রবিবার, ১০ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

স্বাস্থ্য পরীক্ষার নামে পুলিশে অর্থ আদায়

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

স্বাস্থ্য পরীক্ষার নামে পুলিশে অর্থ আদায়

রাজশাহীতে পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর পদে (উপ-পরিদর্শক) নিয়োগে স্বাস্থ্য পরীক্ষার নামে বিধিবর্হিভূতভাবে অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। হয়রানি এবং চাকরি নিশ্চিত করার জন্য চাকরিপ্রত্যাশীরা মুখ না খুললেও এ ঘটনায় তাদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে।

জানা গেছে, গতকাল সকাল ৯টা থেকে জেলা পুলিশ রিজার্ভ কার্যালয়ে উপ-পরিদর্শক পদে নিয়োগের জন্য স্বাস্থ্য পরীক্ষার কার্যক্রম শুরু হয়। এ সময় ওই কার্যালয়ে রাজশাহী অঞ্চলের ১০৯ জন পুরুষ ও ৫ জন নারীসহ চাকরিপ্রত্যাশীরা উপস্থিত হন। এরপর তাদের কাছ থেকে বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালের হিসাবরক্ষক শায়মুল ইসলাম ও কম্পিউটার অপারেটর রবিউল ইসলাম হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. নজরুল ইসলামের নামে চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছে দুই হাজার টাকা করে দাবি করেন। চাকরিপ্রত্যাশীরা হয়রানি এড়াতে এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষা রিপোর্ট পজিটিভ করার জন্য দুই হাজার টাকা করে দিতে বাধ্য হন। এভাবে চাকরিপ্রত্যাশীদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে বিভাগীয় স্বাস্থ্য হাসপাতালের ওই দুই কর্মচারী দুই লাখ ২৮ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজশাহীর বাগামারা অঞ্চলের একজন চাকরিপ্রত্যাশী বলেন, স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সরকারি বিধি অনুযায়ী কোনো ফি বা টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই। কিন্তু সকালে জেলা পুলিশ রিজার্ভ কার্যালয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষার কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালের দুই কর্মচারী তাদের কাছে দুই হাজার টাকা করে দাবি করেন। তারা হয়রানি এড়াতে টাকা দিতে বাধ্য হন।

চাকরিপ্রত্যাশী আরেক প্রার্থী বলেন, সব প্রক্রিয়া শেষে এখন তারা চাকরি পাওয়ার দ্বারপ্রান্তে। এসব প্রক্রিয়া শেষ করতে ইতিমধ্যে তাদের প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে। স্বাস্থ্য রিপোর্টের ক্ষেত্রে সাধারণত তিনটি পরীক্ষা করতে হয়। এর মধ্যে রয়েছে- রক্ত, ইসিজি ও এক্সরে। এখানে দুই হাজার টাকা দেওয়ার পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদের নগরীর লক্ষ্মীপুর এলাকার পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠাচ্ছেন। সেখানেও তিন হাজার টাকা দিতে হয়েছে। ফলে স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়ার জন্য তাদের পাঁচ হাজার টাকা খরচ করতে হচ্ছে। এদিকে রেঞ্জ রিজার্ভ পুলিশের একজন সিনিয়র এএসপি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমার এক নিকটাত্মীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সংশ্লিষ্টদের দুই হাজার টাকা দিতে বাধ্য হয়েছেন। আমি এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছি। কিন্তু বিষয়টি সংশ্লিষ্টরা আমলে নেয়নি। আমি এ ধরনের দুর্নীতির বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।’ বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, ইতিপূর্বে ওষুধ দুর্নীতি ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা রিপোর্টের নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের কারণে আগের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হুমায়ন কবীরসহ বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালের পাঁচ কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ডা. হুমায়নকে সারদা পুলিশ অ্যাকাডেমিতে বদলি করা হয়। এরপর ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে দায়িত্ব নেন ডা. নজরুল ইসলাম। অভিযোগ আছে, এর আগে পুলিশ কনস্টেবল পদে ১২৫ চাকরিপ্রত্যাশীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার নামে ডা. নজরুল আড়াই লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। অর্থ আদায়ের অভিযোগের ব্যাপারে বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালের কম্পিউটার অপারেটর রবিউল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘এ ধরনের অভিযোগ ঠিক না। আমরা সরকারি বিধি অনুযায়ী নিয়মতান্ত্রিকভাবেই সব কার্যক্রম পরিচালনা করেছি।’ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি আমার অধঃস্তনদের টাকা নেওয়ার জন্য নিষেধ করেছি। আমি কাজে স্বচ্ছতা পছন্দ করি। এরপরও আমার নামে যদি অর্থ আদায় করা হয় তবে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেব।’

সর্বশেষ খবর