শনিবার, ১৩ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

তদন্তের ফাঁদে হল উদ্ধার তৎপরতা

জবি প্রতিনিধি

তদন্তের ফাঁদে হল উদ্ধার তৎপরতা

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) বেদখলকৃত হল উদ্ধার তৎপরতা তদন্তের ফাঁদে আটকে রয়েছে। তদন্তের পর তদন্ত হচ্ছে, কিন্তু হল উদ্ধার হচ্ছে না। এই হলগুলোর মধ্যে রয়েছে শহীদ আনোয়ার শফিক হল, শহীদ শাহাবুদ্দিন হল, শহীদ আজমল হোসেন হল, তিব্বত হল ও ড. হাবিবুর রহমান হল।

জানা গেছে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৫ অনুযায়ী বিলুপ্ত কলেজের সব সম্পত্তি বুঝিয়ে দিতে মুসিহ-মুহিত অডিট ফার্মকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ফার্মটির অনুসন্ধানে তৎকালীন জগন্নাথ কলেজের বেদখলে থাকা ১২টি হলের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। শিক্ষার্থীদের হল উদ্ধার আন্দোলনের মুখে ২০০৬ সালে অধ্যাপক ড. সোহরাওয়ার্দীকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু হল উদ্ধারে এ কমিটি কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। এরপর ২০০৯ সালের ২৭ জানুয়ারি শিক্ষার্থীরা আবারও আন্দোলনে নামে। তখন গঠিত হয় তদন্ত কমিটি। এ নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও একটি কমিটি গঠন করে। একই বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ভূমি মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসক, পুলিশ, রাজউক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন করে প্রতিনিধি নিয়ে ছয় সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়। কমিটিকে এক মাসের মধ্যে হল উদ্ধারে করণীয় সম্পর্কে সুপারিশ প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়। ২০০৯ সালের মার্চে পাঁচটি হল (শহীদ আনোয়ার শফিক হল, শহীদ শাহাবুদ্দিন হল, শহীদ আজমল হোসেন হল, তিব্বত হল ও ড. হাবিবুর রহমান হল) বিশ্ববিদ্যালয়কে লিজ দেওয়ার সুপারিশ করে কমিটি। এ পরিপ্রেক্ষিতে একই বছরের ৫ মে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভূমি মন্ত্রণালয়ে পাঁচটি হলের দীর্ঘমেয়াদি লিজের আবেদন করে। ৯ জুলাই ভূমি মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে অর্পিত সম্পত্তি সংক্রান্ত প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঢাকা জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেয়। ২০১০ সালের ২১ জানুয়ারি  জেলা প্রশাসক জানান, আইনগত সুবিধার্থে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হলগুলো লিজের পরিবর্তে অধিগ্রহণের ব্যবস্থা নিতে পারে। তবে এ ব্যাপারে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। ২০১০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আবারও অধ্যাপক ড. এস এম আনোয়ারা বেগমকে আহ্বায়ক করে ১৩ সদস্যের ‘হল ও অন্যান্য সম্পত্তি উদ্ধার কমিটি’ গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তারপর ২০১১ সালে অধ্যাপক ড. নুরুল মোমেনকে প্রধান করে আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়। ২০১২ সালের ১৪ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অধ্যাপক ড. এস এম আনোয়ারা বেগমকে আহ্বায়ক করে শহীদ নজরুল ইসলাম হলসহ ৪টি হল অধিগ্রহণে চার সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করে। একই দিন ড. মো. মনিরুজ্জামানকে আহ্বায়ক করে বজলুর রহমান হলের লিজ গ্রহণের ব্যাপারে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু এত কমিটি গঠনের পরও হলগুলো উদ্ধার হয়নি।

পরিত্যক্ত কারাগারে হল নির্মাণের দাবি : হল নির্মাণের দাবিতে ক্যাম্পাসে চলমান আন্দোলনের মধ্যেই ঢাকা কারাগারের জায়গা বরাদ্দ দেওয়ার দাবি তুলেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) সাবেক শিক্ষার্থীরা। গতকাল রাজধানীর শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও তৎকালীন কলেজের সাবেক শিক্ষার্থীরা এ দাবিতে মানববন্ধন করেন। মানববন্ধনে অংশ নেওয়াদের বেশির ভাগ ছাত্র থাকাকালে হলের দাবিতে আন্দোলনের সামনের সারিতে ছিলেন। মানববন্ধনে অংশ নিয়ে জগন্নাথের হল আন্দোলনের নেতা শরীফুল চৌধুরী বলেন, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কখনো অনাবাসিক হতে পারে না। আর এ বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশের যে পরিবেশ তা উচ্চশিক্ষার পরিপন্থী; থাকার ন্যূনতম পরিবেশই সেখানে নেই।’ মানববন্ধনে ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি লাকী আক্তার বলেন, ‘হাজী সেলিম, পুলিশসহ প্রভাবশালীরা জগন্নাথের হলগুলো দখল করে রেখেছেন। অথচ আন্দোলন হলে প্রশাসন আশ্বাস দিয়েও কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয় না।’

সর্বশেষ খবর