বুধবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

সেতু নির্মাণ বন্ধ, দুর্ভোগে মানুষ

মাহমুদ আজহার, দাপুনিয়া (ময়মনসিংহ) থেকে ফিরে

সেতু নির্মাণ বন্ধ, দুর্ভোগে মানুষ

সুতিয়া নদীর উপর ব্রিজ নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকায় ‘বিকল্প’ বেইলি ব্রিজ দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিনই সাধারণ মানুষ যাতায়াত করছে। ছবি : বাংলাদেশ প্রতিদিন

ময়মনসিংহের দাপুনিয়া বাজার-সংলগ্ন সুতিয়া নদীর ওপর নির্মাণাধীন ছোট একটি সেতু নির্মাণ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগের শেষ নেই এলাকাবাসীর। বিশেষ করে চরম বেকায়দায় পড়েছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। দাপুনিয়া এলাকায় বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অন্তত আট হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। তারা ওই সেতু দিয়েই যাতায়াত করে থাকে। এদের মধ্যে বড় একটি অংশই শিশু। নির্মাণাধীন সেতুর ‘বিকল্প’ হিসেবে তৈরি করা হয়েছে ‘বেইলি ব্রিজ’। তাও আরেক যন্ত্রণার। ওই ব্রিজেরই আগে সংস্কার জরুরি হয়ে পড়েছে। সেখানে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন বয়োবৃদ্ধ আর মহিলারাও। বর্ষা, কাদা আর অকেজো ব্রিজ—এ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার শেষ নেই দাপুনিয়াবাসীর। সম্প্রতি সরেজমিন ঘুরে এ দুর্ভোগের চিত্র লক্ষ্য করা গেছে।

ময়মনসিংহ সদরের কাছাকাছি ব্যবসার প্রাণকেন্দ্র দাপুনিয়া বাজারে যাতায়াতে সর্বস্তরের ভোগান্তির শেষ নেই মানুষের। ফুলবাড়িয়া থেকে ঢাকাগামী যাত্রী পরিবহন এস আলম, এশিয়াসহ সাধারণ যানবাহনের সৃষ্ট যানজট অনেক সময় রাজধানী ঢাকার মাত্রাও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিনই ঘণ্টার পর ঘণ্টা বেইলি ব্রিজের দুই পাশে যানজট লেগেই থাকছে। এটি দেখার যেন কেউ নেই।

এ প্রসঙ্গে ডি কে ইসলামিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোখলেসুর রহমান আক্ষেপ করে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে  বলেন, ‘এর চেয়ে ভয়াবহ দুর্ভোগ বলতে কিছু নেই। এখন যে বিকল্প ব্রিজ রয়েছে, তা দিয়ে হাঁটাও যায় না। অটোরিকশা উল্টে যাচ্ছে। নানা দুর্ঘটনা ঘটছে। দ্রুত ব্রিজ নির্মাণের কাজ শেষ হওয়া জরুরি। এতে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে।’ স্থানীয়দের অভিযোগ, এই ছোট্ট সেতুটির কয়েক দফায় নির্মাণকাজ শুরু হলেও অজ্ঞাত কারণে তা বন্ধ রয়েছে। শুকনো মৌসুমে দুই থেকে তিন মাসে সেতুটির নির্মাণকাজ করা সম্ভব ছিল। সেখানে একটি বছর পার হয়েছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ এখন অবশ্য বলছে, বর্ষার কারণে নির্মাণকাজ করা যাচ্ছে না। স্থানীয়রা বলছেন ভিন্ন কথা। চাঁদা না পাওয়ায় প্রভাবশালী একটি মহল সেতু নির্মাণের কাজ বন্ধ রেখেছেন। এখন আবার বর্ষার কারণে কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। তবে সম্প্রতি ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান ওই এলাকা পরিদর্শন করে দ্রুত সেতুটি নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন। বর্ষা শেষ হলেই সেতুটি নির্মাণের কাজ শুরু হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, নির্মাণাধীন সেতুর পাশেই বিকল্প একটি বেইলি ব্রিজ তৈরি করা হয়েছে। ওই ব্রিজও চলাচলের অনুপযোগী। ভাঙাচোরা ওই ব্রিজে চলাচলের সময় পা আটকে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। সেখানে ঘটেছে বেশ কিছু দুর্ঘটনা। যাত্রী পরিবহনও দুর্ঘটনায় পড়েছে। অটোরিকশা উল্টে পড়ছে। অনেকেই নদীতে পড়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া ব্রিজের দুই পাশে কাদামাটি থাকায় বর্ষায় চরম দুর্ভোগ লক্ষ্য করা গেছে। এ নিয়ে চরম দুঃসহ জীবন-যাপন করছেন ময়মনসিংহ ও ফুলবাড়িয়া রোডে যাতায়াতকারীরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দাপুনিয়ায় বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে দাপুনিয়া কাউয়ালটি (ডি কে) ইসলামিয়া উচ্চবিদ্যালয়ে এসএসসি ও জেএসসির পরীক্ষার কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে।

 এ ছাড়া ডি কে জি এস আইমুন্নেছা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, ডি কে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হলি চাইল্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, হলি চাইল্ড ইন্টারন্যাশনাল কলেজ, ডি কে ডিএস ইউনাইটেড কলেজ, আইডিয়াল মডেল একাডেমি, অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, দাপুনিয়া মডেল মাদ্রাসা, দাপুনিয়া ক্যাডেট মাদ্রাসাসহ বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে এখানে। অদূরেই গোষ্টা দাখিল মাদ্রাসা। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রায় আট হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এসব প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের ওই ব্রিজ দিয়ে চলাচল করতে হয়। ব্রিজের উভয় পারে যানজটের কারণে সময়মতো স্কুলে যেতে পারছে না শিক্ষার্থীরা। ব্রিজে কোমলমতি অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। এ ছাড়া দাপুনিয়ার বৃহৎ বাজারেও হাজার হাজার মানুষের যাতায়াত। তাদেরও কষ্টের শেষ নেই।

স্থানীয়রা জানান, বিকল্প বেইলি ব্রিজটি এতটাই সরু যে, একটি গাড়ি চললে অন্য প্রান্তের গাড়িগুলো লাইনে দাঁড় করিয়ে রাখতে হয়। এতে দাপুনিয়া বাজারের দুই পাশে প্রতিদিনই তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে দাপুনিয়া বাজারের দিন ওই ব্রিজ পার হতে দুই থেকে তিন ঘণ্টা লেগে যায়। রাজধানী ঢাকায়ও এমন যানজটের সৃষ্টি হয় না বলে মনে করেন তারা।

এ প্রসঙ্গে ডি কে জিএস আইমুন্নেছা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. কবির হোসেন বলেন, ‘ব্রিজ নির্মাণে বিলম্ব হওয়ায় ছাত্রীদের দুর্ভোগের শেষ নেই। বর্ষা মৌসুমে কী যে দুর্ভোগ তা বলে বোঝানো যাবে না। আমরা আশা করি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অতি দ্রুত ব্রিজের নির্মাণকাজ শেষ করবে।’

একই কথা বলেন হলি চাইল্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্রধান শিক্ষক নাজমুল হোসাইন। তিনি বলেন, বিকল্প ব্রিজেও প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। এ ব্রিজে ছাত্র-ছাত্রীদের পারাপার নিয়ে আমাদের পাশাপাশি অভিভাবকদের উৎকণ্ঠার শেষ নেই।

সর্বশেষ খবর