সোমবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন ওরা নয়জন

আলী আজম

ট্যাম্পাকো ফয়েলস কারখানার অপারেটর মীর শিপন। পুরো শরীরে জখম। মাথায় ও হাতে ব্যান্ডেজ। চলছে স্যালাইন। ক্ষণে ক্ষণে চিৎকার-চেঁচামেচি। যন্ত্রণায় ছটফট করছেন তিনি। সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন স্ত্রী আবিদা সুলতানা। কিন্তু যন্ত্রণার কাছে সবই হার মানছে। গতকাল দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের অবজারভেশন রুমে এমন চিত্র দেখা গেছে। তার মতো যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে টঙ্গীর ঘটনায় আহত নয়জন। তবে তাদের মধ্যে শিপনসহ আমিনুল ইসলাম রিজু ও জাহাঙ্গীর আলম মৃধার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানান ঢামেক হাসপাতালের কনসালট্যান্ট ডা. মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দীন খান। গত শনিবার রাত আড়াইটার দিকে ট্যাম্পাকো ফয়েলস কারখানায় আহত রিপন দাস (৩০) ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। চিকিৎসকরা বলছেন, আগুনে তার শরীরের ৯০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। তিনি ছিলেন ওই কারখানার প্রিন্টিং অপারেটর। এদিকে গতকাল ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার হেলাল উদ্দিন আহমেদ আহত নয়জনের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে এবং মৃত রিপন দাসের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা দেন। রিপন দাসের বড় ভাই বিপ্লব দাস বলেন, তাদের গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে। রিপন ট্যাম্পাকো ফয়েলস কারখানায় প্রিন্টিং অপারেটর হিসেবে সাত বছর ধরে কাজ করছিল। সকালে ডিউটিতে গেলে দুর্ঘটনার শিকার হন রিপন। তার স্ত্রীর নাম মুক্তা রানী দাস। চার মাস আগে রিপন বিয়ে করেন। স্ত্রী গ্রামের বাড়িতেই থাকেন। ঘটনার আগের দিন রিপন তাকে ফোন করে বলে ‘ভাই এবার বেশি ছুটি নিয়ে গ্রামে আসছি’। রিপন ঠিকই বাড়ি ফিরল, কিন্তু লাশ হয়ে— বলেই তিনি হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন।

আহত মীর শিপনের স্ত্রী আবিদা সুলতানা বলেন, ঘটনার দিন শিপনের ডিউটি ছিল বেলা ২টায়। কিন্তু আরেকজনের সঙ্গে শিফট চেঞ্জ করে। টঙ্গীর শিলমুল এলাকার বাসা থেকে ভোরে বের হন শিমুল। একটি গ্রুপ কাজ শেষ করে বের হবে আরেকটি গ্রুপ কাজে যোগ দেবে— এমন সময় কারখানার গ্যাস রুমে বিস্ফোরণ ঘটলে তিনি আহত হন। তাদের বাড়ি মাগুরার শ্রীপুর থানার তারাওজন গ্রামে। ওই দম্পতির প্রথম শ্রেণিতে পড়ুয়া তানভীর আহমেদ (৮) নামে এক সন্তান রয়েছে। গতকাল বিকালে তাদের বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল। শিপনের মাথায় ও চোখে বেশি সমস্যা। তিনি তীব্র যন্ত্রণা সহ্য করতে পারছিলেন না।

প্যাকেজিং অপারেটর আহত শাহিন আহমেদ জানান, তিনি গত ১০ বছর ধরে ওই কারখানার নিচতলায় কাজ করছেন। ভোরে টঙ্গীর মদিনাপাড়া থেকে কাজে যোগ দিতে কারখানায় যান। প্রবেশ করতেই সহকর্মী জাকির হোসেন ভিতরে যেতে নিষেধ করে বলেন, গ্যাস লিক হয়েছে। পরে গেটের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ২০ মিনিট পর গ্যাস রুমে বিস্ফোরণ ঘটলে তিনি আহত হন। ঘটনার একদিন আগ থেকেই গ্যাস লিক ছিল। তিনি মাথায় বেশি আঘাত পেলেও বাম হাতসহ সারা শরীরে জখম রয়েছে। তার বাড়ি সিলেটের গোলাপগঞ্জ থানার রুস্তুমপুর গ্রামে। গতকাল সকালে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার জন্য আগ থেকেই বাসের টিকিট কেটে রেখেছিলেন তিনি।

আহত আনোয়ার আলমের স্ত্রী মানছুরা বেগম জোসনা বলেন, আনোয়ার সিকিউরিটি ইনচার্জ হিসেবে চার বছর ধরে ওই কারখানায় কাজ করছেন। ঘটনার সময় তিনি নিচতলায় ছিলেন। আনোয়ার মাথায় ও মুখে বেশি আঘাত পেয়েছেন। দুই সন্তান জোবায়ের (১৯) ও জায়েদকে (১৭) নিয়ে টঙ্গী কলেজ গেইট এলাকায় থাকেন। তাদের গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর সদরের আলীপুর হাওলাদার বাড়ি।

ঢামেক হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে শিপন, শাহিন ও আনোয়ারের মতো আমিনুল ইসলাম রিজু, জাহাঙ্গীর আলম মৃধা, রোকন, প্রাণ কৃষ্ণ, ফেরদৌস ও জাকির হোসেন যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। চিকিৎসকরা বলছেন, তাদের সারিয়ে তুলতে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। এমনকি হাসপাতালে ওষুধের সাপ্লাই না থাকলেও বাইরে থেকে ওষুধ এনে তাদের দেওয়া হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর