সোমবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

নিত্য ভোগান্তিতে কাহিল নারী যাত্রীরা

গণপরিবহন সংকট মহিলা সিটও দখলে

জিন্নাতুন নূর

ফার্মগেট থেকে মিরপুরগামী একটি সরকারি দ্বিতল বাসে সম্প্রতি রাতে বাড়ি ফেরার পথে আরেক যাত্রীর মাধ্যমে যৌন হয়রানির শিকার হন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নীলা। তিনি বলেন, ‘মিরপুর ১২ নম্বর ছিল আমার স্টপেজ। গন্তব্যের কাছাকাছি আসার সময় সব যাত্রী যখন নেমে যান। তখন বাসে চালক ও হেলপার ছাড়া আরও একজন মধ্যবয়সী লোক ঠিক আমার পেছনের সিটে বসে ছিল। আমি একেবারে শুরুর দিকের আসনে জানালার পাশে বসেছিলাম। হঠাৎ দেখি লোকটার হাত আমার বাহু স্পর্শের চেষ্টা করছে। আমি ভয়ে চিৎকার দিয়ে উঠলে হেলপার এগিয়ে আসেন। তখন লোকটিকে জেরা শুরু করলে সে তড়িঘড়ি করে বাস থেকে দৌড়ে পালায়।’

নীলার মতো রাজধানীর আরও অনেক নারীকেই কাজ শেষে বাড়ি ফেরার সময় দৈনিক এমন বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হতে হয়। রাজধানীতে গণপরিবহন স্বল্পতার কারণে পুরুষদের যেমন দুর্ভোগ পোহাতে হয়, নারী যাত্রীদের ক্ষেত্রে কষ্টের তীব্রতা যেন আরও বেশি। নিজস্ব গাড়ি বা সিএনজিতে করে গন্তব্যে যাওয়া অনেক নারীর কাছে বিলাসিতা। আর কর্মক্ষেত্র থেকে খুব কমসংখ্যক কর্মজীবী নারী যানবাহন সুবিধা পান। সন্ধ্যায় ব্যস্ত সময়ে কেউ কেউ ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও শুধু নারী বলে বাসে ওঠার সুযোগ পান না। আর কোনোভাবে পুরুষ যাত্রীদের সঙ্গে যুদ্ধ করে বাসে উঠে পড়লেও নারীরা তাদের জন্য বরাদ্দকৃত আসন পান না। কারণ সরকারি জারি করা প্রজ্ঞাপনকে গুরুত্ব না দিলেও সমঅধিকারে বিশ্বাসী কোনো কোনো পুরুষ সে আসন দিতে চান না নারীদের। আর গণপরিবহনে চলাচলকারী নারীদের অনেকেই যৌন হয়রানির শিকার হন। অ্যাকশন এইডের এক জরিপে জানা যায়, ঢাকার ৪৮ শতাংশ নারীর বাসচালক বা কনডাক্টরের মাধ্যমে অপমানিত হওয়ার অভিজ্ঞতা আছে। আর এ হয়রানি এড়াতে ১৩ শতাংশ নারী গণপরিবহন এড়িয়ে চলেন। এ ছাড়া কর্মজীবী নারীর তুলনায় নগরীতে বাসের সংখ্যাও অপ্রতুল। ফলে নিত্যদিনের এই ভোগান্তিতে পড়ে কাহিল হয়ে পড়েন নারী যাত্রীরা।

নারীদের বিড়ম্বনার কথা ভেবে ১৯৯৮ সালে প্রথমবার বিআরটিসি মহিলাদের জন্য আলাদাভাবে বাস সার্ভিস চালু করে। বিআরটিসি মহিলা যাত্রীদের কথা বিবেচনা করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে, যেখানে বলা হয়, প্রতিটি মিনিবাসে কমপক্ষে ছয়টি এবং বড় বাসে কমপক্ষে নয়টি সংরক্ষিত আসন নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের জন্য রাখতে হবে। কিন্তু পরিবহনগুলোকে এ প্রজ্ঞাপন খুব একটা মানতে দেখা যায় না।  বর্তমানে ঢাকায় নারীদের জন্য চলাচল করছে মাত্র ১৫টি বাস, যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।

সর্বশেষ খবর