শনিবার, ১ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

গাণিতিক হারে বাড়ছে পারিবারিক অপরাধ

আপনজনরা হিংস্র হয়ে যাচ্ছেন

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

হিংসাত্মক হয়ে উঠেছে পরিবারের সদস্যরা। পারিবারিক ও আত্মার বন্ধন ভুলে পরমাত্মীয়রাই হয়ে উঠেছেন হিংস্র। কখনো পরকীয়া, কখনো অর্থনৈতিক লেন-দেন কিংবা তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঘটছে যত সব পারিবারিক অপরাধ। এমনকী পরিবারিক কলহের জের ধরে খুন ও আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটছে প্রতিনিয়ত। এসব ঘটনার সিংহ ভাগ শিকারই হচ্ছে নারী ও শিশু। গত কয়েক বছর ধরে চট্টগ্রামে গাণিতিক হারে বাড়ছে পারিবারিক অপরাধ। বিশেযজ্ঞরা বলছেন—সামাজিক অনুশাসন ও সুদৃঢ় বন্ধনই রোধ করতে পারে পারিবারিক অপরাধ।

সমাজবিজ্ঞানী ড. গাজী সালাহউদ্দিন বলেন, ‘পারিবারিক বন্ধন ও সামাজিক অনুশাসন সুদৃঢ় না হওয়ার কারণেই আপনজনরা হিংস্র হয়ে উঠছে। এ ছাড়া সমাজে অসম প্রতিযোগিতা এবং অর্থনৈতিক বৈষম্যের কারণে সর্বত্র নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ফলে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ঘটছে একের পর এক ঘটনা-দুর্ঘটনা। এ অবস্থা থেকে বের হতে হলে মেনে চলতে হবে সামাজিক অনুশাসন এবং সুদৃঢ় করতে হবে পারিবারিক বন্ধন।’

চট্টগ্রাম  বারের  সিনিয়র  আইনজীবী  ও নারীনেত্রী অ্যাডভোকেট নুর জাহান খান বলেন, ‘গত কয়েক বছর ধরে তুলনামুলকভাবে নারী ও শিশু নির্যাতন বেড়েছে। তবে যে পরিমাণ নারী ও শিশু নির্যাতনের শিকার হন, তার সিকিভাগও লোকলজ্জা ও অন্যান্য কারণে আইনের আশ্রয় গ্রহণ করে না।’

চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম নগরী ও জেলায় গত কয়েক বছর ধরে গাণিতিক হারে বেড়েছে নারী নির্যাতন মামলা। এ সব ঘটনায় সিংহ ভাগ নির্যাতনের শিকার হন নিজ গৃহে ও পরিবারের সদস্যদের হাতে। ২০১৫ সালে চট্টগ্রামের নগরী ও জেলার তিনটি ট্রাইব্যুনালে ৩ হাজার ৫৬৩টি মামলা হয়েছে। ২০১৪ সালে মামলার সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৫শ’ এবং ২০১৩ সালে যা ছিল ২ হাজার ৯৮৬টি মামলা। এ ছাড়া ২০১৫ সালের নগরীর ১৬ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা দায়ের হয় ৩৫৬টি।

২৬ সেপ্টেম্বর সাবেক স্বামী মো. জাহাঙ্গীরের ছোড়া এসিডে দগ্ধ হন শেলী আকতার ও তার মা হোসনে আরা বেগম। ১৭ সেপ্টেম্বর নগরীর বন্দর থানাধীন গোসাইভাঙা এলাকায় ‘মনে কষ্ট’ দেওয়ার  জন্য মা কুমকুম চৌধুরীকে কুপিয়ে হত্যা করে ছেলে সুমিত চৌধুরী। ১৬ সেপ্টেম্বর তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে  হাটহাজারীর  মেখল  ইউনিয়নে পিতা মো. মুছাকে কুপিয়ে হত্যা করে ছেলে মোহাম্মদ তারেক। পারিবারিক কলহের জের ধরে গত ১ এপ্রিল নগরীর কর্ণফুলী থানা শাহমিরপুর এলাকায় ছেলে মনির উদ্দিনের পাথরের আঘাতে খুন হন পিতা আলী আকবর মুন্সি। গত বছরের ১৩ অক্টোবর চাঁন্দগাওয়ে টাকা চেয়ে না পেয়ে বৃদ্ধ মা রওশন আক্তারকে ছুরিকাঘাতে খুন করে ছেলে জহিরুল হক।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর