রবিবার, ১৭ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

উত্তরায় লিফট ছিঁড়ে নয় গ্যাস বিস্ফোরণে আগুন

আলী আজম

রাজধানীর উত্তরার ট্রপিক্যাল আলাউদ্দিন টাওয়ার শপিং কমপ্লেক্সে লিফট ছিঁড়ে নয়, বরং গ্যাস বিস্ফোরণে আগুনের ঘটনা ঘটেছে। এতে ঘটনাস্থলে ছয়জনের মৃত্যু হয়। যারা আহত হয়েছিলেন তারা বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হন। এদের মধ্যে দগ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একই পরিবারের তিনজন মারা যান। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াল নয়-এ। গতকাল ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করে। এদিকে, গতকাল ভোরে ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুর্ঘটনায় দগ্ধ শিশু মোমতাকিন হাসান (৮ মাস) মারা যায়। সে টানা ২২ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছিল। এর আগে মোমতাকিনের বাবা মাহমুদুল হাসান (৩৬) এবং বোন মেহনাজ হাসান মাইশা (১০) না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। বার্ন ইউনিটের আবাসিক চিকিৎসক পার্থ শংকর পাল বলেন, আগুনে মোমতাকিনের শরীরের ২৩ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। মৃতদের গ্রামের বাড়ি বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে। তারা উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরে থাকতেন। ফায়ার সার্ভিস সূত্র বলছে, গত ২৫ জুন আলাউদ্দিন টাওয়ারের বেজমেন্টে অবস্থিত ট্রপিক্যাল হোমসের ডিজিএম মাহমুদুল হাসান এক ইফতার পার্টির আয়োজন করেন। সেখানে তার মেয়ে মেহনাজ হাসান মাইশা ও ছেলে মোমতাকিন হাসানসহ অফিসের সহকর্মী এবং তাদের পরিবার ছিল। মেয়ে মাইশা গরম লাগছে বলে বাবা মাহমুদুলকে জানায়। এরপর মাহমুদুল হাসান অফিসের কুলিং ফ্যান চালু করতে রশি ধরে টান দেন। ওই সময় ফ্যানটি না চলে স্পার্ক করে। পরে আবার রশি ধরে টান দিলে গ্যাস বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ওই মার্কেটে ভয়াবহ আগুনের ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, ঘটনার দিন ইফতারের আগে ওই ভবনে বিদ্যুৎ ছিল না। জেনারেটরে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হয়। পরে অফিসের বেজমেন্টে ট্রপিক্যাল হোমসের অফিসে ওই প্রতিষ্ঠানের ডিজিএম মাহমুদুল হাসান কুলিং ফ্যান চালু করতেই গ্যাসের বিস্ফোরণ ঘটে।

ফায়ার সার্ভিস সূত্র বলছে, ওই ভবনে ১০-১২ বছরের একটি পুরাতন গ্যাস লাইন ছিল। সেখান দিয়েই গ্যাস বের হতো। ওই লাইনে গ্যাস জমে এ বিস্ফোরণ ঘটে। আগুনের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক মোজাম্মেল হককে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি তাদের কাজ শেষ করেছে।

তবে এরই মধ্যে রাজউক, তিতাস, বিদ্যুৎ বিভাগ, বুয়েট ও ফায়ার সার্ভিসের সমন্বয়ে আরেকটি কমিটি কাজ করছে। তারা দ্রুতই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করবেন। এই রিপোর্ট ও ফায়ার সার্ভিসের আগের করা তদন্ত রিপোর্ট সমন্বয় করে চূড়ান্ত একটি প্রতিবেদন তৈরি হবে। এতে আগুন লাগার কারণ, ক্ষয়ক্ষতি, ভবনটি ব্যবহারযোগ্য কিনা তা বেরিয়ে আসবে।

গত ২৫ জুন সন্ধ্যায় আলাউদ্দিন টাওয়ারে গ্যাস বিস্ফোরণে ভয়াবহ আগুনের ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই ছয়জনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় মোমতাকিন, তার বোন মাইশা ও বাবা মাহমুদুল হাসানসহ অর্ধ শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৬ জুন ভোরে ট্রপিক্যাল হোমসের ডিজিএম মাহমুদুল হাসান এবং ৮ জুলাই সকালে উত্তরা মাইলস্টোন স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী মাইশা মারা যায়। সর্বশেষ মোমতাকিনও বাবা-বোনের পথে না ফেরার দেশে চলে গেল। স্বামী ও দুই সন্তান দুর্ঘটনার কবলে পড়লেও ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান মেহবুবা হাসান।

সর্বশেষ খবর