শনিবার, ৮ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

অস্থির চালের বাজার চিনি নিয়ে ছিনিমিনি

বাজার দর

মোস্তফা কাজল

অস্থির চালের বাজার চিনি নিয়ে ছিনিমিনি

বেসামাল রাজধানীর চালের বাজার। কয়েক দিনের ব্যবধানে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে পাঁচ থেকে ছয় টাকা বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে গরিবের চাল নামে পরিচিত স্বর্ণা (মোটা চাল) ও বিআর-২৮ নামের চালের দাম। বাজার করতে আসা ভুক্তভোগীরা বলছেন, কোনো ধরনের যৌক্তিক কারণ ছাড়াই পাইকারি ও খুচরা বাজারে হু হু করে বাড়ছে চালের দাম। গতকাল রাজধানীর মিরপুর, কারওয়ান বাজার ও বারিধারা বাজার ঘুরে পাওয়া গেছে এসব তথ্য। চিনি নিয়ে ছিনিমিনি চলছেই। গতকাল এক কেজি চিনি বিক্রি হয়েছে ৬৮ থেকে ৭০ টাকায়।

তবে বিক্রেতারা বলছেন, এক থেকে দেড় সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) চালের দাম বেড়েছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা। ব্যবসায়ীরা এর পেছনে সন্তোষজনক কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারছেন না। অনেকে বলছেন, দেশের বন্যা পরিস্থিতির কথা। আবার কেউবা বলছেন, এর পেছনে দায়ী মালিকরা। তবে অজুহাত যা-ই হোক, পাইকারি বাজারের প্রভাব পড়ছে চালের খুচরা বাজারে। অন্যান্য চালের দামও কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা বেড়েছে। চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, মৌসুমের শেষ দিকে এসে ধান সরবরাহ কমে যাওয়ায় এবং সরকারিভাবে ধান-চাল সংগ্রহের কারণে মোটা চালের দাম কেজিতে পাঁচ থেকে ছয় টাকা বেড়েছে। বাদামতলী-বাবুবাজার চাল আড়তদার সমিতির যুগ্ম-সম্পাদক বাবর আলী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাজারে চালের সংকট নেই। দেশের বিভিন্ন বাজারে যে পরিমাণ চাল মজুদ রয়েছে, তা দিয়ে আগামী ছয় মাস পর্যন্ত চালানো সম্ভব।

যেভাবে বেচা-বিক্রি : চালের খুচরা বাজারে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে মোটা চালের দাম বেড়েছে কেজিতে পাঁচ-ছয় টাকা। মাসখানেক আগেও মোটা জাতের গুটি ও স্বর্ণা চালের দাম কেজি ২৮-২৯ টাকা ছিল। এরপর তা কয়েক দফায় বেড়েছে। গতকাল গুটি ও স্বর্ণা বিক্রি হয়েছে ৩৪ ও ৩৬ টাকায়। এ ছাড়া মিনিকেট চালের দাম ছিল কেজি ৪১-৪২ টাকা। বর্তমানে এ চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৪ থেকে ৪৬ টাকায়। মোকাম থেকে ওই চাল ঢাকায় আনতে কেজিতে আরও এক থেকে দুই টাকার বেশি খরচ হচ্ছে। ফলে লাভ রাখতে মিনিকেট চাল তাদের বিক্রি করতে হচ্ছে প্রতি কেজি ৪৬ থেকে ৪৮ টাকায়। আর খুচরা বাজারে তা বিক্রি করতে হচ্ছে ৪৭-৪৮ টাকায়। রাজধানীর মিরপুর ১ নম্বর শাহআলী বাজারের বিল্লাল রাইস এজেন্সির মালিক বিল্লাল হোসেন বলেন, এবার সরকার চাল দেরি করে কিনছে। এ ছাড়া সারা দেশে মোটা ধানের আবাদ তুলনামূলক কম হয়েছে। ফলে দাম বাড়ছে। তবে পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, চালের দাম বাড়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। কারণ আসন্ন কার্তিকে দেশে আমনের নতুন ধান উঠবে। এ অবস্থায় মিলাররা অতিরিক্ত মুনাফার লোভে দাম বাড়িয়েছেন। আগে মোকাম-মালিকরা চাল সরবরাহের পর পাইকারি ব্যবসায়ীরা সুবিধামতো দামে বিক্রি করতেন। কিন্তু এক মাস আগে মিল মালিকরা মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কমে বিক্রি করলে এর দায় ব্যবসায়ীদেরই নিতে হচ্ছে। মিল মালিকরা প্রতিদিনই চালের দাম বাড়াচ্ছেন বলেও জানান পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশ রাইস এজেন্সিস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মিন্টু মিয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সরকারি গুদামে চালের সরবরাহ প্রায় শেষের দিকে। তাই মোটা চালের বাজারে দামের কিছুটা হ্রাস-বৃদ্ধি মোটেও অস্বাভাবিক নয়। এ ছাড়া চিকন জাতের জিরাশাইল, মিনিকেটসহ কিছু জাতের ধানের চাষ বছরে একবারই হয়। তাই মৌসুমের শেষ দিকে সেসব জাতের চাল পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ে। তবে সংশ্লিষ্টদের মতে, চালের দাম বাড়ার এ প্রবণতা শুরু হয়েছে দীর্ঘদিন পর। কৃষকদের সুরক্ষা দিতে চলতি অর্থবছর চাল আমদানির শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করেছে সরকার। এ ছাড়া এ মৌসুমে সরকারি চাল ক্রয়ের মূল্য ধরা হয়েছে কেজিপ্রতি ৩২ টাকা, যা উৎপাদন খরচের চেয়ে কেজিতে পাঁচ টাকা বেশি। এ দুটি কারণেই চালের দাম বাড়ছে। পাশাপাশি গত বোরো মৌসুমে মোটা ধানের আবাদ কমে যাওয়াও দাম বাড়ার একটি বড় কারণ বলে উল্লেখ করেন এ ব্যবসায়ী। তবে চালের দাম বাড়ার সুফল কৃষকরা পাচ্ছেন না। কারণ মৌসুমের শুরুতেই মিল মালিকদের কব্জায় চলে যায় অধিকাংশ ধান।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর