শুক্রবার, ৭ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

পূজা শুরু আজ

প্রিন্স বিশ্বাস

বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে আজ শুরু হচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। আজ শুক্রবার সকালে ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে এর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। কাল শনিবার হবে সপ্তমী পূজা। মঙ্গলবার দেবীর প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিনব্যাপী এ উৎসব। এবার ঢাকায় ২২৭টিসহ সারা দেশে ২৯ হাজার ৩৯৫ মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দেশব্যাপী এ ধর্মীয় উৎসবকে নির্বিঘ্নে ও সুষ্ঠুভাবে উদ্যাপনের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েছে। পূজামন্ডপগুলোয় র‌্যাবের বিশেষ টহল দল ও গোয়েন্দা শাখার কর্মীরা নিয়োজিত থাকবেন। দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধানতম এই ধর্মীয় উৎসব ঘিরে সারা দেশে শুরু হয়েছে উৎসবের আমেজ। আনন্দময়ী দেবী দুর্গার আগমনী গানে মুখরিত এখন চারদিক। ঘরে ঘরে শুরু হয়েছে অতিথি আপ্যায়ন। বাহারি পোশাকে আর অঙ্গসজ্জায় নিজেদের সাজিয়ে রাঙিয়ে উৎসব-আনন্দে মেতে উঠেছে শিশু-কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণী। পঞ্জিকা মতে, এ বছর মর্ত্যলোকে (পৃথিবীতে) দেবীর আগমন ঘটছে ঘোটকে (ঘোড়ায়) চড়ে। আর দেবীর গমনও ঘটবে ঘোটকে চড়ে। এতে ঝড়, তুফান, বজ্রপাতসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেড়ে যাবে। তবে সনাতন বিশ্বাস মতে, দেবী তার অশেষ কৃপায় সবাইকে রক্ষা করেন।

জানা যায়, এ দেশে তৎকালীন শ্রীহট্টের (সিলেট) রাজা গণেশ পঞ্চদশ শতকে প্রথম দুর্গাপূজা করেন। ষোড়শ শতকে রাজশাহী অঞ্চলের রাজা কংসনারায়ণ দুর্গাপূজা করেন। অষ্টাদশ শতকে নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র দুর্গাপূজা করেন।

আগে রাজা, জমিদার, মহাজন তথা বিত্তবানরা আত্মীয়স্বজন সমন্বয়ে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে ধুমধাম করে প্রতিযোগিতার মনোভাব নিয়ে দুর্গাপূজা করতেন। সাধারণ মানুষকে তাদের প্রতিযোগিতা দেখেই সন্তুষ্ট থাকতে হতো। কিন্তু কালের বিবর্তনে এখন মায়ের পূজা সর্বজনীন রূপ লাভ করেছে। ধনী-গরিব-গোত্র-বর্ণ সবাই একসঙ্গে প্রার্থনা করে মায়ের চরণে।

দুর্গোৎসব চলাকালে রাজধানীর পূজামণ্ডপে প্রতিদিনই অঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ ও ভোগ-আরতি হবে। এ ছাড়া পূজামণ্ডপগুলোয় আলোকসজ্জা, আরতি প্রতিযোগিতা, স্বেচ্ছায় রক্তদান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে ১১ অক্টোবর সরকারি ছুটি থাকবে।

রাজধানীতে কেন্দ্রীয় পূজামণ্ডপ ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে মহাঅষ্টমীর দিন দুপুরে মহাপ্রসাদ বিতরণ, মহানবমীর সন্ধ্যায় আরতি প্রতিযোগিতা এবং দশমী পূজার দিন সকালে স্বেচ্ছায় রক্তদান ও বিকালে বিজয়া দশমীর শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। রামকৃষ্ণ মিশনে এ বছরও রবিবার মহাঅষ্টমী ও কুমারী পূজা হবে। এ ছাড়া ঐতিহ্যবাহী রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ী আশ্রমে দুর্গাপূজা উপলক্ষে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

দুর্গাপূজা উপলক্ষে স্বামীবাগের লোকনাথ ব্রহ্মচারীর আশ্রম ও মন্দিরসহ বিভিন্ন মন্দির ও সংগঠনের মণ্ডপে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ডি-ব্লকের ৫ নম্বর রোডে মেহেদী মার্টের সামনে এবার দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। নিরাপত্তাব্যবস্থার সার্বিক তত্ত্বাবধানে বসুন্ধরা গ্রুপের নিজস্ব নিরাপত্তাকর্মীদের পাশাপাশি থাকছে পুলিশ সদস্যরাও। এ ছাড়া পূজামণ্ডপ এলাকার চারপাশ সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় থাকছে। এ ছাড়া ধানমন্ডি, রমনা কালী মন্দির, পুরান ঢাকার শাঁখারী বাজার, তাঁতী বাজার, জগন্নাথ হল, সূত্রাপুর, রামপুরা, বনশ্রী, উত্তরা, ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণ, বনানী পার্কসহ বিভিন্ন মণ্ডপে দুর্গোৎসবের বর্ণিল আয়োজন করা হয়েছে।

গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন পূজামণ্ডপ ঘুরে দেখা যায় প্রতিমার গায়ে অলঙ্কার জড়ানো, রংতুলির শেষ টান, প্যান্ডেল তৈরি, আলোকসজ্জার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন প্রতিমা কারিগর ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর