সোমবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

প্রবীণ রাজনীতিক আবদুর রহিম আর নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রবীণ রাজনীতিক আবদুর রহিম আর নেই

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বাংলাদেশ সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য, বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর, দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও প্রবীণ রাজনীতিক অ্যাডভোকেট এম আবদুর রহিম আর নেই। ঢাকার বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সকালে ইন্তেকাল (ইন্না লিল্লাহি...রাজিউন) করেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। তিনি দুই ছেলে, চার মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তিনি সিওপিডি, ডায়াবেটিসসহ বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। গত ৩ আগস্ট প্রবীণ এই রাজনীতিক গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে তাকে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে সেখান থেকে জিয়া হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। অবস্থার আরও অবনতি হলে গত ৯ আগস্ট আবদুর রহিমকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে  ঢাকায় আনা হয়। তখন থেকেই তিনি বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

গতকাল বাদ আসর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় দিনাজপুর সদর আসনের সাবেক এ সংসদ সদস্যের প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সন্ধ্যায় মরহুমের দুই ছেলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এনায়েতুর রহিম ও জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম পিতার লাশ নিয়ে সড়ক পথে দিনাজপুর রওনা হন।

দিনাজপুর প্রতিনিধি জানান, আজ বেলা ১১টায় দিনাজপুর গোর-এ শহীদ ঈদগাহ ময়দানে মরহুমের দ্বিতীয় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর গ্রামের বাড়ি শংকরপুর ইউনিয়নের জালালপুর গ্রামে জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে তাকে দাফন করা হবে। এদিকে অ্যাডভোকেট এম আবদুর রহিমের মৃত্যুতে দিনাজপুরে তিন দিনের শোক ঘোষণা করা হয়েছে। মরহুমের প্রতি সর্বস্তরের জনগণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তার মরদেহ প্রথমে আজ সকাল ১০টায় দিনাজপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হবে।

অ্যাডভোকেট আবদুর রহিমের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গভীর শোক জ্ঞাপন ও মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেছেন। তারা শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। শোক বার্তায় তারা বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মরহুম আবদুর রহিম মুক্তিযুদ্ধে যে অবদান রেখেছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য একটি সংবিধান প্রণয়নে যে ভূমিকা রেখেছেন, বাংলাদেশের জনগণ তা চিরদিন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।

জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় অ্যাডভোকেট আবদুর রহিমের নামাজে জানাজার আগে মরহুমের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। পরে রাষ্ট্রপতির পক্ষে মরহুমের কফিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন তার সামরিক সচিব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী মরহুমের কফিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে দলীয় নেতাদের নিয়ে দ্বিতীয় দফা শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন। এ ছাড়া জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ ও হুইপ ইকবালুর রহিমসহ হুইপবৃন্দ এবং বিরোধীদলীয় নেতার পক্ষে নুরুল ইসলাম মিলন মরহুমের কফিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। এ সময় মরহুমের রাজনৈতিক ও কর্মময় জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর নানক এমপি ও হুইপ মো. শহীদুজ্জামান সরকার। পরে মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। অ্যাডভোকেট এম আবদুর রহিম ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারের পশ্চিমাঞ্চলীয় জোনের চেয়ারম্যান ছিলেন। ছাত্রাবস্থায় তিনি রাজশাহী কলেজে ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। যুক্তফ্রন্টের একজন কর্মী হিসেবে তিনি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে ১৯৫৪ সালের নির্বাচনী প্রচারাভিযানে অংশ নেন। ঐতিহাসিক আগরতলা মামলার লিগ্যাল এইড কমিটির একজন সদস্য ছিলেন।

 আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ১৯৭০ সালে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালে বৃহত্তর দিনাজপুর অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭২-এ বাংলাদেশ সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য এবং ১৯৭৩ ও ১৯৯১ সালেও দিনাজপুর সদর আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন। তিনি দীর্ঘদিন দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগ ও দিনাজপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

সর্বশেষ খবর