শনিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

অপরিকল্পিত রাবার ড্যাম বাঁধ স্লুইস গেটে নাভিশ্বাস

হুমকিতে হালদা নদী (শেষ)

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

অপরিকল্পিত রাবার ড্যাম বাঁধ স্লুইস গেটে নাভিশ্বাস

অপরিকল্পিত রাবার ড্যাম, অবৈধ বালি উত্তোলন, বাঁধ নির্মাণ, নদীতে বাঁক ও পাড় কাটা এবং স্লুইস গেট নির্মাণ করায় নাভিশ্বাস উঠছে হালদা নদীর। এসব কৃত্রিম অত্যাচারে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছার অপেক্ষায় হালদা। সঙ্গে হারাচ্ছে নান্দনিক বৈচিত্র্য। জানা যায়, অতীতে হালদা নদীতে মা-মাছের অন্যতম উৎস ছিল কর্ণফুলী, সাঙ্গু, মাতামুহুরী; এসব নদীর শাখা আর খালগুলো। কিন্তু কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণ, খালগুলোর মুখে স্লুইস গেট নির্মাণ ও দূষণের কারণে এ উৎস নদী থেকে এখন আর আগের মতো হালদায় মা-মাছ আসে না।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া বলেন, কোনো ধরনের সমীক্ষা ছাড়াই হালদা নদীকে এসব মনুষ্য অত্যাচার করা হচ্ছে। এর ফলে কমছে মা-মাছ, রক্ষা হচ্ছে না ডলফিন, নষ্ট হচ্ছে নিরাপদ পানির গুণ। অধিকন্তু চলতি বছরই হালদায় একটি মহাবিপর্যয় দেশবাসী লক্ষ্য করেছেন। এ বছর মা-মাছ নমুনা ডিম দিলেও মূল ডিম দেয়নি। এই উদাহরণ থেকে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবার সচেতন হওয়া সময়ের দাবি।

সরেজমিনে দেখা যায়, হালদা নদীর ১২টি বাঁক কেটেছেন স্থানীয়রা। এর মধ্যে ভাটিতে নয়টি ও উজানে তিনটি বাঁক আছে। বাঁক কাটার কারণে নদীর দৈর্ঘ্য কমেছে ২৫ কিলোমিটার। সর্বশেষ ২০০১ সালে গড়দুয়ারার সোনাইয়ারছড়া পয়েন্টে একটি বাঁক কাটা হয়। এ ছাড়া ১৯০৫-১০ সালের দিকে গুজরা, ১৯২৮ সালে মাছুয়াঘোনা এলাকায়, ১৯৪৮ সালে ফটিকছড়ির আবদুল্লাহপুর গ্রাম, হাটহাজারীর ছিপাতলী গ্রাম ও বাড়িঘোনা এলাকায় পৃথক তিনটি, ১৯৬২ সালে ফটিকছড়ির ভুজপুরে, ১৯৬৪ সালে অঙ্কুরিঘোনা গ্রামে, ১৯৭৫ সালে হারুয়ালছড়ি ও সুন্দরপুর গ্রামে দুটি, ১৯৮৮-৮৯ সালে রাউজানে সোনাইরচর এলাকায় একটি এবং ২০০২ সালে কাগতিয়ার চর এলাকায় একটি বাঁক কাটা হয়। পক্ষান্তরে অপরিকল্পিতভাবে মূল হালদা নদীতেই তৈরি হচ্ছে রাবার ড্যাম। এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, হালদার উজানে ২০১১ সালে ফটিকছড়ি উপজেলা-সংলগ্ন এলাকায় ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫৫ মিটার দৈর্ঘ্যের ও ৪ মিটার উচ্চতার একটি রাবার ড্যাম তৈরি করা হয়। ২০১২ সালে হালদার উজানে ফটিকছড়ি এলাকার হারুয়ালছড়ি খালে ৩০ মিটার দৈর্ঘ্যের ও সাড়ে ৪ মিটার উচ্চতার একটি রাবার ড্যাম নির্মিত হয়। হালদা নদীর পানির অন্যতম উৎস হারুয়াছড়ি খালেও প্রায় ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় একটি রাবার ড্যাম। এ ছাড়া ধুরং খালে আছে কংক্রিট ড্যাম। আর কাটাখালী, খন্দকিয়া, বজ্জ্যাখালী, সাকাদা, মাদারি খাল, কুমারখালী, মখদাইর, ডোমখালী, কাগতিয়া, পোড়াকপালী, সোনাইখাল, চেঙ্গাখালী, বোয়ালিয়াসহ ছোট-বড় অন্যান্য খালের মুখে অপরিকল্পিত বাঁধ দেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে প্রতিনিয়ত কাটা হচ্ছে নদীর পাড়। এতে নদী হারাচ্ছে নাব্যতা। অন্যদিকে হালদা নদীর বিভিন্ন সংযোগ-খাল আছে ৩৬টি। এর মধ্যে ১৯ খালের মুখেই স্থাপন করা হয়েছে স্লুইস গেট। এ নদীর নাজিরহাটের ধুরং খালের নিচের অংশে স্লুইস গেট নির্মাণ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এ ছাড়া উজান অংশ ফটিকছড়ির মন্দাকিনি, লেলাং, ধুরং, মরা ধুরং খালগুলোর ওপর আছে একাধিক স্লুইস গেট। লেলাং খালের ওপর আছে চারটি স্লুইস গেট। এসব মনুষ্য অত্যচারের সঙ্গে আছে প্রভাবশালীদের বালি উত্তোলন। দিন-রাত সমানতালে তোলা হয় বালি। বৈধ-অবৈধ প্রায় ৫০টি বালিমহাল আছে। এসব মহাল থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালি উত্তোলনের ফলে ভাঙছে নদীর পাড়, কমছে দৈর্ঘ্য। বিশেষজ্ঞ সূত্রে জানা যায়, মূলত মা-মাছ নদীর বাঁকের অগভীর অংশে ডিম ছাড়ে।

 

সর্বশেষ খবর