শুক্রবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

পাশাপাশি দুই সেতুতে হারাচ্ছে নাব্যতা

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

পাশাপাশি দুই সেতুতে হারাচ্ছে নাব্যতা

চট্টগ্রামের মদুনাঘাট এলাকায় হালদা নদীর ওপর পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে দুটি সেতু। পুরনো সেতুটি মেয়াদোত্তীর্ণ। পাশেই নির্মিত হয় নতুন সেতু। কিন্তু বহাল আছে পুরনো সেতুটিও। পাশাপাশি দুটি সেতুতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে পানির প্রবাহ। হ্রাস পাচ্ছে নদীর নাব্যতা। ভরাট হয়ে জমছে চর। কমছে প্রাণিবৈচিত্র্য। অভিন্ন স্থানে অপরিকল্পিত দুটি সেতু হওয়ায় হুমকিতে পড়েছে দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননকেন্দ্র হালদা নদী। সড়ক ও জনপথ (সওজ) চট্টগ্রাম বিভাগ সূত্রে জানা যায়, পাকিস্তান আমলে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই আঞ্চলিক মহাসড়কে হালদা নদীর ওপর ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৮ দশমিক ৪ মিটার প্রস্থের মদুনাঘাট সেতু নির্মাণ করা হয়। পরে সেতুটি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেলে সওজ সেখানে ২১১ দশমিক ২০ মিটার দৈর্ঘ্যের আরেকটি নতুন সেতু নির্মাণ করে। ওই সময় পুরনো সেতুটি ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু সওজ সেতুটি না ভেঙে ২০১১ সালের ১৮ জানুয়ারি কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্পের পাইপলাইন স্থাপনের জন্য চট্টগ্রাম ওয়াসার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়। ওই বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি সওজ সেতুটি পুরোপুরিভাবে ওয়াসাকে শর্তসাপেক্ষে ব্যবহারের অনুমতি দেয়। ফলে প্রায় একই জায়গায় দুটি সেতু বহাল থাকে। এর প্রতিটি সেতুতে আছে ছয়টি করে স্প্যান। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে পানিপ্রবাহ। এরই মধ্যে সেতু-সংলগ্ন এলাকায় চর জমতে শুরু করেছে। নদীর উজান এলাকার কয়েকটি স্থানে চর জেগে ওঠায় হালদার মূল বৈশিষ্ট্য হারিয়ে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও হালদা বিশেষজ্ঞ ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া বলেন, যে কোনো নদী তিনটি কারণে বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। নদীর ওপর সেতু তৈরির কারণে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। পানির স্বাভাবিক প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলে ক্রমশ নদীটি মরে যায়। এটি অনেকটা নদীর ধর্মই বলা চলে।

চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. ফজলুল্লাহ বলেন, নদীর তলদেশ দিয়ে পাইপলাইন নিতে বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন। এ জন্য সওজ থেকে সেতুটি ইজারা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি দুটি সেতুর কারণে নদীতে পলি জমে চরের সৃষ্টি হলে ওয়াসা নিজ উদ্যোগে ড্রেজিং করবে। ফলে পাশাপাশি দুটি সেতু থাকলে পলি জমে হালদায় প্রাকৃতিক বিপর্যয় হওয়ার কোনো কারণ নেই। অভিযোগ আছে, সওজ ও ওয়াসার মধ্যে চুক্তির মধ্যে অন্যতম ছিল ‘সেতুর মূল অবকাঠামো ঠিক রেখে সেতুটি ব্যবহার’ করার।

কিন্তু পাইপলাইন স্থাপনের সময় ওয়াসা সেতুর স্প্যানসহ মূল অবকাঠামো পরিবর্তন করে। এরপর সওজ ওয়াসাকে নির্মাণকাজ বন্ধে চিঠি দেয়। তবে সওজের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই ওয়াসা পুরনো সেতুর স্প্যানগুলো সংস্কার করে। নদীর তলদেশ থেকে স্প্যানগুলো সংস্কার করতে ওয়াসা প্রায় ৪০ কোটি টাকা ব্যয় করে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর