বৃহস্পতিবার, ১৬ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

৯ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি নিয়ে তোলপাড়

বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেলে ঠিকাদার ও পরিচালকের সখ্য

রাহাত খান, বরিশাল

বাতিল হওয়া টেন্ডারের ৯ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি গ্রহণ নিয়ে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তোলপাড় চলছে। এক বছর আগে চীনের তৈরি ওই যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হলেও টেন্ডার বাতিল হয়ে যাওয়ায় এতদিন সেগুলো বাক্সবন্দী ছিল। সোমবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের লাইন ডিরেক্টরের চিঠির দোহাই দিয়ে এসব যন্ত্রপাতি তড়িঘড়ি বিভিন্ন ওয়ার্ডে পাঠানো নিয়ে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এদিকে, বাতিল হওয়া দুটি টেন্ডারের যন্ত্রপাতি কীভাবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের লাইন ডিরেক্টর স্থাপনের অনুমতি দিয়েছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে হাসপাতালের বর্তমান পরিচালক ডা. এস এম সিরাজুল ইসলাম বলেন, টেন্ডার দুটি বাতিল হওয়ার খবর তিনি জানতেন না। এমনকি যিনি যন্ত্রপাতিগুলো স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন, তিনিও (লাইন ডিরেক্টর) পুরো বিষয়টি অবহিত ছিলেন না। এ অবস্থায় স্বাস্থ্য সচিবের কাছে চিঠি লিখে সমাধান চাওয়া হবে। সে আলোকে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান পরিচালক। জানা যায়, শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীর সেবার মান বাড়াতে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৫২ ধরনের ভারী ও কিছু আইসিইউ যন্ত্রপাতি কেনার প্রশাসনিক অনুমোদন চাওয়া হয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে।

এদিকে, প্রশাসনিক অনুমোদন এবং বরাদ্দ পাওয়ার আগেই তৎকালীন পরিচালক ডা. কামরুল হাসান সেলিম ১৩০ কোটি ৯৬ লাখ ৮০ হাজার ৬০০ টাকার ভারী যন্ত্রপাতি এবং ৬ কোটি ৭৩ লাখ ৪১ হাজার ৭৭০ টাকার আইসিইউ যন্ত্রপাতি কিনতে দুটি দরপত্র ডাকেন। এসব টেন্ডার প্রশাসনিক অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে। হাসপাতালের একটি সূত্র জানায়, হাসপাতাল পরিচালক সর্বোচ্চ ৫০ কোটি টাকার দরপত্র ডাকতে পারেন। কিন্তু ডা. কামরুল হাসান সেলিম নিয়মবহির্ভূতভাবে ১৩১ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনার টেন্ডার ডাকায় তাকে ওএসডি করা হয়। পাশাপাশি টেন্ডার দুটি বাতিল করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এ অবস্থায় অন্যরা যন্ত্রপাতি সরবরাহ থেকে বিরত থাকলেও প্রভাবশালী  ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল সাইন্টিফিক অ্যান্ড সার্জিক্যাল কোং শেরেবাংলা মেডিকেলে একটি ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন, দুটি অটোক্লেপ, ১০টি আইসিইউ বেড ও দুটি কালার ডুপ্লেক্স আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিনসহ ৯ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে। কিন্তু তৎকালীন পরিচালক ওই মালামাল গ্রহণ না করায় সেগুলো হাসপাতালের মাঝ ব্লকে ফেলে রাখে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ঘটনাচক্রে পরিচালক অধ্যাপক ডা. নিজামউদ্দিন ফারুক কর্মচারী নিয়োগে দুর্নীতির দায়ে সাময়িক বরখাস্ত হলে নতুন পরিচালকের দায়িত্ব নেন ডা. এস এম সিরাজুল ইসলাম। তিনি যোগদানের পরই হাসপাতাল থেকে ওই যন্ত্রপাতি সরিয়ে নিতে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে চিঠি দেন। এ চিঠি দেওয়ার সূত্র ধরেই নতুন পরিচালকের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন ঠিকাদার। এক পর্যায়ে তিনিই ওই ফেলে রাখা যন্ত্রপাতিগুলোর বৈধতা দেওয়ার জন্য নানা ফন্দি করেন। তিনি হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডের বিভাগীয় প্রধানের সঙ্গে সভা করে হাসপাতালে এসব যন্ত্রপাতি জরুরি বলে স্বাস্থ্য অধিদফতরে চিঠি দেন। এ চিঠির সূত্র ধরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের লাইন ডিরেক্টরকে চিঠি দিয়ে এসব যন্ত্রপাতি স্থাপনের নির্দেশ দেয়। সূত্র জানায়, শেরেবাংলা মেডিকেল সরাসরি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হয়। এ অবস্থায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বাতিল করা টেন্ডারের মালামাল স্বাস্থ্য অধিদফতর হাসপাতালে স্থাপনের নির্দেশ দিতে পারে না। অথচ স্বাস্থ্য অধিদফতরের লাইন ডিরেক্টরের নামমাত্র চিঠির বলে বাতিল হওয়া টেন্ডারের ওইসব যন্ত্রপাতি নিয়মবহির্ভূতভাবে স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছেন বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেলের পরিচালক। একে বড় ধরনের অনিয়ম হিসেবে অভিহিত করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

সর্বশেষ খবর