সোমবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

থানায় ওসি পদে ফের ক্যাডার নিয়োগে তোড়জোড়

মাঠ পর্যায়ে অসন্তোষ ক্ষোভ

বিশেষ প্রতিনিধি

থানায় ওসি পদে ফের ক্যাডার নিয়োগে তোড়জোড়

থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিসেবে ফের সহকারী পুলিশ সুপার (বিসিএস ক্যাডার) পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের নিয়োগে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো (অর্গানোগ্রাম) পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত না হলেও কিছু থানায় পরীক্ষামূলকভাবে এএসপি নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। আর এ খবরে মাঠপর্যায়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে অসন্তোষ। শনিবার সন্ধ্যায় এ নিয়ে বৈঠকে বসেন নন-ক্যাডার পুলিশ কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা। বৈঠকে রাজধানী ও আশপাশ এলাকার বিভিন্ন থানার ওসিসহ শতাধিক ইন্সপেক্টর ও সাব-ইন্সপেক্টর উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে পুলিশ সদর দফতরের এ সিদ্ধান্তে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বিষয়টি নিয়ে পুলিশপ্রধানসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনার জন্য সাত সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করা হয়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, থানায় ক্যাডার কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া শুধু পুলিশের সংস্কারই নয় বরং এতে পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা বাড়বে এবং জনগণ উপকৃত হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও ডিএমপির চকবাজার থানার ওসি শামীম অর রশীদ তালুকদার বলেন, পুলিশ একটি সুশৃঙ্খল বাহিনী। এখানে আন্দোলনের কোনো সুযোগ নেই। আলোচনার মাধ্যমেই তারা বিষয়টি সমাধান করতে চান। এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনার জন্য সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, বাহিনীর নীতিনির্ধারণী গ্রুপের (পলিসি গ্রুপ) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রাথমিকভাবে রাজধানীর মডেল থানাসমূহে, এরপর দেশের সব মডেল থানায় পরীক্ষামূলকভাবে অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিসেবে সহকারী পুলিশ সুপারদের (এএসপি) দায়িত্ব দেওয়া হবে। এতে সুফল পাওয়া গেলে সারা দেশে এ, বি ও সি ক্যাটাগরি অনুযায়ী সহকারী পুলিশ সুপাররা ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।

জানা গেছে, ২০১০ সালের ৫ আগস্ট পলিসি গ্রুপের এক বৈঠকে থানায় এএসপি পদমর্যাদার একজন ক্যাডার কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ওই সময় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার ছিলেন বর্তমান আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক। ওই বৈঠকে পরীক্ষামূলকভাবে মডেল থানাগুলোতে এএসপিদের দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ওই সময় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার ছিলেন বর্তমান আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক। ওই বৈঠকে পরীক্ষামূলকভাবে মডেল থানাগুলোতে এএসপিদের দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তবে নন-ক্যাডার পুলিশ সদস্যদের তীব্র আপত্তির মুখে ওই প্রক্রিয়া থমকে যায়। গত বছরের মাঝামাঝি ডিএমপির নতুন অর্গানোগ্রাম অনুমোদন করে সরকার। এতে বলা হয়, পরিদর্শকের পরিবর্তে থানার অফিসার ইনচার্জের (ওসি) দায়িত্ব পালন করবেন সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) বা সহকারী পুলিশ সুপার। পাশাপাশি প্রতিটি থানায় তিনজন করে ইন্সপেক্টর দেওয়ার কথাও বলা হয়। এগুলো হচ্ছে- ইন্সপেক্টর প্রশাসন, ইন্সপেক্টর তদন্ত ও ইন্সপেক্টর অপারেশন। ইতিমধ্যে ডিএমপির প্রতিটি থানায় তিনজন করে ইন্সপেক্টর দায়িত্ব পালন করছেন।

তবে গত অক্টোবরে পরীক্ষামূলকভাবে মতিঝিল, শাহবাগ ও গুলশান থানায় একজন করে সহকারী কমিশনার নিয়োগ  দেওয়া হয়। কিন্তু নন-ক্যাডার কর্মকর্তারা তাদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেননি। পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ওই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। ওই সময় মাঠপর্যায়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের দাবির মুখে সরকার সহকরী পুলিশ সুপারদের থানার ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালনের অর্গানোগ্রামটি স্থগিত করে। তবে পুলিশের শীর্ষ পর্যায়ে বিভিন্ন সময়ে পলিসি গ্রুপের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে জোর আলোচনা চলে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ সহকারী পুলিশ সুপারদের থানার ওসি হিসেবে পদায়নের জন্য অর্গানোগ্রাম পরিবর্তনের প্রস্তাব পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে রয়েছে। পুলিশের শীর্ষ পর্যায় থেকে ওই অর্গানোগ্রাম পরিবর্তনের চেষ্টা চলছে বলে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

তেজগাঁও বিভাগের একটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, এটি একটি হঠকারী সিদ্ধান্ত হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এমন কোনো খারাপ পর্যায়ে যায়নি যে অর্গানোগ্রাম পরিবর্তন করতে হবে। তিনি বলেন, মাঠপর্যায়ে একজন পুলিশ সদস্য অনেক চড়াই-উতরাই পার করে ইন্সপেক্টর হিসেবে পদোন্নতি পান। একজন নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের চাকরি জীবনে সবচেয়ে আশার জায়গা হলো থানার ওসি। মাঠপর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে তারা হাতেকলমে আইন-কানুন শেখে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে অনেক মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা নিহত হন। এক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তার গায়ে আঁচড়ও পড়ে না।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর