শনিবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

চট্টগ্রাম ও খুলনায় মেগা প্রকল্প

কর্মসংস্থান হবে লাখ লাখ মানুষের

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামের পাঁচ মেগা প্রকল্প ঘিরে স্বপ্ন দেখছে দেশ। চীনের বিনিয়োগে এ পাঁচ মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে পাল্টে যাবে দেশের অর্থনৈতিক চিত্র। উন্মোচিত হবে নতুন এক অর্থনৈতিক দিগন্ত। এতে বিনিয়োগ হবে হাজার হাজার কোটি ডলার। কর্মসংস্থান হবে লাখ লাখ মানুষের।

চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘এ পাঁচ মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে পাল্টে যাবে চট্টগ্রাম তথা দেশের চেহেরা। দেশে বিনিয়োগ হবে হাজার হাজার কোটি ডলার। কর্মসংস্থান হবে লাখ লাখ মানুষের। আজকের দিনটা বাংলাদেশিদের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’

খাতুনগঞ্জ ট্রেড এ ইন্ডাস্ট্রিজের সাংগঠনিক সম্পাদক জামাল হোসেন বলেন, ‘এ পাঁচ মেগা প্রকল্পই বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার সিঙ্গাপুরে পরিণত করবে। এ প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে দেশের আমদানি-রপ্তানি বাড়বে। একই সঙ্গে বাড়বে রাজস্বও।’ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, কর্ণফুলী নদীকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে বড় ধরনের বিনিয়োগ করতে আগ্রহী চীন। এ মেগা প্রকল্পগুলো হচ্ছে কর্ণফুলী নদীর ওপর একটি টানেল নির্মাণ, টানেলের পাশে একটি স্যাটেলাইট শহর গড়ে তোলা, কর্ণফুলী তীরে চীনের বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলও গড়ে তোলা, চট্টগ্রামের সঙ্গে ঢাকার একটি এক্সপ্রেস রেল লাইন নির্মাণ এবং চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ৩০০ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভ সড়ক ও উপকূল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প। এর মধ্যে শুক্রবার ডেভেলপমেন্ট অব ন্যাশনাল আইসিটি ইনফ্রা নেটওয়ার্ক ফর বাংলাদেশ গভর্নমেন্ট ফেজ-৩ এবং কনস্ট্রাকশন অব টানেল আন্ডার দ্য রিভার কর্ণফুলী উদ্বোধন করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও চীনা প্রেসিডেন্ট। এ দুই প্রকল্পের মাধ্যমে চট্টগ্রামের শিল্পায়নের নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে। টানেল ও বিশেষ শিল্পাঞ্চল পাল্টে দেবে পুরো এলাকা তথা দেশের চেহারা। জি টু জি পদ্ধতিতে আনোয়ারায় ৭৭৪ একর জমির প্রকল্পে ১৬ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে চায় চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি। বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে ৩৭১ শিল্প-কারখানায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য চীনা বিনিয়োগকে বলা হচ্ছে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা বৃহৎ বিদেশি আর্থিক প্রণোদনা। শিল্পাঞ্চলটিতে শতভাগ বিনিয়োগ থাকবে চীনের। সেখানে সরকারের ৩০ শতাংশ আর চীনা বিনিয়োগকারীদের ৭০ শতাংশ অংশীদারিত্ব থাকবে। অর্থনৈতিক অঞ্চলেটি তৈরি পোশাক, রাসায়নিক, চিকিৎসা ও অপারেশনের যন্ত্র, প্লাস্টিক, ফার্মাসিউটিক্যালস, টেলিযোগাযোগ, কৃষিনির্ভর শিল্প কারখানা, যন্ত্রপাতি, ইলেক্ট্রনিকস, টেলিভিশন, মনিটর, আইটি ও আইটি সম্পর্কিত কারখানা গড়ে উঠবে। এরই মধ্যে জেলা প্রশাসন ২৯১ একর খাস জমি বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) কাছে হস্তান্তর করেছে। আরও ৪৮৪ একর জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ পর্যায়ে। এ অর্থনৈতিক জোনের কাজ ২০১৭ থেকে শুরু হয়ে শেষ হবে ২০২০ সালে। এর অবকাঠামো উন্নয়নসহ প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ করার জন্য সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৪২০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।

মংলা বন্দরের উন্নয়নে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর : মংলা বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে মেগা প্রকল্পের প্রাথমিক সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনা রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের উপস্থিতিতে গতকাল বিকালে যৌথভাবে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। জানা গেছে, চুক্তির আওতায় মংলা বন্দরের উন্নয়নে ৮টি খাতের ‘মংলা বন্দরের সুবিধাদি সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন’ প্যাকেজ প্রকল্পের আওতায় বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কনটেইনার হ্যান্ডলিং টার্মিনাল, কনটেইনার ইয়ার্ড, কনটেইনার ডেলিভারি ইয়ার্ড, মাল্টি স্টোরেজ কার ইয়ার্ড (শেড) নির্মাণ করা হবে। পাশাপাশি মংলার দিগরাজ থেকে পোর্ট এলাকার প্রায় ১০ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ, পশুর চ্যানেলে ডুবে যাওয়া পুরাতন বড় জাহাজ (র‌্যাক) উদ্ধার করে নাব্যতা সৃষ্টি, ৫টি জেটির ভাঙন প্রতিরোধ ও মোবাইল স্ক্যানার ব্যবস্থা থাকছে প্রকল্পে। যা বাস্তবায়ন হলে বছরে ৪ লাখেরও বেশি কনটেইনার হ্যান্ডলিং করার সক্ষমতা অর্জন করবে মংলা বন্দর। চায়না ন্যাশনাল কমপ্লিট ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন এ সমঝোতা চুক্তির সম্ভাব্যতা যাচাই করে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেবে বলে জানা গেছে।  মংলা বন্দর সূত্রে জানা যায়, মংলা বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির (ইকুইপমেন্ট) স্বল্পতা দীর্ঘদিনের। শুল্ক বিভাগের স্ক্যানার না থাকায় কার্গো পরীক্ষা-নিরীক্ষায় সময় অপচয় হয়। শেড না থাকায় বন্দরের যেখানে-সেখানে খোলা আকাশের নিচে রাখতে হয় হাজার হাজার কোটি টাকা মূল্যের অসংখ্য গাড়ি ও মূল্যবান পণ্য। বন্দরে বার্ষিক মালামাল হ্যান্ডলিং ক্ষমতার প্রায় ৫০ শতাংশই অব্যবহূত থাকছে। মংলা বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল রিয়াজউদ্দীন আহমেদ বিএন জানান, এ প্যাকেজ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে মংলা বন্দরের ৯০ ভাগ অবকাঠামোগত সংকট দূর হবে। দক্ষিণাঞ্চলের সম্ভাবনাময় বন্দরটির ব্যবসা-বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হবে। জানা যায়, নানা সীমাবদ্ধতার কারণে দেশের মোট আমদানির শতকরা ৬ থেকে ৮ ভাগ মংলা বন্দর দিয়ে আমদানি হয়। বন্দরের আউটার বার এলাকায় ড্রেজিং না করায় আকরাম পয়েন্ট ও হারবারিয়া এলাকায় বেশি ড্রাফটের (বড় জাহাজ) জাহাজ আসতে পারে না। আবার পশুর চ্যানেলে অনেকগুলো জাহাজ ডুবে আছে। ফলে জাহাজ চলাচলেও বাধার মুখে পড়তে হয়। মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চিফ প্ল্যানিং মো. জহিরুল হক জানান, এ প্যাকেজ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বন্দরের সক্ষমতা বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। পদ্মা সেতু ও রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হলে প্রতিবেশী দেশগুলো বন্দর ব্যবহারে আগ্রহী হবে। তখনকার চাপ সামাল দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করবে মংলা বন্দর। বর্তমানে মংলা বন্দরে বছরে ৬০ থেকে ৭০ হাজার কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বছরে ৪ লাখেরও বেশি কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হবে।

সর্বশেষ খবর