মঙ্গলবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
সক্রিয় পাচারকারী সিন্ডিকেট

পুঁজি সংকটে রংপুরের চামড়া ব্যবসায়ীরা

শাহজাদা মিয়া আজাদ, রংপুর

চরম পুঁজি সংকটের মুখে পড়েছেন রংপুরের চামড়া ব্যবসায়ীরা। তাদের অভিযোগ, ১০০ ব্যবসায়ীর ২০ কোটি টাকা তিন বছর ধরে ঢাকার ট্যানারি মালিক ও নাটোরের আড়তদারদের কাছে আটকে আছে। একাধিকবার তাগাদা দেওয়ার পরও তারা বকেয়া পরিশোধ করছে না বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। চাহিদা মতো পুঁজি সংগ্রহ করতে না পারলে এবার কোরবানি ঈদে চামড়ার বাজারে ধস নামার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। এ সুযোগে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো চামড়া কিনে নিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। ইতিমধ্যেই চামড়া পাচার চক্র মোটা পুঁজি নিয়ে মাঠে নেমেছে। পুঁজি জোগান দিতে সীমান্তের ভারতীয় চামড়া ব্যবসায়ীদের রংপুর অঞ্চলের এজেন্টরা এসে মৌসুমি ব্যবসায়ী ও ফড়িয়াদের মাধ্যমে চামড়া কেনার জন্য আগাম বুকিং দিচ্ছে বলে জানা গেছে।

এদিকে চামড়া পাচার রোধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। রংপুরের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জানান, কোরবানির চামড়া কোনো অবস্থাতেই সীমান্ত অভিমুখী হতে দেওয়া হবে না। চামড়ার গাড়ি ঢাকা অভিমুখী করার জন্য পুলিশি টহলসহ সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ৭ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক মেজর মুহিত উল আলম জানান, ভারতে যাতে চামড়া পাচার হয়ে যেতে না পারে সেজন্য সীমান্ত সিল থাকবে। সীমান্ত এলাকার সংশ্লিষ্ট বিজিবি কর্মকর্তাদের এ ব্যাপারে তীক্ষ দৃষ্টি রাখতে বলা হয়েছে। রংপুর চামড়া ব্যবসায়ী সমিতি সূত্রে জানা যায়, জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে চামড়া ব্যবসায়ী রয়েছেন ২২৫ জন। এর মধ্যে আড়তদার ১০০। গত তিনটি কোরবানি ঈদে সংগৃহীত চামড়া ঢাকার ১০টি ট্যানারি মালিক ও নাটোরের ২৫ আড়তদারের কাছে বিক্রি করা হয়। কিন্তু কোনোবারই তারা পুরো টাকা পরিশোধ করেনি। ফলে তাদের কাছে পাওনা আটকে গেছে ২০ কোটি ৩০ লাখ টাকা।

রংপুরের চামড়ার মোকাম নগরীর শাপলা চত্বরের চামড়া পট্টির অনেকেই পুঁজি সংকটের কারণে তাদের ব্যবসা গুটিয়ে অন্য ব্যবসা করছেন। দীর্ঘদিনের চামড়ার আড়তে এখন অটোরিকসার শোরুম দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ১০-১৫ জন চামড়ার ব্যবসা ধরে রেখেছেন। এদেরই একজন আবুল হোসেন। তিনি জানান, কোরবানি ঈদ আসার আগেই চামড়া বাজারে ধস নেমেছে। প্রকার ভেদে গরুর চামড়া ৫০০ টাকা থেকে দেড় হাজার টাকা এবং ছাগলের চামড়া ৫০-১০০ টাকায় কেনা হচ্ছে।

জেলা চামড়া ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি আবদুল লতিফ খান জানান, বকেয়া টাকা পাওয়া না গেলে এবছর কোরবানির চামড়ার বাজার অনেক কমবে। এই সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য ভারতীয় ব্যবসায়ীদের এজেন্টরা রংপুরে এসে স্থানীয় ফড়িয়া ও দালালদের অগ্রিম বুকিং দিচ্ছেন। ভারতে গরুর চেয়ে ছাগলের চামড়ার চাহিদা বেশি। সেখানে বর্তমানে ছাগলের চামড়া প্রকার ভেদে ৫০০-৬০০ টাকা এবং গরুর চামড়া ২ থেকে ৩ হাজার টাকায় কেনাবেচা হচ্ছে।

চামড়া পট্টির ফড়িয়া আকবর আলী বলেন, প্রতি কোরবানি ঈদেই ভারতীয় ব্যবসায়ীদের এজেন্টরা রংপুরে আসেন। এবারও ভারতীয় ব্যবসায়ীদের তিন এজেন্ট মোটা অঙ্কের পুঁজি নিয়ে রংপুরে এসেছেন। তারা স্থানীয় ফড়িয়া ও মৌসুমি ব্যবসায়ীদের অগ্রিম বুকিং দিচ্ছেন।

সর্বশেষ খবর