সোমবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

খুলনায় বাড়ছে সামাজিক অপরাধ

বেকারত্ব, বিষণ্ন্নতা ও সম্প্রীতির অভাবকে দায়ী করেন বিশেষজ্ঞরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা

আলাদা ঘটনায় এক সপ্তাহের ব্যবধানে খুলনায় বাবার হাতে খুন হয়েছে দুই শিশু পুত্র। এই সময়ের মধ্যে ড্রেনে পাওয়া গেছে এক নবজাতকের লাশ। তিন বছরের শিশুর কানের সোনার দুল খুলে নিয়ে তাকে পথে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। নারী দিয়ে প্রলোভন দেখিয়ে চাঁদাবাজির ঘটনায় জড়িয়ে পড়েছেন পুলিশ কর্মকর্তাও। অপরাধ বিশেষজ্ঞ ও মানবাধিকার কর্মীদের দাবি, খুলনায় সামাজিক অপরাধ প্রবণতা ক্রমে বাড়ছে। প্রতিমাসে এখানে গড়ে ২০টির বেশি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। যার মধ্যে শিশু হত্যা, ধর্ষণ, নারী নির্যাতন ও পাচারের ঘটনা রয়েছে।

এসব অপরাধের পেছনে বেকারত্ব, বিষণ্নতা ও পারস্পরিক সম্প্রীতির অভাবকে বড় কারণ বলে মনে করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. আবদুল জব্বার। তিনি বলেন, পাশ্চাত্য সংস্কৃতি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার ও হতাশা বোধ সামাজিক মূল্যবোধকে ভেঙে দিয়েছে। পারিবারিক বন্ধন না থাকায় বাবা-মা-সন্তানের প্রতি দায়িত্ববোধও ভুলতে শুরু করেছে মানুষ। তিনি বলেন, আজকাল প্রকাশ্যে পুলিশকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ধূমপান করতে দেখা যায়। তেমনি হেলমেড ছাড়া মোটরসাইকেলে চলাফেরা করে তারা। যারা আইনের রক্ষক, তাদের মধ্যেই আইন ভাঙার প্রবণতা নিত্যনৈমিত্তিক। যার বাজে প্রভাব পড়ে সমাজেও।

জানা যায়, ১৫ আগস্ট রাতে খুলনা মহানগরীর নিরালা আবাসিক এলাকায় নারী দিয়ে প্রলোভন দেখিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগে পুলিশের উপ-পরিদর্শক সোহেল রানাসহ প্রতারক চক্রের ৪ সদস্য আটক হয়। ওই ঘটনায় মামলা দায়েরের পর উপ-পরিদর্শক সোহেল রানাকে পদচ্যুত করা হয়। ২৩ সেপ্টেম্বর ডুমুরিয়া উপজেলার দক্ষিণ মাগুরাঘোনা গ্রামে হাসানুল নামের এক শিশুকে তার বাবা হারুন-অর-রশিদ সরদার (৩০) বাড়ির উঠানে ছুড়ে ফেলে হত্যা করে। পুলিশ তার বাবাকে আটক করেছে। ডুমুরিয়া থানার সদ্য বদলি হওয়া ওসি তাজুল ইসলাম বলেন, নিহত শিশুটির বাবা একজন মাদকসেবী ছিলেন। স্ত্রীর কাছে নেশার টাকা না  পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি এ ঘটনা ঘটান বলে জানা গেছে। এর আগে ১৮ সেপ্টেম্বর নগরীর হরিণটানা থানার রাজবাঁধ এলাকায় সৎ বাবা আবু সাইদের হাতে খুন হয় পাঁচ বছরের ছেলে শিশু সিয়াম। পুলিশ এই ঘটনায় সৎ বাবাকে আটক করে। খুলনায় মোটরসাইকেলে হাওয়া দেওয়ার মেশিন দিয়ে পায়ুপথে বাতাস ঢুকিয়ে শিশু রাকিবকে হত্যার ঘটনাও ঘটেছে।

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা খুলনার সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম বলেন, খুলনায় মাদক ও সামাজিক অবক্ষয় অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। সেই সঙ্গে রয়েছে মামলার দীর্ঘসূত্রতায় অপরাধ করার পরও শাস্তি না হওয়া। তিনি বলেন, মনিটরিং না থাকায় নানা অপরাধের মধ্যে জড়িয়ে পড়ছে পুলিশ সদস্যরাও। এ অবস্থা থেকে উত্তোরণের জন্য আমাদের সামাজিক ও পারিবারিক বন্ধন আরও দৃঢ় করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

সর্বশেষ খবর