বুধবার, ১২ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

চট্টগ্রামে চালের বাজার অস্থির, অস্বস্তিতে ক্রেতা

মোকামে নজরদারির পরামর্শ সংশ্লিষ্টদের

প্রতিদিন ডেস্ক

১৫ টাকা কেজিতে খোলা বাজারে চাল বিক্রির ঘোষণায় মোকামে মোটা সিদ্ধ চালের বাজারে যে ঊর্ধ্বগতি ছিল তা থেমেছে। চট্টগ্রামে এখন চালের বাজার থমথমে। ওএমএস কার্যক্রম চালু হলে মানুষ স্বস্তি পাবে। খবর বাংলা নিউজ।

সূত্র জানায়, নওগাঁ, দিনাজপুরের চালের মোকামে নজর দেওয়ায় প্লাস্টিক বস্তার পরিবর্তে চটের বস্তা ব্যবহারে যেমন সাফল্য এসেছে তেমনি একই পদ্ধতিতে মোটা চালের দামও কমবে বলে মনে করছেন চট্টগ্রামের আড়তদাররা। উৎপাদকদের ‘সিন্ডিকেট’ সক্রিয় থাকায় চালের দাম অস্বাভাবিক বাড়ছে মনে করেন তারা। বৃহত্তর চট্টগ্রামে চালের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার পাহাড়তলী ও চাক্তাইয়ের আড়তদার এবং পাইকারদের সঙ্গে আলাপকালে তারা এসব তথ্য জানান।

পাহাড়তলী বণিক সমিতির সভাপতি বাবুল হক সওদাগর বলেন, মোটা চালের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে এটা সত্য। এর জন্য যদি সিন্ডিকেট গড়ে ওঠা দায়ী হয় তবে সেটি মোকামে। আমরা বেশি দামে কিনে এনেছি তাই সীমিত লাভে বিক্রি করছি। চটের বস্তা ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার ক্ষেত্রে যেমন  মোকামে নজর দেওয়ায় সাফল্য এসেছে তেমনি চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যও মোকামে নজরদারি বাড়াতে হবে। চাক্তাইয়ের একজন শীর্ষস্থানীয় চাল ব্যবসায়ী বলেন, নওগাঁ ও দিনাজপুরের চালকল মালিকরা বলছেন বেশি দামে ধান কিনতে হচ্ছে বলে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। আবার কেউ কেউ বলছেন নতুন ধান কৃষকের গোলায় ওঠা পর্যন্ত হলেও সরকার যদি ভারত থেকে মোটা চাল আমদানির ওপর শুল্ক কমায় তবে কম পড়তা পড়বে, কম দামে মানুষ চাল পাবে।

তিনি জানান, কোরবানির আগে প্রতি কেজি মোটা চালে দুই টাকা কমেছিল। এখন তা আবার বেড়েছে। মোটা সিদ্ধ কোরবানির আগে ২৮ টাকা ছিল, এখন তা ৩১ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে পাইকারিতে। বেতি আতপ চালের ৫০ কেজির বস্তা ছিল দেড় হাজার টাকা, এখন তা ১ হাজার ৭০০ টাকা। এ দুটিই চালের বাজারে কাটতি বেশি।

চট্টগ্রাম চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর আজম  জানান, প্রতি বছর এ মৌসুমে ধান ও চালের দাম বাড়তি থাকে। অন্য বছরগুলোতে এ সময় চাল আমদানি হতো। এবার হয়নি বলেই দামটা বেশি বেড়ে গেছে। চট্টগ্রামের প্রসিদ্ধ চালের আড়ত ও কলগুলো চাক্তাই এলাকায় বেশি হলেও ইদানীং পাহাড়তলী চাল বাজারই বেশি সরগরম হয়ে উঠছে। সেখানে শতাধিক আড়ত ও চারটি চালকল রয়েছে। এর বাইরে বহদ্দারহাট, কাঠগড়, আতুরার ডিপো, ইশান মিস্ত্রির হাট, কামাল  বাজারসহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট আড়ত গড়ে উঠেছে। যেখানে নওগাঁ, দিনাজপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, ময়মনসিংহের (মুক্তাগাছা) বিভিন্ন মোকাম থেকে সরাসরি চাল আসছে। আড়তদাররা জানান, চট্টগ্রামে জিরাশাইল চালটি বেশি চলে। নওগাঁ থেকে আসে। সেখানে রজনীগন্ধা ব্র্যান্ডের যদি দাম বাড়ে তবে অন্যরাও দাম বাড়ায়। রজনীগন্ধার দাম কমলে অন্যরাও কমায়। চট্টগ্রামে একেকটি ট্রাকে ৩০০ বস্তা (১৫ টন) করে চাল আসে। গাড়ি ভাড়া পড়ে ১৭-১৮ হাজার টাকা। প্রতি বস্তায় আড়তদারের ৩ টাকা আনলোড, ৫ টাকা লোড খরচ রয়েছে। এরপর বস্তাপ্রতি ১০-২০ টাকা লাভে বিক্রি করতে হয়। খুচরা পর্যায়ে বেশি দাম নেওয়া হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে একজন আড়তদার বলেন, অনেক খুচরা ব্যবসায়ী সুযোগ বুঝে ক্রেতাদের গলা কাটেন। কিন্তু তারাও যে খুব বেশি লাভ করছেন তা কিন্তু নয়। একটি চটের বস্তার ওজন ৬০০-৮০০ গ্রাম। তার অর্থ ৫০ কেজিতে ওই পরিমাণ চাল কম পাচ্ছে খুচরা ক্রেতা। এরপর সে যখন ৫-১০ কেজি করে বিক্রি করে তখন তার সিস্টেম লস হয় ১ কেজি। এরপর পরিবহন ও লোড-আনলোডের সময় অনেক চাল কমে যায়। সবচেয়ে বড় কথা, এখন অনেক খুচরা ক্রেতাও আড়তে এসে বস্তা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। মেসার্স হাফেজ অটো রাইস মিলের ব্যবস্থাপক ভুট্টু চক্রবর্তী জানান, আমাদের মিলে মাসে ৩ হাজার ৫০০ বস্তা চাল উৎপাদন হয়। এক মণ ধানে ২৭ কেজি চাল হয়। সমস্যা হচ্ছে এখন ধানের সংকট চলছে। বেশি দামে ধান কিনতে হচ্ছে। অথচ এমন সময়ও গেছে ৩৫০ টাকা ছিল ধানের মণ। নতুন ধান কৃষকের ঘরে উঠলেই দাম কমবে চালের। পাহাড়তলী বাজারে মানভেদে ৫০ কেজির প্রতি বস্তা মোটা সিদ্ধ ১ হাজার ৬০০ টাকা, মোটা সিদ্ধ স্বর্ণা ১ হাজার ৮৫০ টাকা, মিনিকেট ১ হাজার ৯০০ টাকা, পাইজাম সিদ্ধ ১ হাজার ৯২০ টাকা, জিরাশাইল ১ হাজার ২০০ টাকা, আতপ কাটারি ২ হাজার ৩০০ টাকা, মিনিকেট ১ নম্বর ১ হাজার ৮০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৯০০ টাকা, চিনিগুঁড়া ৪ হাজার ৫৫০ থেকে ৪ হাজার ৬৫০ টাকা, পাইজাম সিদ্ধ ১ হাজার ৯৩০ টাকা, রজনী জিরাশাইল ২ হাজার ২৮০ টাকা, হাফসিদ্ধ পাইজাম নাজির ২ হাজার ৫০০ টাকা, কাটারি নাজির ২ হাজার ৬০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর