রবিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

গিলে খাচ্ছে ২১৭২ অবৈধ দখলদার

হুমকিতে কর্ণফুলীনদী শেষ

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

গিলে খাচ্ছে ২১৭২ অবৈধ দখলদার

দখল-বেদখলে বিপর্যস্ত দেশের অন্যতম বৃহত্তম নদী কর্ণফুলী। দখলদাররা প্রতিনিয়ত ভরাট করছে। তৈরি করছে বসত, বাণিজ্যসহ নানা স্থাপনা। ভরাট করে ভাড়া দিচ্ছে প্রভাবশালী মহল। ভরাটের কবলে পড়ে কর্ণফুলী হারাচ্ছে নাব্যতা। কমছে নদীর প্রশস্ততা। ফলে ভবিষ্যতে দক্ষতা হারানোর শঙ্কা আছে চট্টগ্রাম বন্দরের।

তবে আদালতের নির্দেশে জেলা প্রশাসনের গঠিত কমিটি সরেজমিন তদন্ত করে ২ হাজার ১৭২ জন অবৈধ দখলদার চিহ্নিত করেছে। তৈরি হয়েছে অবৈধ দখলদারদের বাঁধাইকৃত ম্যাপ ও নামের তালিকা। দখলদাররা এখানে নির্মাণ করেছে সেমিপাকা ঘর, দালান, গোডাউন, কারখানা ও বস্তিঘর।

কর্ণফুলী নদীর তীর দখলমুক্ত করতে আদালত ১৬ আগস্ট একটি যুগান্তকারী রায় প্রদান করেন। আদালত অবৈধভাবে গড়ে ওঠা স্থাপনা সরাতে ৯০ দিন সময় বেঁধে দিয়েছেন। একই সঙ্গে নদীর তীর দখল করে যেসব প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে, রায় প্রাপ্তির সাত দিনের মধ্যে তা সরিয়ে নিতে স্থানীয় দুটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি জারির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্থাপনা সরানো না হলে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা,  বিআইডব্লিউটি-এর চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসককে এসব স্থাপনা অপসারণের ব্যবস্থা করতে বলা হয়। বিচারপতি মো. রেজাউল হাসান ও বিচারপতি কাশেফা হোসেনের দ্বৈত বেঞ্চ শুনানি শেষে এ রায় দেন।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, আদালতের নির্দেশে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ২০১৪ সালের ২০ অক্টোবর কর্ণফুলী নদীর সীমানা নির্ধারণ, নাব্যতা, স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ অব্যাহত রাখা ও দূষণরোধের উদ্যোগ নেয়। এ লক্ষ্যে আগ্রাবাদ সার্কেলের সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) আহ্বায়ক করে ১৬ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি ২০১৫ সালের ১৮ জুন আরএস এবং বিএস রেকর্ড অনুযায়ী কর্ণফুলী নদীর বর্তমান অবস্থান ও দখলদারদের চিহ্নিতকরণ সংবলিত বাঁধাইকৃত ম্যাপ এবং তাদের তালিকা তৈরি করে। গত বছর ১১ আগস্ট জেলা প্রশাসনের পক্ষে প্রতিবেদনটি হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার বরাবর প্রেরণ করা হয়।

কমিটির দাখিলকৃত প্রতিবেদন মতে, আরএস রেকর্ড মূলে কর্ণফুলী নদীর বাকলিয়া ও পূর্ব পতেঙ্গা মৌজায় সর্বমোট ২ হাজার ১১২ জন অবৈধ দখলদার এবং বিএস রেকর্ড মূলে বাকলিয়া, মাদারবাড়ী, গোসাইলডাঙ্গা, মনোহরখালী, ফিরিঙ্গি বাজার মৌজায় সর্বমোট ৬০ জন অবৈধ দখলদার চিহ্নিত করা হয়। এসব দখলদার নদীতীরে সেমিপাকা ঘর, দালান, গোডাউন, কারখানা, বস্তিঘর নির্মাণ করেছে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আবদুল জলিল বলেন, ‘আদালতের নির্দেশনা আমাদের কাছে এলে আমরা অবশ্যই এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করব। কারণ কর্ণফুলী দেশের জাতীয় সম্পদ। এটিকে রক্ষা করতে হবে।’

হাজী মুহম্মদ মুহসীন কলেজের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ইদ্রিস আলী বলেন, আদালতের নির্দেশনা মতে, কর্ণফুলী তীরের প্রায় ২৬০ একর ভূমি উদ্ধার করা এখন সময়ের দাবি। এর পরই দূষণ কমাতে জনসচেতনা সৃষ্টি করতে হবে। কারণ কর্ণফুলী নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা বন্দর দিয়ে দেশের ৯২ শতাংশ রাজস্ব আয় হয়।

অন্যদিকে দখলের কবলে পড়ে কমেছে নদীর প্রশস্ততা। বন্দরের হাইড্রোগ্রাফিক জরিপের তথ্যমতে, ১৯৮৯-৯০ সালে ব্রিজঘাট এলাকায় কর্ণফুলীর প্রস্থ ছিল ৮৭০ মিটার। একই জায়গায় ২০০৯-১০ সালের জরিপে প্রস্থ হয় ৬০০ মিটার। ১৯৯০ সালে চাক্তাই খালের মুখ এলাকায় প্রস্থ ছিল ৬৫০ মিটার। ২০১১ সালে তা হয় ৬০০ মিটার। গত ২৫ বছরে স্থানভেদে নদীর প্রশস্ততা কমেছে ৫০ থেকে ৩০০ মিটার।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর