ্দিন রোড, ঢাকেশ্বরী রোড, হোসনি দালান রোড, জে এন সাহা রোড, শায়েস্তাখান রোড, ওয়াটার ওয়ার্কার্স রোড, শহীদনগর, নবাবগঞ্জ ও আজিমপুর নিয়ে সমাদৃত এ অঞ্চল। জানা গেছে, যেখানে-সেখানে ময়লা ও আবর্জনার কনটেইনার, মশার উপদ্রব, তীব্র যানজট, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানিসহ বিভিন্ন সমস্যায় অতিষ্ঠ লালবাগ থানা এলাকার বাসিন্দারা। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি থাকার পরও সমাধান হচ্ছে না এসব সমস্যার। আজিমপুর সরকারি কলোনি এলাকার রাস্তা রাতে ঘুটঘুটে অন্ধকার থাকে। সড়কবাতি জ্বলে না। বৃষ্টি হলেই রসুলবাগ রাস্তায় জমে পানি। আজিমপুর মডেল স্কুলের সামনে ময়লার স্তূপের নিত্য দৃশ্য। দেখার কেউ নেই। আজিমপুর কবরস্থানের সামনে থেকে শুরু করে বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত লেগেই থাকে তীব্র যানজট। প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়ায় এলাকায় চলছে মাদক ব্যবসা। লালবাগ থানার আমলীগোলা পুষ্প সাহা পুকুরপাড়ে সরকারি জায়গা দখল করে বারেক নামের এক সন্ত্রাসী। এরপর সেখানে সে তারেক ও সুমনসহ কয়েকজনকে দিয়ে মদ, গাঁজা, ইয়াবার ফ্রিস্টাইল ব্যবসা শুরু করে। ১৪ মে লালবাগ থানা পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে। এ সময় তার কাছ থেকে ২২২ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।
এ ছাড়া আজিমপুর ছাপরা মসজিদের পাশের রাস্তা দখল করে নিয়মিত বাজার বসে। ফলে তীব্র যানজট লেগে থাকে। মানুষকে যাতায়াতে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। অভিযোগ পাওয়া যায়—ইসলামবাগ পোস্তা, লালবাগ কেল্লার মোড়, খেয়াঘাট ও কামালবাগ এলাকাসহ অলিগলিতে গড়ে উঠেছে প্লাস্টিক, স্টিলসহ বিভিন্ন ছোট-বড় কারখানা। এর বেশির ভাগ কারখানায় বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়েছে অবৈধভাবে।
এলাকাবাসী জানান, অধিক জনসংখ্যায় এমনিতেই গ্যাসের চাপ কম। এর পরও তিতাস গ্যাসের একটি সিন্ডিকেট লাখ লাখ টাকার ঘুষের বিনিময়ে অবৈধভাবে সংযোগ দিচ্ছে।সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, পোস্তার সিটি ব্যাংক মোড় থেকে ইসলামবাগ ঈদগাহ মাঠ পর্যন্ত ওয়াটার ওয়ার্কার্স রোডে গড়ে তোলা হয়েছে বড় বড় কাঁচা চামড়ার গোডাউন। আবাসিক এলাকায় এ ধরনের চামড়ার গোডাউন থাকায় আশপাশের পরিবেশ দূষিত হচ্ছে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। এখানকার অলিগলিগুলোও নিচু মাটিতে হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে লেগে যায় চরম জলাবদ্ধতা। আজিমপুর শাহি মাজার থেকে নীলক্ষেত মোড় পর্যন্ত মূল সড়কের ওপর উন্মুক্ত পরিবেশে রাখা হয়েছে ময়লার কনটেইনার। একই সড়কে গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থাও অনিয়ন্ত্রিত, যে কারণে সৃষ্টি হয় যানজটের। আজিমপুর সরকারি কলোনির ফটকগুলোতে যেমন গড়ে উঠেছে ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়, তেমনি রিকশা-ভ্যানের অবৈধ গ্যারেজ। জানা গেছে, এসব রিকশা-ভ্যানের গ্যারেজ ক্ষমতাসীন প্রভাবশালীরা নিয়ন্ত্রণ করেন। স্থানীয়রা জানান, ইসলামবাগের ঈদগাহ মাঠে অবৈধভাবে বসানো হয়েছে নিত্যপণ্যের বাজার। আর এ বাজার নিয়ন্ত্রণ করেন স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাজী মো. দেলোয়ার হোসেন। এসব বিষয়ে জানতে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
জানা গেছে, বকশীবাজার বোর্ড অফিস এলাকার সড়কটি ভেঙে বেহাল হয়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে। ইট, বালি আর খোয়ায় ভরে গেছে রাস্তার অর্ধেক অংশ। এতে যান চলাচলে ঘটছে বিপত্তি। জে এন সাহা রোডের কেল্লার মোড়ে যত্রতত্র টেম্পো পার্কিংয়ের কারণে সাধারণ মানুষের চলাচলে পোহাতে হয় চরম দুর্ভোগ।
অভিযোগ পাওয়া যায়, আজিমপুর সরকারি কলোনির সব ময়লা-আবর্জনার কনটেইনার বাইরের মূল সড়কে ফেলে রাখা হয়। ভিতরের সরকারি পরিত্যক্ত জায়গায় আবর্জনার কনটেইনার রাখার ব্যবস্থা সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে গ্রহণ করা হলেও পিডব্লিউডির নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলামের স্বেচ্ছাচারিতায় তা সম্ভব হয়নি। এমনকি কলোনিতে পূর্বাঞ্চল, পশ্চিমাঞ্চল, উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চল জোনে ভাগ করে বিভিন্ন কমিটি গঠন করা হয়েছে। নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলামের ছত্রচ্ছায়ায় এসব কমিটির নেতারা কলোনির সরকারি পরিত্যক্ত জায়গায় অবৈধভাবে দোকান বসিয়ে ভাগ-বাটোয়ারা করে খাচ্ছেন। কলোনির মধ্যে থাকা একমাত্র কমিউনিটি সেন্টারটির ব্যবস্থাপনাতে নেই কোনো স্বচ্ছ হিসাব-নিকাশ। এমন অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘এলাকার ময়লা-আবর্জনা দূর করে পরিচ্ছন্ন নগরী গড়তে আমরা দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছি। চুরি-ছিনতাই ঠেকাতে সিসি ক্যামেরাও বসানো হয়েছে।’