শনিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

বরিশালে ইলিশ ছাড়া কোনো মাছ নেই!

চট্টগ্রামে দাম হাতের নাগালে

রাহাত খান, বরিশাল

বরিশালে ইলিশ ছাড়া কোনো মাছ নেই!

পরিবারের জন্য পোয়া, বেলে (বাইলা) ও চিংড়ি মাছ কিনতে নগরীর পোর্ট রোড মত্স্য আড়তে গিয়েছিলেন শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফার্মাসিস্ট মো. সাইফুল ইসলাম। বরিশালের সবচেয়ে বড় এই আড়তে তন্ন তন্ন করে খুঁজেও কাঙ্ক্ষিত মাছ পাননি তিনি। পুরো পোর্ট রোডের মাছের আড়ত ইলিশে সয়লাব। এ ছাড়া অন্য কোনো মাছ নেই। পরে মাছ না কিনেই বাসায় ফিরেন। আরেক বেসরকারি চাকরিজীবী রহিম উদ্দিনও (ছদ্মনাম) পোর্ট রোড আড়তে গিয়েছিলেন স্থানীয় নদ-নদী খাল-বিলের কিছু মাছ কিনতে। কিন্তু ইলিশ ছাড়া কোনো মাছ না থাকায় মাঝারি সাইজের (প্রতিটি ৫০০ গ্রাম ওজনের) চারটি ইলিশ কিনেন এক হাজার ১০০ টাকায়। জানা যায়, বরিশালের মাছের আড়তে গতকালও প্রায় ১ হাজার ২০০ মণ ইলিশ এসেছে। এর আগের দিনও এই আড়তে এসেছিল প্রায় ১ হাজার ৬০০ মণ ইলিশ মাছ। আড়তে আসা ইলিশের মধ্যে ২৫০ থেকে ৫০০ গ্রাম আকারের ইলিশের পরিমাণই বেশি। সরবরাহ বেশি থাকায় কমেছে দামও। আর ইলিশের সরবরাহ বেশি থাকায় কর্মব্যস্ত আড়তদার ও মত্স্য শ্রমিকরা। ক্রেতার সমাগমও বেশ। আড়ত থেকে ককশিটে (বিশেষ প্যাকেট) বরফ দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করে শত শত মণ ইলিশ পাঠানো হচ্ছে ঢাকা, রাজশাহী, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এ ছাড়া দাম কম থাকায় পাড়া মহল্লায় ফেরি করেও বিক্রি হচ্ছে ইলিশ। তবে এসব ইলিশের আকার একটু ছোট।

বরিশাল জেলা মত্স্য আড়তদার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অজিত কুমার দাস মনু বাবু জানান, গতকাল দেড় কেজি আকারের প্রতি মণ ইলিশ পাইকারি বিক্রি হয়েছে ৮০ হাজার টাকায়। একইভাবে ১২০০ গ্রাম আকারের প্রতি মণ ৫০ হাজার, এক কেজি আকারের প্রতি মণ ৪৪ হাজার, রপ্তানিযোগ্য এলসি আকারের (৬০০ থেকে ৯০০ গ্রাম) প্রতি মণ ৩২ হাজার, ভেলকা আকারের (৪০০ থেকে ৫০০ গ্রাম) ২০ হাজার, গোটরা আকারের (২৫০ গ্রাম) প্রতি মণ ১৫ হাজার এবং জাটকা প্রতি মণ পাইকারি বিক্রি হয়েছে ৯ হাজার টাকায়।  গতকাল সরবরাহ কিছুটা কম হওয়ায় প্রতি মণে দাম বেড়েছে ৫০০ থেকে হাজার টাকা।

মনু বাবু জানান, আষাঢ় থেকে আশ্বিন এই চার মাস ইলিশের মৌসুম হলেও এ বছর ইলিশ ধরা পড়তে শুরু করেছে মৌসুমের শেষভাগে। ডিমওয়ালা মা ইলিশ রক্ষায় অভয়ারণ্যগুলোয় মাছ ধরা নিষিদ্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত নদ-নদীতে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়বে বলে আশা করেন তিনি।

বাজারে ইলিশ ছাড়া অন্য কোনো মাছ না থাকার কারণ হিসেবে বরিশালের মত্স্য কর্মকর্তা (ইলিশ) বিমল চন্দ  দাস বলেন, ভাদ্র-আশ্বিন হচ্ছে ইলিশের ভরা মৌসুম। এই সময়ে নদ-নদীতে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। জেলেরা এখন ইলিশ শিকারে ব্যস্ত। অন্য কোনো মাছ ধরার জাল বাইছে না। আগামী ১২ অক্টোবর থেকে পরবর্তী ২২ দিন অর্থাৎ ২ নভেম্বর পর্যন্ত ডিমওয়ালা মা ইলিশ রক্ষার জন্য সরকার অভয়াশ্রমগুলোয় সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে। এর আগ পর্যন্ত বাজারে ইলিশের প্রচুর সরবরাহ থাকবে বলে আশা করেন তিনি।

চট্টগ্রামে ইলিশের দাম হাতের নাগালে : স্বাদের ইলিশ এখন ক্রেতার হাতের নাগালে। গত কয়েক দিন ধরে সাগরে ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে ইলিশ। আর এসব ইলিশ বাজারে বিক্রি হচ্ছে তুলনামূলক কম দামে। এতে খুশি ক্রেতারা।  

গতকাল চট্টগ্রাম নগরের একাধিক বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৬০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকায়। ১০ দিন আগেও এ ওজনের প্রতি কেজি ইলিশ বাজারে বিক্রি হয়েছিল এক হাজার টাকা। 

নগরীর রিয়াজুদ্দিন বাজারের ক্রেতা আরেফা বেগম বিউটি বলেন, সরকারি উদ্যোগে জাটকা নিধন বন্ধ হওয়ায় এবার বাজারে বড় ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। দামও হাতের নাগালে। আগামীতেও সরকারি এ উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে বলে আশা করছি।    

রিয়াজুদ্দিন বাজারের বিক্রেতা আবদুল আলীম বলেন, কিছুদিন আগে ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি করেছি ৯০০ টাকায় সেটি আজ বিক্রি করি ৪৩০ টাকায়। তা ছাড়া এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি করেছি সর্বনিম্ন ১১০০ থেকে ১২০০ টাকায়। সে ওজনের ইলিশ এখন বিক্রি করছি ৭০০ থেকে সাড়ে ৮০০ টাকায়।

জানা যায়, এ বছর ইলিশ প্রজননের সময় সরকারিভাবে সাগরে জাটকা নিধন সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা ছিল। নির্ধারিত ওই সময়ে পরিচালিত হয়েছিল ভ্রাম্যমাণ আদালত। রাতের বেলায়ও তদারকি করা হয়েছিল। ফলে জাটকা নিধন করা সম্ভব হয়নি। আর এর সুফল এখন দেশবাসী পাচ্ছে।

সর্বশেষ খবর