শুক্রবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

ছয় মাসেও নিয়োগ পাননি রেলের ১৪৫ চাকরিপ্রার্থী

হাইকোর্টের রায় উপেক্ষা

সাইদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম

রেলে নিয়োগের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মামলায় হাইকোর্টের আদেশেও ১৪৫ চাকরিপ্রার্থীর নিয়োগ দীর্ঘ ছয় মাসেও চূড়ান্ত করেনি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। রেলওয়ের দায়িত্বশীলরা আদালতের নির্দেশ না মেনে ‘অদৃশ্য’ কারণে এসব নিয়োগ চূড়ান্ত করছেন না বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

জানা যায়, বাংলাদেশ রেলওয়ে ২০০৯ সালে অফিস সহকারী কাম-টাইপিস্ট ও স্টেনো টাইপিস্ট পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ২০১০ সালে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা হওয়ার পর উত্তীর্ণদের চূড়ান্ত প্যানেলের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। নিয়োগটি প্রক্রিয়ার সব কাজ শেষ করার পরও প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ নানা কারণে নিয়োগটি স্থগিত রাখে। পরে চূড়ান্ত প্যানেল তালিকার উত্তীর্ণ প্রার্থীরা নিয়োগের জন্য রেলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। ২০১৬ সালের ২৪ এপ্রিল বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক রিভিউ রায়ের কপি হাতে পেলেও এখনো নিয়োগ দেওয়া হয়নি উত্তীর্ণ প্রার্থীদের।

এ বিষয়ে জানতে পূর্বাঞ্চল রেলের আইন কর্মকর্তা সালাউদ্দিনকে ফোন করা হলে তিনি ব্যস্ততার কথা বলে ফোন রেখে দেন। তবে অভিযোগ আছে, রেলের ওই আইন কর্মকর্তা বিভিন্ন মামলার পক্ষে-বিপক্ষের লোকদের কাছ থেকে ‘কৌশলে’ মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে রেলের বিরুদ্ধে কাজ করেন। পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) প্রকৌশলী আবদুল হাই বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আদালতের রায়ের প্রতি সব সময় সম্মান রেখেই কাজ করি। রেলের নিয়োগের বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা এখনো পাইনি। আদালতের রায়ের কপি পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ উত্তীর্ণ প্রার্থীরা অভিযোগ করেন, হাইকোর্টের রায় প্রদানের ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও আইনি বাধ্যবাধকতা উপেক্ষা করে রায় বাস্তবায়নে গড়িমসি করছে রেল কর্তৃপক্ষ। ১০০ জন অফিস সহকারী কাম-টাইপিস্ট ও ৪৫ জন স্টেনো টাইপিস্ট নিয়োগ আদেশের ফাইলটি বর্তমানে অতিরিক্ত সচিব (আইন শাখা) মো. হেমায়েত হোসেনের দফতরে পড়ে থাকলেও এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। এমনকি পিটিশনারদের নিয়োগ না দেওয়া পর্যন্ত একই পদে কোনো নিয়োগ না দিতে আদালতের স্থগিতাদেশ থাকলেও গত ২৮ আগস্ট ৬৬টি অফিস সহকারী কাম টাইপিস্ট পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে; যা আদালত অবমাননা বলে অভিযোগ তুলেছেন তারা। রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ রেলওয়ের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি নম্বর বাং রেঃ (পূর্ব)-৩/০৯, (তারিখ : ০৫.০৫.২০০৯) অনুযায়ী উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মধ্যে ২৮ জন নিয়োগ পেতে হাইকোর্টে রিট পিটিশন (নম্বর ৬৯৪২/২০১৩) দায়ের করেন। ২০১৪ সালের ১২ জুন হাইকোর্ট পিটিশনার এবং লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের নিয়োগ দিতে নির্দেশ দেয়। রেলওয়ে ওই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিমকোর্টে আপিল (নম্বর ৯৩৬/২০১৫) করলেও ২০১৫ সালের ১৬ নভেম্বর আপিল খারিজ করে হাইকোর্টের রায় বহাল রাখে আপিল বিভাগ। পরে বাংলাদেশ রেলওয়ে ওই রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন দায়ের করলে (নম্বর ৪৯/২০১৬) একই বছরের ১৩ মার্চ রিভিউ পিটিশনও খারিজ করে আগের রায় বহাল রাখে সর্বোচ্চ আদালত। গত ২৪ এপ্রিল বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক রিভিউ রায়ের কপি হাতে পেলেও এখনো নিয়োগ দেওয়া হয়নি উত্তীর্ণ প্রার্থীদের। প্রসঙ্গত, ২০২ জনের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পরও রেলওয়ে প্রশাসনের অন্যায্য কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ৩৬ জন অফিস সহকারী কাম-টাইপিস্ট ও ৮ জন স্টেনো টাইপিস্ট (মোট ৪৪ জন) হাইকোর্টে রিট পিটিশন (নম্বর ৫২৫৬/২০১১) দায়ের করলে পিটিশনারদের নিয়োগ দিতে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল (নম্বর ৩৩৫/২০১২) করলে ২০১২ সালের ২১ জানুয়ারি আপিল খারিজ করে দেওয়া হয়। বর্তমানে রিট আবেদনকারীরা রেলওয়ে চাকরিরত রয়েছেন। একইভাবে ১২ জন উত্তীর্ণ প্রার্থী হাইকোর্টে রিট আবেদন (৫৬৮৬/২০১১) করলে কোর্টের রায়ে প্রার্থীরা বর্তমানে রেলওয়ে কর্মরত রয়েছেন। একইভাবে হাইকোর্টের রিট পিটিশন নম্বর ৯৩৩৬/২০১০-এর মাধ্যমে ২ জন প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে রায় দেয় কোর্ট। পরে রেলের করা আপিল খারিজ হয়ে যায় ২০১৪ সালের ৭ জুলাই। অর্থাৎ কোর্টের রায়ে এ পর্যন্ত ৫৮ জন উত্তীর্ণ প্রার্থী চাকরিতে নিয়োগ পেলেও বাকিরা নিয়োগের বাইরে রয়ে গেছেন।

সর্বশেষ খবর