শনিবার, ৬ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

হুমকি-ধমকিতে এলাকা ছাড়া বিএনপি-স্বতন্ত্র প্রার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

হুমকি-ধমকিতে এলাকা ছাড়া বিএনপি-স্বতন্ত্র প্রার্থীরা

চতুর্থ ধাপের নির্বাচনে ভোটের জন্য প্রস্তুত দেশের বিভিন্ন জেলার ৯ পৌরসভা। গতকাল মধ্য রাতে শেষ হয়েছে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা। আগামীকাল একযোগে এসব পৌরসভায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল দিনভর প্রচারণা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন প্রার্থীরা। উৎসবমুখর এ নির্বাচন নিয়ে যেমন রয়েছে উত্তেজনা, তেমনি অজানা আশঙ্কাও রয়েছে ভোটার ও প্রার্থীদের মধ্যে। সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় টহল দিতে শুরু করেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সদস্যরা। চারস্তরের নিরাপত্তা থাকবে ভোটের এলাকায় কাল পর্যন্ত। সঙ্গে রয়েছে নির্বাহী ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। ব্যালট পেপার, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সসহ নির্বাচনী মালামাল আজ সব কেন্দ্রে পৌঁছে যাবে।

নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, ভোটকে সামনে রেখে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। নির্বাচনী এলাকায় ইতিমধ্যে মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। নির্বাহী ও বিচারিক হাকিম নিয়োজিত রয়েছেন। র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সদস্যরাও মাঠে রয়েছেন। ভোট সুষ্ঠু ও অবাধে করার জন্য সার্বিক বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এদিকে নৌকা, ধানের শীষসহ অন্যান্য দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা গতকাল মধ্য রাতে প্রচারণা শেষ করেছেন। অভিযোগ উঠেছে হুমকি-ধমকি দিয়ে নির্বাচনী এলাকা ত্যাগ করতে বাধ্য করা হচ্ছে বিএনপি ও স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের।

ইসির ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট, নীলফামারীর ডোমার, রংপুরের পীরগঞ্জ, পটুয়াখালীর গলাচিপা, নড়াইলের লোহাগড়া, টাঙ্গাইলের ঘাটাইল, বগুড়ার সোনাতলা ও পাবনার বেড়া পৌরসভায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে শরীয়তপুরের নড়িয়া পৌরসভার মেয়র পদে উপ-নির্বাচনের ভোটগ্রহণের সময় তিনদিন পিছিয়ে কাল ৭ আগস্ট নির্ধারণ করেছে ইসি। এ ছাড়া মানিকগঞ্জের সিংগাইর পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য পদে উপ-নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল।

শঙ্কায় বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা : নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর জানান, শেষ মুহূর্তের প্রচার-প্রচারণায় গতকাল মুখরিত হয়ে উঠেছিল রংপুরের পীরগঞ্জ পৌরসভা এলাকা। ব্যস্ত সময় পার করেছেন প্রার্থীরা। দিনভর মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে পাড়ায়-মহল্লায় মিছিল-সমাবেশ করেছেন। নবগঠিত এ পৌরসভার প্রথম নির্বাচনের কারণে প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থক এবং ভোটারদের মধ্যে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। তবে এ নির্বাচন নিয়ে উত্তেজনা-অজানা শঙ্কাও রয়েছে ভোটার এবং বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে। পীরগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন চারজন। এরা হলেন আওয়ামী লীগের তাজিমুল ইসলাম শামীম, বিএনপির শহীদুল ইসলাম সেবু, নাগরিক কমিটির অ্যাডভোকেট কাজী লুমুম্বা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইদুর রহমান।

বিএনপি ও স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীর অভিযোগ : বিএনপি প্রার্থী শহীদুল ইসলাম সেবু বলেন, আওয়ামী লীগ নেতারা আমার কর্মী ও পোলিং এজেন্টদের হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। নিরাপত্তার ভয়ে অনেক পোলিং এজেন্ট দায়িত্ব পালনে রাজি হচ্ছেন না।

নাগরিক কমিটির মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট কাজী লুমুম্বা লুমু অভিযোগ করেন, সরকারদলীয় নেতারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে আমার কর্মীদের তালিকা করছেন। আমার পক্ষে কাজ করলে ভোটের পরে তাদের দেখে নেবেন, মামলায় জড়ানোর ভয় দেখাচ্ছেন। বিষয়টি রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানানোর পরও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। অনুরূপ অভিযোগ করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইদুর রহমানও।

মেয়র পদে নৌকা ও ধানের শীষে লড়াই : দিনাজপুর প্রতিনিধি জানান, রাত পোহালেই ভোট। ভোটাররা প্রার্থীদের অতীত ও বর্তমান ইতিহাস নিয়ে বিশ্লেষণ করছেন। চায়ের দোকান, মার্কেটসহ বিভিন্ন লোকালয়ে চলছে প্রার্থীদের চুলচেরা বিশ্লেষণ। সব প্রার্থীই বলছেন বিজয়ী হলে পৌরসভার উন্নয়ন করবেন। তবে ভোটারদের বেশির ভাগই মনে করছেন, মেয়র পদে নৌকা ও ধানের শীষের মধ্যে লড়াই সীমাবদ্ধ থাকবে।

মহাজোটের আওয়ামী লীগ প্রার্থী ছাড়াও রয়েছে জাপার প্রার্থী। অপরদিকে বিএনপির একক প্রার্থী থাকলেও প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়াতে পারে বিএনপি বিদ্রোহী ও জামায়াতের স্বতন্ত্র প্রার্থী।

সোনাতলা পৌরসভার কাঙ্ক্ষিত ভোট : নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া জানান, পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে পৌরসভার পুরো এলাকা। প্রার্থীদের চোখে এখন ঘুম নেই। দিন-রাত তাদের কাছে এখন যেন সমান। প্রার্থীরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন।

সোনাতলা পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে তিনজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরা হলেন— সোনাতলা বণিক সমিতির সভাপতি আলহাজ জাহাঙ্গীর আলম নান্নু, আওয়ামী লীগ সমর্থিত শাহিদুল বারী খান রব্বানী, বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী প্রভাষক এ টি এম গোলাম রকিব। প্রার্থীরা সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বাড়ি থেকে বাড়ি, পাড়া থেকে মহল্লায় মহল্লায় ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন।

শরীয়তপুর প্রতিনিধি জানান, নড়িয়া পৌরসভার উপ-নির্বাচনে ৬ জন প্রার্থী হলেও লড়াই হবে ত্রিমুখী। এ পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িয়েছে বিদ্রোহী প্রার্থীরা। মেয়র পদে আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থীর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দলের বিদ্রোহীরা। দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে প্রচারণা চালাচ্ছেন স্থানীয় দলের অনেক নেতা-কর্মী। তবে বিএনপির প্রার্থী না থাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সঙ্গে লড়াই হবে।

পটুয়াখালী প্রতিনিধি জানান, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দলীয় মেয়র পদে একক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রচারণায় উভয় দলের কেন্দ্রীয়, বিভাগ ও জেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের উপস্থিতি নির্বাচনী পরিবেশ আরও মুখরিত হয়ে উঠেছে। আওয়ামী লীগ দলীয় একক প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বর্তমান মেয়র হাজী আবদুল ওহাব খলিফা। অন্যদিকে ধানের শীষের প্রার্থী উপজেলা বিএনপির প্রধান উপদেষ্টা আলহাজ আবু তালেব মিয়া সাবেক মেয়র হিসেবে পৌরবাসীর কাছে ভোট চাইছেন।

নীলফামারী প্রতিনিধি জানান, শেষ মুহূতে নীলফামারীর ডোমার পৌরসভার নির্বাচনী প্রচারণা জমে উঠেছে। পৌর নির্বাচনে ৪ জন মেয়র প্রার্থীসহ ৩৬ জন কাউন্সিল প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায় মেয়র পদটি প্রেস্টিজ ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে আওয়ামী লীগের। ডোমার পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত ময়নুল হক নৌকা মার্কা, বর্তমান মেয়র মনছুরুল ইসলাম দানু (স্বতন্ত্র) নারিকেল গাছ, জামায়াত সমর্থিত কাজী আবু জাফর মো. জুল কাদের (স্বতন্ত্র) জগ মার্কা, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. আবু সুফিয়ান লেবু (স্বতন্ত্র) মোবাইল সেট মার্কায় ভোট করছেন।

নড়াইল প্রতিনিধি জানান, শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে নড়াইলের লোহাগড়া পৌর নির্বাচন। নির্বাচনে বিএনপির একক প্রার্থী মাঠে থাকলেও আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী (আ’লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী) আশরাফুল আলম বলেন, আমি পারিবারিকভাবে আওয়ামী পরিবারের লোক। আমার সঙ্গে লোহাগড়াবাসী আছেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী লিপি খানম বলেন, আমি নির্বাচিত হলে লোহাগড়া পৌরসভাকে ডিজিটাল পৌরসভায় রূপান্তর কবর। পরপর দুবার নির্বাচিত মেয়র বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী নেওয়াজ আহম্মেদ ঠাকুর বলেন, লোহাগড়া পৌরসভার সৃষ্টি থেকে আমি নির্বাচিত হয়ে আসছি। স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী (আ’লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী) শরিফুল ইসলাম নিজের জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।

সর্বশেষ খবর